১ অক্টোবর, ২০২২ ০৯:৫১

টাইমস স্কয়ারে র‌্যালি থেকে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

টাইমস স্কয়ারে র‌্যালি থেকে একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি

১৯৭১ সালে পাক বাহিনীরা নির্বিচারে ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যা, চার লাখের অধিক নারীর সম্ভ্রমহানী ঘটিয়েছেন। ওরা কোটি বাঙালির বাড়ি-ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে। পুড়িয়ে হত্যা করেছে অসংখ্য শিশু-নারী এবং প্রবীণ বাঙালিকে। পাকিস্তানী হায়েনার দল সাড়ে ৭ কোটি মানুষের একটি জাতি-গোষ্ঠিকে নিশ্চিহ্ন করার মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল। ওরা বাঙালির মায়ের ভাষা মুছে ফেলতে চেয়েছিল। বাঙালি সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার নির্লজ্জ প্রয়াসন চালিয়েছে। 

এসব কী ‘গণহত্যা’ নয়। তাহলে গত ৫১ বছরেও কেন এই গণহত্যার স্বীকৃতি দেয়নি জাতিসংঘ। এই দাবি আদায়ের জন্যে আর কতকাল অপেক্ষা করতে হবে? এমন ক্ষুব্ধ-প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ১২ বছর বয়েসী ডেনিস জুলিয়াস ঐশো বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক সিটির টাইমস স্কয়ারের র‌্যালিতে। প্রায় অভিন্ন আকুতি ব্যক্ত হয় ছোট্টমনি আব্রাহাম আরজু, জুবাইদা বাতেন এবং সারাহ’র কণ্ঠেও। একইস্থানে খ্যাতনামা আর্টিস্ট এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইমাম আঁকছিলেন একাত্তরের গণহত্যার  প্রতিকী চিত্র।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাজুল বলেন, আমি গণহত্যার জন্যে যে ফায়ারিং স্কোয়াড ছিল, সেই দেয়ালের ছবি আঁকছি। পেছনে ধ্বংসযজ্ঞ-বাড়ি ঘরে আগুন লাগানোর দৃশ্য, সামনে লাশ পড়ে আছে। সেটাই হচ্ছে এই ছবির থিম অর্থাৎ জেনোসাইডের ব্যাপারে বিশ্বসম্প্রদায়ের সামনে অবিকল একটি চিত্র উপস্থাপনের প্রয়াস এটি। এরকম আরো ৫টি ক্যানভাসে ছবি আঁকেন শিল্পী মাহমুদুল হাসান রোকন, কাইসার কামাল, জেবুন্নেসা কামাল, আলমা লিয়া এবং মিথুন আহমেদ। 

আর এভাবেই জাতিসংঘের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন প্রবাসী বাঙালিরা ৩০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার অপরাহ্নে জয় বাংলা স্লোগানে। ‘হাই টাইম টু রিকগনাইজ জেনোসাইড ইন বাংলাদেশ ১৯৭১-এ্যানিহিলেশন অব ৩ মিলিয়ন ইন অনলি ৯ মান্থ’ লেখা ব্যানারের পেছনে একাত্তরের চেতনায় উজ্জীবিত প্রবাসীদের এ র‌্যালি চলে ঘণ্টা দুয়েকের মত। সকলের কণ্ঠে ছিল ‘জাতিসংঘ-৩০ লাখ মানুষ নিধনের বাংলাদেশ, জেনোসাইড ১৯৭১ কে স্বীকৃতি দিতে হবে।’
 
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের চিহ্নিত এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায় এর স্বীকৃতির প্রশ্নে প্রবাসী বাঙালিরা আগে থেকেই সোচ্চার থাকলেও তা এখন প্রবল হয়ে উঠেছে তা জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এজেন্ডায় পরিণত হওয়ায়। ৩ অক্টোর এই পরিষদের ৫১তম অধিবেশনে ৩ নম্বর এজেন্ডায় রয়েছে বাংলাদেশের জেনোসাইড। পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিরুদ্ধে এটি এক মাইলফলক পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে। 

এই সমাবেশের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব জামান। চিত্রাংকন পর্বের উদ্বোধন করেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের মিথুন আহমেদ।
ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আশরাফুল হাসান বুলবুল, লুৎফুন্নাহার লতা, সুব্রত বিশ্বাস, মুজাহিদ আনসারী, মিনজাহ আহমেদ সাম্মু, সেমন্তি ওয়াহেদ প্রমূখ। 

টাইমস স্কয়ারের এই কর্মসূচির সমন্বয় করে আর্টস ফোরাম, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, প্রগ্রেসিভ ফোরাম, গণজাগরণ মঞ্চ, একুশের চেতনা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, জেনোসাইড একাত্তর, প্রজন্ম একাত্তর, মানবী, আমরা একাত্তর। এসব সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, বীর মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসার, বীর মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল হক, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইমদাদুল হক নাসিমুন্নাহার নিনি, ওবায়দুল্লাহ মামুন, আল আমিন বাবু, ফাহিম রেজা নূর, লুৎফুন্নাহার লতা, রোকেয়া রফিক বেবী, জাকির হোসেন বাচ্চু, সঞ্জিবন সরকার, জাকির আহমেদ রনি, মাহফুজা হাসান, সাগর লোহানি, ক্লারা রোজারিয়ো, শরাফ সরকার, কানু দত্ত, শাহ ফারুক, মাসুদ মোল্লাহ, এম এ বাতিন, সুলেখা পাল, হিরো চৌধুর, আলীমউদ্দিন প্রমুখ। 

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর