ক্রিকেট নিয়ে পুরো দেশ এখন দুশ্চিন্তায় কাঁপছে। মাঠের ব্যর্থতা নয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার অভিভাবক আইসিসি দ্বি-স্তর ক্রিকেটের প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সমর্থনে এ প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে মঙ্গলবার আইসিসিরি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। প্রস্তাব পাস হলে সবচেয়ে বিপদে পড়বে বাংলাদেশ। প্রস্তাব মেনে নিলে টেস্ট খেলুড়ে দেশের মর্যাদা থাকবে ঠিকই কিন্তু আগামী আট বছর টেস্ট খেলতে পারবে না বাংলাদেশ। অনেকে ধারণা করছেন ভোট হলে এ প্রস্তাব বাস্তবায়নের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিষয়টি নিয়ে সাবেক তিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকা ও জিম্বাবুয়ে দারুণ ক্ষুব্ধ। আইসিসির সভা হওয়ার আগে তারা সরকারিভাবে এ কালো প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। অথচ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শঙ্কা থাকার পরও বাংলাদেশ এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য তুলে ধরতে পারিনি। বৃহস্পতিবার এ ব্যাপারে বিসিবিতে সভা অনুষ্ঠিত হলেও প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে যাবে কিনা বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন সুস্পষ্টভাবে কিছুই জানাতে পারেনি। তিনি বলেছেন, আইসিসির সভায় অন্যদেশের ভূমিকা দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন। তার এ মন্তব্য হাস্যকরে পরিণত হয়েছে। কারণ এত বড় ঘটনা যেখানে ঘটতে যাচ্ছে। সেখানে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়া বাংলাদেশ সে সভায় যোগ দেয় কিভাবে? সাবেক বোর্ড সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে বোর্ড সভাপতির উচিত ছিল ক্রিকেটসংশ্লিষ্ট, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বা সরকারের ঊধর্্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা করা। কারোর সঙ্গে আলোচনা না করে বোর্ডের মিটিং ডাকা মেনে নিতে পারছি না। বৃহস্পতিবার পাপন জানালেন, আমরা দেখে শুনে সিদ্ধান্ত নেব। অথচ গতকাল আবার বিসিবির পরিচালক জালাল ইউসুন জানালেন, তারা প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে। কথা হচ্ছে বিসিবি কেন এর ব্যাখ্যা দেবে? অন্যান্য দেশের মতো সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য আসছে না কেন? এ ব্যাপারে গতকাল বিকালে টেলিফোনে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদারের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি হতবাক হয়ে বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি এখানে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের ব্যাখা জানানোর প্রয়োজন ছিল। অথচ এখন পর্যন্ত ক্রিকেট বোর্ড থেকে আমাকে কিছুই জানানো হয়নি । নিজেরা বৈঠক করে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলছেন। বীরেন শিকদার কিছুটা আবেগ আপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ক্রিকেট ১৬ কোটি মানুষের হৃদয়ে ঠাঁই পেয়ে গেছে। আইসিসির প্রস্তাবনা নিয়ে পুরো দেশ যখন শঙ্কিত তখন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী হিসাবে আমাদের অবস্থানের কথা জনগণের সামনে তুলে ধরতে পারছি না। তিনি বলেন, ক্রিকেট বোর্ডের উচিত ছিল অবশ্যই আমাদের সঙ্গে আলাপ করা। সত্যি বলতে কি, আইসিসি সভায় বাংলাদেশ যা বলবে তাতো বিসিবির সিদ্ধান্তে হতে পারে না। ক্রিকেটের সঙ্গে পুরো জাতির আবেগ জড়িয়ে আছে। সুতরাং যে প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা সবাই শঙ্কিত। সেখানে আইসিসিতে আমরা কি বলব তা সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। বীরেন বলেন, পুরো বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো উচিত। দেশের স্বার্থের কথা ভেবে তিনিই এ ব্যাপারে উত্তম সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। অযথা এ নিয়ে অযথা যেন সমালোচনা না হয় সেদিকে বিসিবির নজর রাখতে হবে।