শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এলটিং বেলটিং

শামিম শিকদার

এলটিং বেলটিং

টিটু ঘুম থেকে উঠেই চেচিয়ে মা....মা....বলে ডাকছে। তার মা’র কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে, এগিয়ে গেল রান্না ঘরের কাছে। সেখানেও তার মা নেই। এবার তার চেঁচামেচির মাত্রা বেড়ে দ্বিগুন হয়ে গেল। অভিমান মিশ্রিত চেঁচামেচির শব্দ শুনেতাড়াহুড়া করে মা চলে আসল।

-কি রে খোকা। এমন চেচাচ্ছিস কেন?

-তুমি জানো না, ঘুম থেকে উঠলে আমার বড্ড ক্ষুদা পায়।

-পাবেই তো। সারাদিন টইটই করে বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ালে ক্ষুদা পাওয়াটাই স্বাভাবিক।

-আমি ঘুরে বেড়াই; কই তোমাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিলাম না।

-তর্ক না করে, চুপচাপ খেতে বস।

টিটু খাচ্ছে আর তার মায়ের সাথে মিষ্টি মিষ্টি ভাষায় তর্ক করছে। সারাদিন তার অবসর সময় নেই। খুব ডানপিঠে স্বভাবের ছেলে বলে এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি, এমন কি পাড়ার হাটেও চলে যায় সময় সুযোগ বুঝে। কোন কথাই শুনতে চায় না। তার মতো সে চলে।

টিটু নগলাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুলের পড়া শিখে নিয়মিত স্কুলে যায়। স্কুলের সময় বাদে সারাক্ষণ নানান ধরনের খেলাম মাঝে জড়িয়ে থাকে। তার বাবার দাবি, ছোট ছেলে-মেয়েদের খেলা-ধূলার মাধ্যমে বুদ্ধির সূচনা হয়। সে সূত্র ধরেই তাকে তেমন কিছু বলা হয় না।

সাইম, আইফ, রাফিদ তার খেলার বন্ধু। নিয়মিত বিকেলে তারা এক সাথে খেলার জন্য জড়ো হয়। তাদের খেলা হচ্ছে এলটিং....বেলটিং.... খেলা।

এ খেলাটি পাড়ার মাঠের অনেকে বুঝলেও কিছু কিছু ছেলে মেয়ে আছে ঠিকঠাক বুঝতে পারে না। বার বার তাদের প্রথম থেকে বুঝিয়ে বলতে হয়। খেলার মাঝখানে আইফ ভুলগুলো বেশি করে। আইফের ভুলকে শুদ্ধ করানোর জন্য টিটু বহু বার তাকে খেলার সঠিক নিয়ম শিখিয়ে দিয়েছে। যখনই তার চোর সাজার পালা হয় তখন সবাই অনেক মজা পায়। কারণ সে সামনে থেকে বলে, এলটিং.....বেলটিং....১ ২ ৩, তখন সবাই যার যার মতো নিজের অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়। কেউ কেউ প্রায় অর্ধেক এগিয়ে যায় সামনের দিকে।

এলটিং বেলটিং খেলাটি হচ্ছে এমন একটি খেলে যেখানে, নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্যদের মাধ্যমে খেলার আয়োজন করা হয়। সদস্যদের মধ্য থেকে এক জন থাকবে চোরের দায়িত্বে। বাকি সদস্যরা দূরে দাঁড়াবে এবং ধীরেধীরে চোরের চোখ ফাঁকি দিয়ে তার কাছে এসে তাকে ছোতে পারলেই গেম হবে। আর যে চোর থাকবে সে তাদের থেকে কিছু সামনে দাঁড়াবে এবং মুখে বলবে এলটিং বেলটিং ১২৩। বলা শেষে পিছনে ঘুরে তাকাতে হবে; তাকানো অবস্থায় চোরের চোখে যাকে স্থিরহীন অবস্থায় ধরা পরবে সে হবে চোর। এবাবে খেলা অবিরত চলতে থাকবে। ধারাবাহিক ভাবে এক জনের পর এক জন চোরের সাজা পাবে। যে সবার আগে চোরকে ছুয়ে কার গন্তব্যে পৌছাতে পারে তার পয়েন্ট বাড়বে। কিন্তু চোরকে ছুয়ে গন্তব্যে পৌছানোর সময় যদি চোর পুনরায় তাকে ছুয়ে ফেলে তাহলেও তাকে চোরের সাজা ভোগ করতে হবে।

টিটু এ খেলা ভাল বুঝে বলে বার বার এটাই খেলতে চায়। সে খুব সহজে চোরের চোখ ফাঁকি দিয়ে মৃদু ভাবে ধীরেধীরে হেটে একদম চোরের কাছে গিয়ে গেম দিতে দ্রুত। যখন চোর পিছনে তাকায় তখন সে স্থির হয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ সময় তাকে দেখে বুঝাই মুসকিল সে মূর্তি না কি ডানপিঠে প্রকৃতির টিটু। পড়া-লেখার মতো খেলায়ও তার বেশ মনযোগ।

 মন্ত্র বলতে এ খেলার ‘এলটিং বেলটিং ১২৩ মন্ত্রটি। যখন সে সামনের দিকে তাকিয়ে মন্ত্র পাঠ করে তখন পিছন থেকে কেউ তার দিকে চুপি চুপি এগিয়ে যাবে তার কোন উপায় সে রাখে না। তার মন্ত্র পাঠ দেখলে মনে হয় রাত দিন মন্ত্রটি পড়ে সে মন্ত্র এমন ভাবে মুখস্ত করেছে; যা না বললেও ঠোটের মধ্যে চলে আসে। রাফিদ যখন চোরের সাজায় থাকে তখন সবাই খুব সতর্ক সহকারে সামনে এগুতে থাকে।

প্রতিদিন খেলা জমলেও শুক্রবার কোন ভাবে তাদের খেলা জমে না। কারণ শুক্রবার টিটুর দাদুর স্কুল বন্ধ মানেই সারা দিনের জন্য দাদুর মুখে গল্প শোনা। সাইম, আইফ, রাফিদ ও টিটুর মতো পাড়ার সকল ছোট-ছোট ছেলে মেয়েরা দাদুর ঘরে ভিড় জমায়। দাদুও তাদের দেখে খুব খুশি হয়। সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে হেলে অন্ধকার নামিয়ে আনে তখন দাদুর গল্পের আসর শুরু হলেও সকাল থেকে ছোট ফুলকুঁড়িরা দাদুর পিছু পিছু ঘুরঘুর করতে থাকে।

দাদু বেশি বলে রূপকথার গল্প। আর যখন গল্প বলে তখন সবাই খুব গভীর মনযোগ সহকারে এক মনে তা শুনে।

- শুনো দাদু ভাইয়েরা, এক বিশাল অরন্যে ছিল বিশাল বড় একটি পাহাড়। সেখানে ডাকাত দলেরা বাস করতো। তাদের পহারের দরজা খোলার জন্য একটি মন্ত্র ব্যবহার করতে হতো।

- সবাই একসাথে, কি দাদু? মন্ত্রটি কি?

- মন্ত্রটি হচ্ছে এলটিং বেলটিং।

- সাবাই সবার দিকে কৌতুহল বসত একবার তাকিয়ে আবার মনযোগ সহকারে দাদুর গল্প শুনছে।

- টিটু বলেই ফেলল। দাদু, আমাদের একটি খেলার নামও তো এলটিং বেলটিং!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর