ময়মনসিংহের ভালুকায় স্কুলে যাওয়ার পথে নবম শ্রেণির এক ছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক ও সহপাঠীরা। মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলার বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে ভালুকা-বাটাজোর সড়কে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জানা গেছে, উপজেলার বাটাজোর বিএম উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী রাখিয়া সুলতানা রিয়া। সে বাটাজোর গ্রামের আবদুর রশিদের মেয়ে। গত এক বছর আগে টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার মাওশা গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে প্রবাসী রিপন মিয়ার সাথে বিয়ে হয় রিয়ার। বিয়ের পর রিপন সৌদি আরব চলে যান।
এরপর রিয়ার উপর শ্বশুরবাড়ির লোকজন শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ ওঠে। ছয় মাস আগে বাবার বাড়ি ফিরে আসে রিয়া। এক বছর বিরতি দিয়ে আবার পড়ালেখা শুরু করে মেয়েটি। কিছুদিন আগে রিয়ার স্বামী রিপন দেশে আসেন। তবে তিনি দেশে আসার পর রিয়ার পরিবারের সাথে কোন যোগাযোগ করেননি।সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ের সমাপনী প্রস্তুতি পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয় এই শিক্ষার্থী। বাড়ি থেকে আনুমানিক একশো গজ দূরে মুখ মোড়ানো ও মাথায় ক্যাপ পড়া এক ব্যক্তি রিয়াকে পেছন থেকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেয়। তখন তার মাকে ডাক দিয়ে চিৎকার করে দৌড়াতে শুরু করে রিয়া। তখন হামলাকারী পেছন থেকে ঘাড়, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে মেয়েটিকে জখম করে। মেয়ের চিৎকার শুনে মা মাজেদা খাতুন দৌড়ে এসে পাশের ধান ক্ষেত থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় কাদা মাখা শরীরে উদ্ধার করেন। পরে মাজেদা খাতুনের ডাক-চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসেন। কিন্তু হামলাকারীকে ধরতে পারেননি।
পরে তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে ভালুকা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় বিকেলে পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সোমবার রাতে রিয়ার বাবা আব্দুল রশিদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ভালুকা মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রিয়ার মা মাজেদা খাতুন জানান, বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার মেয়ের উপর নির্যাতন শুরু করেন। মানসিক নির্যাতনে শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে আসে তার মেয়ে। কিছুদিন আগে রিয়ার স্বামী রিপন দেশে আসেন। দেশে আসার পর তাদের সাথে সে কোনো যোগাযোগ করেননি। মেয়ে হত্যাকারীর ফাঁসি চান তিনি।
ভালুকা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজল হোসেন জানান, হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিয়ার শ্বশুর মানিক মিয়া ও শাশুড়ি খেন্ত বেগমকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। চলতি মাসের ২ তারিখে রিয়ার স্বামী রিপন দেশে আসেন। ঘটনার পর থেকে রিপন মিয়া পলাতক রয়েছেন। হত্যাকারীকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই