পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের পাঁচটি রাজ্যে বিধানসভার নির্বাচণের দিনক্ষণ ষোষণা দিল দেশটির নির্বাচন কমিশন। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি ভোট হবে আসাম, কেরালা তামিলনাড়ু ও একটি মাত্র কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য পডুচেরিতে। আগামী মার্চ-এপ্রিল মাস জুড়ে চলবে এই নির্বাচন। ভোট শুরু হচ্ছে ২৭ মার্চ, চলবে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। গণনা আগামী ২ মে।
শুক্রবার বিকালে দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুনীল অরোরা।
পশ্চিমবঙ্গে ২৯৪ টি বিধানসভার আসনের জন্য মোট আট দফায় ভোট নেওয়া হবে। প্রথম দফার ভোট হবে ২৭ মার্চ (৩০ আসন), দ্বিতীয় দফা ১ এপ্রিল (৩০ আসন), তৃতীয় দফায় ৬ এপ্রিল (৩১ আসন), চতুর্থ দফায় ১০ এপ্রিল (৪৪ আসন), পঞ্চম দফায় ১৭ এপ্রিল (৪৫ আসন), ষষ্ট দফায় ২১ এপ্রিল (৪৩ আসন), সপ্তম দফায় ২৬ এপ্রিল (৩৬ আসন), অষ্টম দফায় ২৯ এপ্রিল (৩৫ আসন) এ ভোট নেওয়া হবে।
আসামে ১২৬ বিধানসভার আসনের জন্য ভোট নেওয়া হবে তিন দফায়। প্রথম দফার ভোট ২৭ মার্চ, দ্বিতীয় দফা ১ এপ্রিল, তৃতীয় দফা ৬ এপ্রিল।
তামিলনাড়ু (২৩৪), কেরালা (১৪০) ও কেন্দ্রীয় শাসিত রাজ্য পডুচেরিতে (৩০) একটি মাত্র দফায় আগামী ৬ এপ্রিল ভোট নেওয়া হবে।
নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার সাথে সাথেই রাজ্যে নির্বাচনী আচরণ বিধি চালু হয়ে গেল।
দেশজুড়ে কোভিড-১৯ অতিমারির মধ্যেই সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনেই গত অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বিহারেও বিধানসভার নির্বাচন হয়েছিল। ঠিক একইরকম স্বাস্থ্য বিধি অবলম্বন করা হবে দেশটির পাঁচটি রাজ্যের আসন্ন বিধানসভার নির্বাচনেও।
নির্বাচন কমিশনার জানান ‘করোনাকালে ভোট, তাই কমিশন সদা সতর্ক আছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় জোর দেওয়া হবে।’ বিহারের মতোই পশ্চিমবঙ্গসহ অন্য রাজ্যগুলিতে ভোটগ্রহণের সময়সীমা এক ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নির্বাচনী প্রার্থীসহ সর্বোচ্চ পাঁচ জন ব্যক্তি প্রচারণা করতে পারবেন। এবার অনলাইনের মাধ্যমেও প্রার্থীরা তাদের মনোনয়ন পত্র জমা দিতে পারবেন।
তবে এবারের নির্বাচনে গোটা দেশের নজর থাকবে বাংলার দিকে। দুই বারের মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জিকে এবার প্রধান প্রতিপক্ষ বিজেপির বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করতে হবে। সেই সাথে সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া নেতারা বা দলের একাংশের বিরুদ্ধে যেভাবে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে- মমতা একা তা কিভাবে সামাল দেয় সেটাও দেখার। সেই সাথে রয়েছে বাম-কংগ্রেস জোট।
গত ২০১৯ সালের লোকসভার নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ টি আসনের মধ্যে ১৮ টি আসনে জয় পায় গেরুয়া শিবির। এপর দিন যত এগিয়েছে এরাজ্যে বিজেপির শক্তি ততই বেড়েছে। রাজ্যে ২০০ টির বেশি আসন পেয়ে বিজেপি সরকার গড়বে বলেও বিভিন্ন সভা-মিছিল থেকে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ থেকে শুরু করে বিজেপির শীর্ষ স্তরের নেতৃত্ব। আর সেলক্ষ্যে বাংলা জয়ের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে দলের নেতা-কর্মীদের।
পাশাপাশি সহিংসতা এড়িয়ে বাংলায় শান্তিপূর্ণ ও অবাধ নির্বাচন করাটাও রীতিমতো চ্যালেঞ্জ কমিশনের কাছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যে চলে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। ভোটারদের মধ্যে থেকে ভয়ের পরিবেশ দূর করতে একাধিক জায়গায় রুট মার্চ করেছে তারা।
তামিলনাড়ুতে লড়াই হবে মূলত ক্ষমতাসীন দল এআইএডিএমকে ও বিরোধী দল ডিএমকে’এর মধ্যে। পাশাপাশি প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার বন্ধু শশীকলা ও অভিনেতা কমল হাসানও এক্স-ফ্যাক্টর হতে পারে এই নির্বাচনে।
অন্যদিকে আসামে দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া বিজেপি। যদিও জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), সংশোধিত নাগরিকত্ব (সিএএ) ইস্যুতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ক্ষমতাসীন দল।
একমাত্র পডুচেরিতে কংগ্রেসের সরকার ক্ষমতায় থাকলেও চলতি সপ্তাহেই দলের একাধিক বিধায়ক ইস্তফা দেওয়ায় সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে। এমন অবস্থায় আস্থা ভোট প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কিন্তু আস্থা ভোটের আগেই ইস্তফা দেয় ভি. নারায়ণস্বামীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার। বর্তমানে পডুচেরিতে রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে।
অন্যদিকে কেরালায় প্রতিটি নির্বাচনেই লড়াই মূলত সীমাবদ্ধ থাকে বাম নেতৃত্বাধীন জোট (এলডিএফ) ও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট (ইউডিএফ)-এর মধ্যে। এবং রাজ্যের ভোটাররা প্রতি পাঁচ বছর অন্তর সেখানে সরকার বদল ঘটিয়ে আসছেন।
আগামী ৪ মে থেকে শুরু হতে চলেছে দেশজুড়ে সিবিএসই বোর্ডের পরীক্ষা। তাই মে মাসের আগেই ভোট পর্ব মিটিয়ে নিতে চায় নির্বাচন কমিশন। এবং সেক্ষেত্রে ১ মে’এর আগেই প্রতিটি রাজ্যে বিধানসভা গঠন হয়ে যাক-সেটাও চায় কমিশন।
এদিকে নির্বাচনের দিন ঘোষণার ঠিক আগেই শুক্রবার দুপুরে কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ভগবান জগন্নাথ দেবের পূজা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। পুরীর জগন্নাথ দেবের মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জগন্নাথ দ্বৈতপতি। পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পূজার ভিডিও পোস্ট করেন মমতা।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল