শিডিউলে গতকালও খেলা ছিল। কিন্তু সাড়ে তিন সেশন আগে টেস্ট শেষ হয়ে যাওয়ায় একদিন বাড়তি বিশ্রাম পান মুশফিকরা। কিন্তু বিশ্রামে সময় পার করেননি টাইগার অধিনায়ক। অনুশীলন করেছেন। তবে তা ছিল ঐচ্ছিক। চট্টগ্রামে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামার আগে ইনিংস ব্যবধানে হারের ধকল কতটা কাটাতে পারবে টাইগাররা? ধাক্কা সামলানোর ওপরই নির্ভর করছে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ৪-৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় টেস্টের লড়াই। প্রথম টেস্টে হারের পর মানসিকভাবে যতটা বিধ্বস্ত মুশফিক বাহিনীর, জয়ে ঠিক ততটাই আত্দবিশ্বাসী ম্যাথিউস বাহিনী। দ্বিতীয় টেস্টে অংশ নিতে আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম যাবে দুই দল। ইনিংস হারে ব্যথিত টাইগার কোচ শেন জারগেনসন। তবে পরের টেস্টে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন টাইগার কোচ।
চট্টগ্রামের প্রথম ভেন্যু ছিল এম এ আজিজ স্টেডিয়াম। সেখানে ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নিয়মিত হয়েছে টেস্ট ক্রিকেট। বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয়ের স্বাদ পায় এম এ আজিজ স্টেডিয়ামে। অবশ্য সেখানে যে আটটি টেস্ট খেলেছিল, তার একটি ছিল টাইগারদের। বাকি সাত টেস্টের চারটিই ছিল ইনিংস হার। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে কোনো টেস্ট জয় পায়নি টাইগাররা, তবে ড্র তিনবার। যদিও দুটি ছিল বৃষ্টি বদান্যতায়। গত বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেই ড্র করেছিল মুশফিক বাহিনী। সব মিলিয়ে জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে টেস্ট খেলেছে ১১টি। ড্র তিনটি এবং হার ৮টি। ইনিংস হার তিনটি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টাইগাররা এখানে টেস্ট খেলেছে দুবার এবং হেরেছে। ২০০৬ সালে প্রথমবার হেরেছিল ৮ উইকেটে এবং ২০০৯ সালে হেরেছিল ৪৬৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। এবার তৃতীয়বার মুখোমুখি হচ্ছে। মুখোমুখি হচ্ছে সাড়ে তিন দিনে ইনিংস ও ২৪৮ রানে হারের লজ্জা নিয়ে।
প্রথম ইনিংসে ২৩২ রান। জবাবে শ্রীলঙ্কার ইনিংস ৬ উইকেটে ৭৩০। যা বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের পক্ষে সর্বোচ্চ। ৪৯৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ২৫০ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ব্যাটসম্যানরা দুই ইনিংসে যেভাবে ব্যাটিং করেছেন, তাতে কখনই মনে হয়নি একটি টেস্ট খেলুড়ে দেশের ক্রিকেটাররা ব্যাটিং করছেন। আর সেটা দেখে হতাশ কোচ জারগেনসন, 'দলের পারফরম্যান্সে আমি পুরোপুরি হতাশ। আসলে আমরা নিজেদের মান অনুযায়ী খেলতে পারিনি। খেলার পরে আমরা সবাই আলোচনা করেছি। কোথায় কোন ভুলগুলো করেছি। সেই ভুল থেকে দ্রুত বের হয়ে আসতে হবে। আমরা এখন তাকিয়ে আছি পরের টেস্টের দিকে।'
দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে সমানে সমানে লড়াইয়ের জন্য স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক। পেয়েছিলেনও। কিন্তু উইকেটের সঙ্গে ব্যাটিং ও বোলিংয়ে কোনোভাবেই মানিয়ে নিতে পারেনি স্বাগতিক ক্রিকেটাররা। লঙ্কান বোলারদের সাঁড়াশি আক্রমণে প্রথম ইনিংসে গুটিয়ে যায় মাত্র ২৩২ রানে। উল্লেখ করার মতো স্কোর ছিল অধিনায়ক মুশফিকের ৬১ ও সাকিবের ৫৫। জবাবে মাহেলা জয়াবর্ধনের ডাবল সেঞ্চুরি, কৌশল সিলভা ও বিথানাগের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৭৩০ রান করে শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে মোমিনুল হকের হাফ সেঞ্চুরিতে ২৫০ রান করে স্বাগতিকরা। এ ছাড়া ম্যাচে বেশ কয়েকটি ক্যাচও মিস করে টাইগাররা। যার ফল দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হার। সব বিভাগেই ব্যর্থ হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন কোচ, 'মিরপুরে আমরা সব বিভাগেই ব্যর্থ হয়েছি। সত্যি বলতে আমরা গত এক বছর ধরে যে ধারায় ক্রিকেট খেলছিলাম, সেটা খেলতে পারিনি। আমরা লড়াই করতে পারিনি। তারপরও আগামী টেস্টের কথা ভেবে সবাইকে বলেছি ভুলে যেতে। আমরা মাঠে কোনোভাবেই তাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে পারিনি। আসলে এমন ভুলের কোনো ক্ষমা নেই।'
দলের চরম ব্যর্থতার মাঝেও কোচের দৃষ্টিকে সাকিব ও আল আমিনের পারফরম্যান্স নজর কেড়েছে, 'ব্যাটিং ও বোলিংয়ে সাকিব তার সামর্থ্য দেখিয়েছেন। আল আমিন ভালো বোলিং করেছেন। দল হারলেও তিনটি হাফ সেঞ্চুরি হয়েছে। এটা একেবারে খারাপ নয়। আশা করি দ্বিতীয় টেস্টে এই প্রাপ্তিগুলো আরও বড় হবে।' চট্টগ্রামে ঘুরে দাঁড়ানোর আত্দবিশ্বাস পাচ্ছেন কোচ জিম্বাবুয়ে সিরিজের কথা মাথা রেখে, 'জিম্বাবুয়েতে প্রথম টেস্ট হেরেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে জিতেছিলাম। শ্রীলঙ্কা শক্তিশালী দল। তাদের বিপক্ষে লড়াই করাটাই অনেক বড়।'