ইতালি প্রবাসী বাংলাদেশি এক যুবক মিলান কনস্যুলেট অফিসে পাসপোর্টের সংশোধন আবেদনের তথ্য জানতে গিয়ে অফিসের সিন্ডিকেট কর্মচারী হাবিব-জাকিরের হাতে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। পরে কান্না জড়িত কণ্ঠে জাহাঙ্গীর ইসলাম নামের ওই যুবক প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে হাত জোড় করে বলেন, আমার পাসপোর্টটা দেন। আমি আমার মায়ের কবরস্থান দেখতে চাই।
গত বুধবার মিলান কনস্যুলেট অফিসে পাসপোর্টের কাজে গিয়ে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বাংলাদেশি নাগরিক জাহাঙ্গীর ইসলাম। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১২ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশের বাইরে। ২০১৭ সালে তিনি ইতালি রেসিডেন্টশীপ পান। এরপর থেকে পাসপোর্টের বয়স সংশোধনীর জন্য মিলান কনস্যুলেট অফিস বরাবর আবেদন করেন। তারপর থেকে গত ৫ বছর ধরেই তিনি ঘুরপাক খাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, পাসপোর্ট জটিলতার জন্য ৫ বছর আগেই ইতালিতে কাগজ পাওয়া জাহাঙ্গীর অসুস্থ মাকে দেখতে পারেননি। এখন মায়ের কবরস্থান দেখতে পর্যন্ত যেতে পারছেন না বাংলাদেশে। ঢাকা পাসপোর্ট অফিসে থেকে একটা ই-মেইল বার্তা মিলান অফিসের ই-মেইলে পাঠানো হয়েছে। সেই ই-মেইলের খোঁজ নিতেই সেদিন মিলান কনস্যুলেট অফিসে যান তিনি।
তবে কনসাল শামসুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাহাঙ্গীরের পাসপোর্টে বয়স পরিবর্তন করতে হবে। এই সমস্যার সমাধান করা বর্তমান পাসপোর্টের নিয়ম-কানুনে সম্ভব না।
জাহাঙ্গীর জানান, কোনো উপায় না পেয়ে কনস্যুলেট অফিসের সিন্ডিকেট হোতা পরিচ্ছন্নকর্মী জাকিরের কাছে অনুরোধ করেন। তারপর জাকির তাকে পাঠান নিরাপত্তাকর্মী হাবিবের কাছে। এসময় তার কাছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে হাবিব ও জাকির! জাহাঙ্গীর এত টাকা দিতে পারবে না বলার পরই শুরু হয় নোংরা ভাষায় গালাগালি ও পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কনসাল শামসুল আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি ছেলেটিকে বুঝিয়ে বলে আমার অফিস থেকে যেতে বলি। পরে আমাদের একজন কর্মী তাকে মারধর করেছেন-এমন অভিযোগ শুনে আমি সাথে সাথেই সেই কর্মীকে ডেকে শাসন করেছি। এরপর জাহাঙ্গীরকে পাসপোর্টের বিষয়টি বুঝিয়ে বলেছি।
জাহাঙ্গীর কাঁদতে কাঁদতে এই প্রতিবেদকের কাছে বলেন, প্রধানমন্ত্রী-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আমার অনুরোধ, আমাকে মারধর করছে আমার আফসোস নাই, বিচার চাই না। আমি আমার মায়ের গোরস্থানটা দেখতে চাই।
তিনি বলেন, পরিছন্নতাকর্মী জাকির তার পাসপোর্ট সমস্যার সমাধানের জন্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। দূতাবাস কেন্দ্রীক মূল সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালান জাকির ও হাবিব। তারা কনসাল জেনারেলের অনুমতিক্রমে দূতাবাসের কাউন্টারে বসে দাপ্তরিক কাজও করেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথে দুর্ব্যবহারও করেন, পাসপোর্টসহ নানা ধরনের সমস্যার জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন তারা। কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদের বাণিজ্য চলে। ইকবাল আহমেদের ছত্রছায়ায় পরিছন্নতাকর্মী জাকির কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে ইতালি প্রবাসীদের মধ্যে কানাঘুষা রয়েছে।
এদিকে, ইতালির মিলানের বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের বিতর্কিত কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদের সমালোচনা করলে ছাত্রলীগ করা ছেলেদের তিনি সরকারবিরোধী বলে আখ্যা দেন। কিন্তু ইতালিতে নারী নির্যাতন মামলায় সাড়ে ৩ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি যুবদল ভেনিস শাখার সভাপতি প্রার্থী শরীফ মৃধার সাথে বেশ সখ্যতা তার!
শনিবার ও রবিবার ভেনিসের পার্শ্ববর্তী শহর প্রাদোভাতে কনস্যুলার ক্যাম্পের আয়োজনে গেলে কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান ইতালিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি শরীফ মৃধার নেতৃত্বে স্থানীয় কমিউনিটির ব্যবসায়ীসহ কয়েকজন।
এর আগে, ২৫ জুন বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয়েছে কিভাবে ইতালি প্রবাসী সাংবাদিক, ছাত্রলীগের কুমিল্লা উত্তরের সাবেক সহ-সভাপতি সোহেল মজুমদার শিপন কনসাল জেনারেল ইকবাল আহমেদের দুর্নীতি আর মিলান অফিসের অব্যবস্থাপনা নিয়ে সংবাদ করার জেরে তার নিজেরসহ শিশুপুত্র ও কন্যার পাসপোর্ট ১১ মাস ধরে দেওয়া হচ্ছে না।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি ইকবাল আহমেদকে আমেরিকার ফ্লোরিডা কনস্যুলেট অফিসে কনসাল জেনারেল হিসেবে বদলি করা হলেও তিনি যাচ্ছেন না। বরং গর্ব করে বলেন, যত অভিযোগ থাক না কেনো আমার বিরুদ্ধে, কোনো লাভ নাই। আমাকে প্রমোশন দিয়েই আরো উন্নত দেশে পাঠানো হচ্ছে! এ বিষয়ে কথা বলতে মিলান কনস্যুলেট অফিসে ফোন দিলে কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
বিডি প্রতিদিন/এমআই