ঝুঁকির মুখে পড়ছে ইউরোপের অর্থনীতি। মূলত জলবায়ু সংকটের কারণে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এরই মধ্যে জলবায়ু সংকটের প্রভাব এই অঞ্চলে লক্ষ্য করা গেছে। তীব্র উত্তাপ, দাবানল ও বন্যার প্রকোপ চলতি বছরে ব্যাহত করছে অঞ্চলটির প্রবৃদ্ধি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি ও পর্যটন খাত। সম্প্রতি এমনটাই সতর্ক করেছে ইউরোপিয়ান কমিশন।
সর্বশেষ পূর্বাভাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী বিভাগ ২০২৩ ও ২০২৪ সালের জন্য ইউরোপের প্রবৃদ্ধি কমিয়েছে। কমিশন বলছে, জলবায়ু সংকটে ইউরোপকে ভালো মূল্য দিতে হচ্ছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ব্যাহত হচ্ছে পর্যটন খাত।
কমিশনের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপি চলতি বছরে দশমিক ৮ শতাংশ বাড়বে। পূর্ববর্তী পূর্বাভাসে ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হয়েছিল। ২০২৪ সালের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা পূর্ববতী পূর্বাভাসে ছিল ১ দশমিক ৭ শতাংশ। পূর্বাভাস কমিয়ে আনার কারণ হিসেবে অভ্যন্তরীণ চাহিদার দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে কমিশন, যা তীব্র হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদহার বৃদ্ধির কারণে। তবে সর্বশেষ পূর্বাভাস নিয়েও নিশ্চয়তা দেয়নি কমিশন।ইউরোপের কিছু দেশে জিডিপির এক-পঞ্চমাংশ আসে পর্যটন খাত থেকে। কিন্তু সম্প্রতি মানুষ পর্যটনের ব্যাপারে পুনরায় ভাবতে শুরু করেছে। দক্ষিণ ইউরোপে উচ্চতাপমাত্রা পর্যটনের সম্প্রসারণে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
ইউরোপিয়ান ট্রাভেল কমিশন জুলাইয়ে দাবি করেছে, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন ভ্রমণকারীর সংখ্যা গত বছরর একই সময়ের তুলনায় ১০ শতাংশ পতন ঘটেছে। তবে চেক রিপাবলিক, বুলগেরিয়া, আয়ারল্যান্ড ও ডেনমার্কের মতো দেশগুলোয় বেড়েছে জনপ্রিয়তা।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরের দেশগুলো থেকে আসা পর্যটকরা ইতালি ও গ্রিসকে পর্যটন গন্তব্যের তালিকা থেকে বাদ দিচ্ছে। প্রধান কারণ দেশ দুটিতে সৃষ্ট দাবানল। কয়েক বছর ধরেই দাবানল অন্যতম সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে ইউরোপের পর্যটন খাতে। গ্রিস ও ইতালির বদলে উত্তর ইউরোপে বেড়েছে পর্যটকদের আনাগোনা। বৈশ্বিক উষ্ণায়নে পর্যটন খাতের এ পরিবর্তন প্রভাব ফেলেছে পর্যটননির্ভর দেশগুলোর জিডিপিতে।
গত অক্টোবরে ব্যাংক অব ইতালি উচ্চতাপমাত্রার ব্যাপারে সতর্কতা জারি করে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষি ও পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি অলিভ গাছের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বের বৃহত্তম অলিভ অয়েল প্রস্তুতকারক স্পেনের উৎপাদন কমে গেছে। অক্টোবর ও নভেম্বরের আগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা সম্ভব না। কিন্তু ইউরোপীয় অলিভ অয়েল উৎপাদন সাত লাখ টন কমতে পারে, যা গত পাঁচ বছরের গড় উৎপাদন থেকে ৩০ শতাংশ পতন।
নির্মাণ ও শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমও উচ্চতাপমাত্রার কারণে ব্যাহত হচ্ছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সল্টমার্শ ইকোনমিকসের অর্থনীতিবিদ ডেভিড ওয়েন জানিয়েছেন, যদি দক্ষিণ ইউরোপের ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে জীবনযাপন করতে হয়, তাহলে অর্থনীতি আরও তীব্রভাবে প্রভাবিত হবে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের মতোই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বৈশ্বিক জলবায়ুর সংকট থেকে অর্থনীতিতে প্রভাব নিয়ে সতর্ক করেছে। আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা জি২০ সম্মেলনে বলেছেন, “জি২০ সদস্যদের বছরে ১০ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করতে হবে জলবায়ুর ঝুঁকিকে বিবেচনা করে অভ্যন্তরীণ সম্পদকে আরো বাড়াতে হবে।” সূত্র: সিএনএন
বিডি প্রতিদিন/কালাম