সময়ের প্রয়োজনে কখন খোলশে পুড়ে নিতে হয় নিজেকে, আবার খোলশ ছেড়ে কখন আক্রমণাত্মক হতে হয়। কুমার সাঙ্গাকারার ৯ ঘণ্টা ১১ মিনিটের ৩১৯ রানের ইনিংসটিই হতে পারে সবচেয়ে বড় উদাহরণ। কাল চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন ব্যক্তিগত স্বার্থে রক্ষণাত্মক মেজাজে ব্যাটিং, দলের প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের উপর চড়াও হওয়া, সবই ছিল সাঙ্গাকারার ইনিংসে। শচীন টেন্ডুলকার, ব্রায়ান লারার মতো প্রতিভাবান নন। কিন্তু কঠোর পরিশ্রমে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন অন্য এক উচ্চতায়। কাল ছিল চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন। শেষ পর্যন্ত এটা হতে পারে সাঙ্গাকারারই ম্যাচ। এমন দিনে ১ উইকেটে ৮৬ রান লেখান বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে। সাদা চোখে খুব খারাপ নয় স্কোর। তবে প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার ৫৮৭ রানের দিকে তাকালেই মনে হবে পাহাড়সম চাপে স্বাগতিকরা। মিরপুরের লজ্জাকে পিছনে ফেলতে টাইগারদের প্রথম ও একমাত্র কাজ ফলোঅন এড়ান। সেটা করতে এখনো দরকার ৩০২ রান। আজ সেটা করার লক্ষ্যেই নামবে ইনজুরি আক্রান্ত টাইগাররা হাতে ৯ উইকেট নিয়ে।
আল-আমিনের বল ধরতে যেয়ে প্রথম দিন আঙুলে ব্যথা পান মুশফিকুর রহিম। সেই ব্যথা নিয়েই উইকেট কিপিং করেন। রাতে ব্যথা বাড়ায় কাল মাঠেই নামেননি টাইগার অধিনায়ক। তার জায়গায় উইকেট কিপিং করেন শামসুর রহমান শুভ। অধিনায়কত্ব করেন 'লোকাল বয়' তামিম ইকবাল। প্রথমবারের মতো অধিনায়কত্ব করতে নেমে খুব বেশি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারেননি। দুই বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান সাঙ্গাকারা ও ভিতানাগে ক্রিজে ছিলেন বলেই লেজে গোবড়ে হয়ে পড়ে তার পরিকল্পনা। দিনের শুরুতে টানা ৯ ওভার বোলিং করান তিন অফ স্পিনার সোহাগ গাজী, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও নাসির হোসেনকে। দশম ওভারে বোলিংয়ে আনেন দলের স্ট্রাইক বোলার সাকিবকে। এসেই আঘাত হানেন এই বাঁ হাতি আন অর্থোডক্স স্পিনার। তার আগে অবশ্য ভিথানাগেকে ঘূর্ণিতে বোকা বানিয়ে সাজঘরে ফেরান নাসির। ৫ রানে দুই উইকেট তুলে চেপে বসতে চেয়েছিল টাইগাররা। কিন্তু সাঙ্গাকারার অদম্য দৃঢ়তার কাছে বারবার হোঁচট খেয়েছেন সাকিব, সোহাগরা। আগেরদিন মাত্র ৪ ওভার বোলিং করেছিলেন আব্দুর রাজ্জাক রাজ। কাল ইনজুরির জন্য মাঠেই নামেননি তিনি। তার অনুপস্থিতির চাপ গেছে সাকিব (৩৪ ওভার), সোহাগ (৪৮ ওভার), মাহমুদুল্লাহ'র (৩৪ ওভার) উপর। এদের মধ্যে সফল ছিলেন সাকিব। ১৪৮ রানে নেন ৫ উইকেট। টেস্ট কারিয়ারে এটা সাকিবের ১১ নম্বর পাঁচ বা ততোধিক উইকেট শিকার।
স্বাগতিকদের ম্যাচে টিকিয়ে রাখার একক চেষ্টা ছিল সাকিবের। কিন্তু তার সব চেষ্টাকে হেলায় উড়িয়ে দেন সাঙ্গাকারা। ১২২ টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তুলে নেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। ৩১৯ রানের ইনিংসটি সাজানো ছিল ৪৮২ বলে ৮ ছক্কা ও ৩২ বাউন্ডারিতে। আট ছক্কার শেষ পাঁচটিই মারেন সাকিবকে আড়াইশ'র পর। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মিড উইকেট দিয়ে সাকিবকে সীমানার বাইরে আছড়ে ফেলে সনত জয়সুরিয়া ও মাহেলা জয়াবর্ধনের পর তৃতীয় লঙ্কান হিসেবে ট্রিপল সেঞ্চুরি করেন সাঙ্গাকারা। ট্রিপল সেঞ্চুরি করার পথে দ্বিতীয় লঙ্কান হিসেবে এগারো হাজার রানের মাইলফলকও গড়েন। তার রান ১১০৪৬ এবং মাহেলার রান ১১৩০৮। প্রথমদিন তিন অংকের ঘরে পৌঁছে পাশে নাম লিখিয়েছিলেন সুনীল গাভাস্কার ও ব্রায়ান লারার পাশে। কাল পিছনে ফেলেছেন লারাকে, দ্রুততম এগারো হাজার রানের মাইল ফলক গড়ে। সাঙ্গাকারা করেছেন ২০৮ ইনিংসে। লারা করেছিলেন ২১৩ ইনিংসে। সাঙ্গাকারার অতি মানবীয় ব্যাটিংয়েই আগের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা কাল যোগ করে ২৭৩ রান। যাতে সাঙ্গাকারার অবদান ১৫৯ রান।
পাহাড়সম চাপের জবাবে খেলতে নেমে প্রথম ওভারে সাজঘরে ফিরেন দলের সহ অধিনায়ক তামিম। ইনিংসের চতুর্থ বলেই লাকমলের সুইং বুঝতে ব্যর্থ হয়ে বোল্ড হন চট্টগ্রামের লোকাল বয়। সিরিজে পুরোপুরিই ব্যর্থ তিনি। শূন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর শামসুর রহমান ও ইমরুল কায়েশ দ্বিতীয় উইকেটে জুটিতে ৮৬ রান যোগ করে পার করেন দিন। শামসুর ব্যাট করছেন ৪৫ ও ইমরুল ৩৬ রানে। অবশ্য দুই ব্যাটসম্যানই একবার করে জীবন পান। শামসুর জীবন পান স্লিপে মাহেলার বদান্যতায় এবং ইমরুল জীবন পান মিড অনে নুয়ান প্রদীপের হাতে।