মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় মৃত্যু এমপি ইসরাফিল আলমের

নিজস্ব প্রতিবেদক ও নওগাঁ প্রতিনিধি

করোনায় মৃত্যু এমপি ইসরাফিল আলমের

করোনাভাইরাস থেকে সেরে ওঠার পর হৃদরোগ, ফুসফুসের জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় না ফেরার দেশে চলে গেলেন নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রানীনগর) আসনে আওয়ামী লীগের এমপি ও বিশিষ্ট শ্রমিক নেতা মো. ইসরাফিল আলম। গতকাল তিনি ভোর ৬টা ২০ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ইসরাফিল আলম স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েসহ অসংখ্য আত্মীয় স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাদ আসর দুই দফা নামাজে জানাজা শেষে ৫৪ বছর বয়সী তিনবারের এমপি ইসরাফিল আলমকে নিজ জন্মভূমি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ঝিনা গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। ইসরাফিল আলম নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ মন্ত্রিসভার সদস্যগণ, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

গতকাল বিকালে একটি হেলিকপ্টারে করে তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়িতে। মরদেহের সঙ্গে এমপির সহধর্মিণী সুলতানা পারভীন এবং ছেলে ইসতিয়াক আলম ছিলেন। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী নামাজে জানাজায় স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হলেও প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো এক নজর দেখার জন্য মানুষের ঢল নামে। জানাজায় উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ইসরাফিল আলমের সহধর্মিণী সুলতানা পারভীন বিউটি জানান, বেশকিছু দিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থতা বোধ করছিলেন তিনি। এর মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। পরে করোনার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। তবে শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় গত ৬ জুলাই চিকিৎসার জন্য তাকে স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হলে ১৪ জুলাই তাকে বাসায় নিয়ে আসা হয়। এরপর ১৭ জুলাই তার কাশির সঙ্গে রক্ত আসে। ওইদিন তাকে আবার স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২৪ জুলাই রাতে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই রাতেই তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তিন দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গতকাল সকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ইসরাফিল আলম তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে মিটার রিডার হিসেবে চাকরি করেন দীর্ঘদিন। সেখানেই তিতাস কর্মচারী ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের মাধ্যমে তার রাজনীতির শুরু। পরে তিনি তিতাস গ্যাস শ্রমিক-কর্মচারী লীগের উপদেষ্টা এবং জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগের উপদেষ্টার দায়িত্বও পালন করেন। ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে ইসরাফিল আলম ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরও দুবারসহ মোট তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমান সংসদে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্ব ছাড়াও তিনি অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান এবং ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ছিলেন।

রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শোকবার্তায় বলেন, তিনি সংসদে সবসময় খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কথা তুলে ধরতেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন প্রতিশ্রুতিশীল ও নিবেদিত প্রাণ রাজনৈতিক নেতাকে হারাল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার শোকবার্তায় বলেছেন, ইসরাফিল আলম আজীবন দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করে গেছেন।

ইসরাফিল আলমের মৃত্যুতে আরও শোক জানিয়েছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ও সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের, মুক্তিযোদ্ধামন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম প্রমুখ।

এ ছাড়াও শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ। শোক জানিয়েছেন জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, বাংলাদেশের জাসদ সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু, রেলওয়ে শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান আকন্দ, গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য শহীদুল্লাহ সিকদার, নুরুর রহমান সেলিম, ন্যাপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, কৃষক লীগের সভাপতি সমীর চন্দ, সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতি, যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আকতার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর