মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, ১৯৭১ ও তার পূর্ববর্তী সময়ে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়ানো প্রেতাত্মাদের বাংলাদেশে কোনভাবেই মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দেয়া হবে না। ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে পিরোজপুর জেলা প্রশাসন আয়োজিত আলোচনা সভায় আজ দুপুরে রাজধানীর বেইলি রোডের সরকারি বাসভবন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই একটা চমৎকার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মধ্যে আছে। এর মধ্যেও সুনামগঞ্জের শাল্লায় হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় আক্রমণ হয়েছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি এবং এদের পৃষ্ঠপোষক রাজনৈতিক দল ও জোট এর পেছনে জড়িত থাকতে পারে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। কোনভাবেই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে, রাম-রহিমের বাংলাদেশে, ত্রিশ লাখ শহীদের বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেয়া হবে না। যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার, সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হবে। কঠোরভাবে তাদের দমন করা হবে।
শ ম রেজাউল করিম আরো বলেন, ২৫ মার্চ নতুন নয়। অথচ ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে ২০১৭ সালে। ২০১৭ সালের ১১ মার্চ শেখ হাসিনা সরকার আমলে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অতীতে কেউ এটি করেনি। কারণ ২৫ মার্চের গণহত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের উত্তরসূরীরা বাংলাদেশের প্রশাসনে, রাষ্ট্র ক্ষমতায়, রাজনীতিতে রয়ে গেছে। এজন্য ২৫ মার্চকে আনুষ্ঠানিকভাবে অতীতের সরকারগুলো পালন করেনি। কিন্তু দৃঢ়চেতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ আসলেই মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধু অবিচ্ছেদ্য। কারণ বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানের একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ যেখানে প্রত্যেকের অধিকার থাকবে সমপর্যায়ে, ধর্মের ভিত্তিতে কাউকে ছোট করে দেখা হবে না। কেউ বঞ্চনার শিকার হবেন না। এরকম বাংলাদেশ যারা চায়নি তারা বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, এ মুহূর্তেও দেশে ষড়যন্ত্র চলছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আগমন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বিষোদগার করা হচ্ছে। আবার এক শ্রেণির মৌলবাদীরা ভারতের প্রধানমন্ত্রী না আসার জন্য বিক্ষোভ করার ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে। বাংলাদেশের সুবর্ণজয়ন্তীতে বিদেশি অতিথিরা এসে বাংলাদেশকে সম্মানিত করবেন, সে ক্ষেত্রেও বিএনপি বাধা দিচ্ছে। ভারতবিরোধী রাজনীতির একটা ট্রাম্পকার্ড ছুঁড়ে দেয়ার জন্য অনেকেই চেষ্টা করছেন। তারা ভুলে গেছেন বাংলাদেশে এ রাজনীতির ট্রাম্পকার্ড এখন চলে না। এ জাতীয় রাজনীতির ভন্ডামিতে মানুষ এখন বিভ্রান্ত হয় না। ঐক্যবদ্ধভাবে দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে দেশকে সুন্দরভাবে আমাদের বিনির্মাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সকলের প্রচেষ্টা আবশ্যক। কারণ বাংলাদেশ অস্থিতিশীল থাকলে আমরা কেউ ভালো থাকবো না। এজন্য স্বাধীনতাবিরোধী ও এদের পৃষ্ঠপোষকদের বিপক্ষে অবস্থান নিতে হবে।
পিরোজপুরের জেলা প্রশাসক আবু আলী মো. সাজ্জাদ হোসেনের সভাপতিত্বে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম, সিভিল সার্জন হাসনাত ইউসুফ জাকি, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল আহসান গাজী, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার গৌতম নারায়ণ রায় চৌধুরী, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোপাল বসু, জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ খান টিটু প্রমুখ সভায় উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত