শামিন্দা ইরাঙ্গা দিনের প্রথম বলটি করেন শর্ট অব লেন্থে। ছেড়ে দেন শামসুর রহমান শুভ। কিন্তু দ্বিতীয় বলটি আর না খেলে পারেননি তিনি। বলটি উইকেটের এমন এক জায়গা থেকে লাফিয়ে উঠে যে, ব্যাট সরানোর সুযোগ পাননি শামসুর। ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক দিনেশ চান্ডিমলের গ্লাভসবন্দী হন ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নামা এই ব্যাটসম্যান। বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কার এই বলটিই ছিল দুর্দান্ত। বাকি যে সব ব্যাটসম্যান আউট হয়েছেন, সেগুলোর সবই ছিল শিক্ষানবিসদের মতো খেলার ফল। শুধু দ্বিতীয় ইনিংস নয়, প্রথম ইনিংসের টাইগার ব্যাটসম্যানদের আউটগুলো নিয়েও চলেছে কাটাছেঁড়া। টেস্ট খেলুড়ে একটি দেশের ব্যাটসম্যানদের এমনভাবে আউট হওয়া কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। আলতো শট খেলতে যেয়ে ব্যাটসম্যানরা যেভাবে উইকেট বিলিয়েছেন, তার ফলও পেয়েছে বাংলাদেশ ইনিংস ও ২৪৮ রানে হেরে। যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ লজ্জাজনক হার এবং সব মিলিয়ে চতুর্থ বৃহৎ হার। মুশফিকবাহিনীর সবচেয়ে ড্যাসিং ক্রিকেটার তামিম ইকবাল দুই ইনিংসে যেভাবে আউট হয়েছেন, তাতে ধিক্কার না জানালেও সমালোচনার বানে জর্জরিত হতে হবে কোনো সন্দেহ নেই। প্রথম ইনিংসে পুল খেলতে যেয়ে আউট হয়েছিলেন তামিম। সে ভুল থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে শিক্ষা নেননি দলের সহ অধিনায়ক। বাঁ হাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে এসে গালিতে সহজ ক্যাচ দেন পেরেরাকে। আরেক তরুণ মার্শাল আইয়ুব সকালে দুটি বাউন্ডারি মেরে ইনিংস শুরু করেছিলেন আত্মবিশ্বাসী ঢংয়ে। কিন্তু লাকমলের বাউন্সারে ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগে এমন একটি ক্যাচ দেন, যা দেখে মনে হয়েছে অনুশীলন করাচ্ছেন। তবে দৃষ্টিকটূ ছিল দলের অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান সাকিব ও মুশফিকের আউট। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামা দিলরুয়ান পেরেরার আর্মার বলকে ব্যাকফুটে খেলতে যেয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন সাকিব। প্রথম ইনিংসেও লেগ বিফোর হয়েছিলেন হেরাথের আর্মারে সুইপ খেলতে যেয়ে। বাজে শটস খেলার কথা স্বীকারও করেছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। জানিয়েছিলেন, এই উইকেটে আউট না হলে আউট করা কষ্টকর। ম্যাচ হারের পর একই কথা ধ্বনিত হয়েছে মুশফিকের কণ্ঠে। এমন উইকেটে কোন মেজাজে টেস্ট খেলতে হয়, সেটা দেখিয়েছেন মাহেলা জয়াবর্ধনে (২০৩), ভিথানাগে (১০৩*) ও কৌশল্য সিলভা (১৩৯)। প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা মুশফিক দ্বিতীয় ইনিংসে বোল্ড হয়েছেন পেরেরার টার্ন বুঝতে না পেরে। একজন টেস্ট ব্যাটসম্যানের কাছে এমন শটস খেলা দৃষ্টিকটুই। সত্যি বলতে কি মিরপুরে টেস্ট খেলতে নেমে তামিমরা যেন ওয়ানডেতেই মোকাবিলা করলেন। তা না হলে এমন বিপর্যয় ঘটবে কেন?
২০০০ সালে বাংলাদেশ যেভাবে টেস্ট খেলা শুরু করেছিল অন্ধকারে থেকে। ১৪ বছর পর সেই একই রকম মেজাজ দেখা গেছে ক্রিকেটারদের। অহেতুক শটস খেলা, টেস্ট খেলার মানসিকতা ঠিক রাখতে না পারা, বল সিলেকশন করতে না পারা_ এসব করতে না পারার খেসারত গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশকে হরহামেশা। এবারও গুনলো মিরপুরে। সেজন্যই বাংলাদেশের টেস্ট খেলার বিরোধিতাকারীরা সোচ্চার হয়ে উঠে বারবার। এবারও যেমন 'থ্রি বিগ' ভারত, ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া প্রস্তাব রেখেছিল দ্বি-স্তরবিশিষ্ট ক্রিকেটের। যদিও শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি পাস হয়নি। কিন্তু এমন ধারায় ক্রিকেট খেলতে থাকলে এক সময় আবারও প্রস্তাব উঠবে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার মর্যাদা কেটে নেওয়ার, কোনো সন্দেহ নেই। বিরোধিতাকারীদের হাতে পরিসংখ্যানও যথেষ্ট শক্তিশালী। কেননা ৮২ টেস্টে বাংলাদেশ ইনিংস ব্যবধানেই হেরেছে ৩৬ বার!