১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০৯:৫৭

কমতে শুরু করেছে পিয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমতে শুরু করেছে পিয়াজের দাম

বাজারে দেশি পিয়াজের দেখা মেলায় সংকট কেটে যাচ্ছে। গত দুই দিনে পণ্যটির দাম কয়েক দফা কমেছে। কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা কমে বিভিন্ন জেলায় এখন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে মসলাজাতীয় এ পণ্যটি। 

এদিকে মিসর থেকে পিয়াজ বহনকারী বিমানটি আজ (মঙ্গলবার) ঢাকায় পৌঁছানোর কথা। বিমানে আমদানিকৃত পিয়াজের সব ধরনের ফি ও চার্জ মওকুফ চেয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

গতকাল এ চিঠি পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে পিয়াজের বাজার দর অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারের সংকট মোকাবিলায় কার্গো বিমান ও বিমানের অন্যান্য স্পেস ব্যবহার করে জরুরি ভিত্তিতে টিসিবি ও অন্যান্য বেসরকারি আমদানিকারকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্যটি আমদানির সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে মতবিনিময় সভায় জানা যায়, আমদানিকৃত পিয়াজের হ্যান্ডেলিং চার্জ, ফ্রেইট ফি, লিফট ও ল্যান্ডিং চার্জসহ অন্যান্য চার্জ পরিশোধ করার নিয়ম রয়েছে। এসব ফি ও চার্জ পরিশোধ করতে হলে পণ্যটির সার্বিক মূল্য অত্যধিক হারে বেড়ে যাবে। এর আগে ১৭ নভেম্বর বিমানে আনা পিয়াজ দ্রুত ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নামাতে সিভিল এভিয়েশন, কাস্টমস, ফ্রেইট ফরোয়ার্ডসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্য সচিব। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মিসর থেকে পিয়াজ বহনকারী বিমানটি আজ (মঙ্গলবার) শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করার কথা। বিমান নামার সঙ্গে সঙ্গে যাতে পিয়াজ খালাসের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া পণ্যটি বিভিন্ন ধরনের চার্জ ও ফি মওকুফ করে দ্রুত ছাড়করণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় পিয়াজের দাম স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন কার্গো ও যাত্রীবাহী বিমানে আমদানিকৃত পিয়াজ আসতেই থাকবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব। তিনি বলেন, সরকারি ও বেসরকারিভাবে আনা এসব পিয়াজ টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হবে।

২৫০০ অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা: পিয়াজের সংকটকে পুঁজি করে অস্বাভাবিকভাবে দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় সারা দেশে প্রায় ২ হাজার ৫০০ অসাধু ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন এ তথ্য দেন। সচিব বলেন, ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই পণ্যটির দাম বাড়ছিল। তবে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় এর দাম। সচিব জানান, বর্তমানে মিয়ানমার পিয়াজের রপ্তানিমূল্য চার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এ অবস্থায় মিসর, তুরস্ক, চীন ছাড়াও মধ্যপ্রাচ্য এবং ইউরোপের ইউক্রেনসহ কয়েকটি দেশ থেকে পিয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাজারে নতুন দেশি পিয়াজও উঠে গেছে। খুব দ্রুত পণ্যটির দাম কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পিয়াজের বাজার পরিস্থিতি: চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়ায় পিয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। রাজধানীর শ্যামবাজার ও চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পিয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় যে সংকট সৃষ্টি হয়েছিল তা কেটে যাচ্ছে। দাম বাড়ায় পিয়াজের ব্যবহার কমে গেছে। এতে বাজারগুলোয় ক্রেতার সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়া বিমানে ও জাহাজে আমদানিকৃত পিয়াজ আসার খবরে এবং বিভিন্ন বাজারে ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযানের কারণেও পণ্যটির দাম কমেছে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা জানান, গতকাল খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে ৩৫০ টন আমদানিকৃত পিয়াজ এসেছে। চীন, মিসর, তুরস্ক ও মিয়ানমার থেকে এসব পিয়াজ আনা হয়। এ ছাড়া আরও ৮০০ টন পিয়াজ টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে। সরবরাহ বাড়ায় পণ্যটির দাম কমেছে। খাতুনগঞ্জে গতকাল চীনের পিয়াজ পাইকারি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১১০ টাকায়, মিসর ও তুরস্কের পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ১১০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে। রাজধানী ঢাকায় আমদানিকৃত পিয়াজ এখনো ২০০ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হলেও জেলা শহরগুলোয় ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ প্রতিদিনের দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, গতকাল জেলার বোচাগঞ্জ উপজেলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অভিযান চলাকালে পণ্যটির দাম ১৮০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে নেমে আসে। মাদারীপুর জেলা প্রতিনিধি জানান, রাজৈরে অতিরিক্ত দামে পিয়াজ বিক্রি করায় পাঁচ ব্যবসায়ীকে ২১ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর