গোরক্ষার নামে ভারত জুড়ে একের পর এক সহিংসতা ও গণপিটুনির ঘটনায় এবার মুখ খুললেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। শনিবার রাতে দিল্লিতে জওহরলাল নেহেরু প্রতিষ্ঠিত ‘ন্যাশনাল হেরাল্ড’ পত্রিকার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা যখন এত বিচারশক্তিহীন, উন্মত্ত এবং নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে, তখন সাধারণ মানুষকেই দেশের মৌলিক বিষয়গুলি রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে’। তাঁর মতে, সতর্কতাই অন্ধকার ও পশ্চাদগামিতাকে ঠেকাতে পারে’।
রাষ্ট্রপতি জানান, ‘আমরা যখন পত্রিকায় পড়ি বা টিভি চ্যানেলে দেখি যে আইনের লঙ্ঘনের কারণে বা অন্য কোন কারণে কাউকে পিটিয়ে খুন করা হচ্ছে, তখন নিঃসন্দেহে সেটা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে, অনুধাবন করতে হবে’।
রাষ্ট্রপতির প্রশ্ন ‘আমাদের ভাবতেই হবে, আমরা কি যথেষ্ট সতর্ক? আমি আইন হাতে তুলে নেওয়ার কথা বলছি না, আমরা জীবনের মৌলিক বিষয়গুলি রক্ষা করার জন্য যথেষ্ট সজাগ কি না সে কথাই বলছি’।
ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং, কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গান্ধীও। অনুষ্ঠান থেকে অসহিষ্ণুতা ইস্যুতে সরব হন সোনিয়া গান্ধীও। সোনিয়ার অভিযোগ, যাদের হাতে আইনরক্ষার ভার তারাই অসহিষ্ণুতাকে মদদ দিচ্ছে। সোনিয়ার মতে, একদল দুষ্টু বাহিনী রয়েছে, তারা ভারতবাসীকে বলে দিচ্ছে তারা কি খাবে, কি পরবে, কাকে ভালবাসবে। এটা তারা কোনমতেই বলতে পারে না। এই ধরনের ঘটনা আমাদের ঐক্যমত্যের ওপর আঘাত হানছে। ক্রমাগত কর্তৃত্ববাদ ও ধর্মান্ধতার হুমকির ফলে ভারত তার রাস্তা অতিক্রম করেছে। আজ আমরা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছি, আগামী দিনে গোটা দেশ সেখানে এসে দাঁড়াবে’।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার ভারতের ঝাড়খন্ডে গো-রক্ষার নামে এক মুসলিম ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে স্থানীয় এক বিজেপি নেতাসহ তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সহিংসতায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগেই আটক করা হয় বিজেপি’র রামগড় ইউনিটের মিডিয়া-ইন-চার্জ নিত্যানন্দ মাহাতোকে (৪৫)।
গত বৃহস্পতিবার গাড়িতে করে গোমাংস বহন করার অভিযোগে রামগড়ের কাছে বাজার তান্ড এলাকায় আলিমুদ্দিন ওরফে আসগর আলি নামে ওই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দেওয়া হয়। অগ্নিসংযোগ ঘটানো হয় তার গাড়িতেও। এরপর পুলিশ এসে আহত আলিমুদ্দিনকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা দেয় চিকিৎকরা।
উল্লেখ্য, দেশের নানা প্রান্তে বিশেষ করে বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে গোরক্ষকদের তাণ্ডব বেড়েই চলেছে। কখনও গরু চোর সন্দেহে, কখনও গোমাংস খাওয়ার গুজবকে হাতিয়ার করে হামলা হচ্ছে নিরীহ মানুষের ওপর। বৃহস্পতিবারই গুজরাটের সবরমতি আশ্রমের একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে গোরক্ষকদের বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গো-রক্ষার নামে কোন ভাবেই মানুষ খুন মেনে নেওয়া হবে না বলে কড়া বার্তা দেন তিনি। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার অধিকার দেশের কোন মানুষের নেই বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু মোদির সেই বার্তার এক ঘণ্টা পরই আলিমুদ্দিনের ওপর হামলা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/০২ জুলাই, ২০১৭/মাহবুব