উপমহাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীকে দূষণের প্রধান উৎস হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বেসরকারি এশিয়ান পেপার মিল। গত প্রায় এক বছর ধরে এ দু’টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়। গত দেড় বছর ধরে কঠোর নজরদারিতে আছে উপজেলা প্রশাসনের। মা-মাছের পোনা দেওয়ার কাছাকাছি সময় গত প্রায় একমাস ধরে করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে কমছে অবৈধ জাল ফেলা। ফলে এবার হালদা নদীতে পোনা সংগ্রহকারীরা সুদিনের প্রত্যাশা করছেন। বৈপ্লবিক পরিবর্তনের আশা পোনা সংগ্রহে। অনূকুল পরিবেশ-প্রকৃতির ফলে হালদা গবেষকেরও অভিন্ন প্রত্যাশা।
জানা যায়, গত ১৯ মাস ধরে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন কঠোর নজরদারিতে রেখেছে হালদা নদীকে। গভীর রাতেও পরিচালিত হয়েছে অভিযান। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে গত ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১০১টি অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালি ও ২ লাখ ১৩ হাজার মিটার জাল, ধ্বংস করা হয় বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ৯টি ড্রেজার ও ১২টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা, বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ জব্দ করা হয় ৩ দশমিক ৫ মিটার, জরিমানা করা হয় ৯০ হাজার টাকা, কারাদণ্ড দেওয়া হয় ৩ জনকে ও নিলামে বালু বিক্রি করা হয় দুই লাখ ২৫ হাজার টাকার বালু।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ‘গত ১৯ মাসে হালদা নদীর দূষণ প্রশ্নে কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। জাল বসানোর খবর পেলে গভীর রাতেও অভিযান চালিয়েছি। লক্ষ্য একটাই, কোনো প্রশ্ন ছাড়াই হালদা নদীকে বাঁচাতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট, এশিয়ান পেপার মিল, পৌরসভা এলাকার বর্জ্য পড়া, ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ড্রেজার বন্ধ করার কারণে বর্তমানে হালদা নদীর পরিবেশ অনেক ভাল। তাই আগামী মৌসুমে ডিম উৎপাদনে আশার আলো দেখছি।’
হালদার পোনা সংগ্রহকারী কামাল সওদাগর বলেন, ‘গত দেড় বছরে হালদা নদীতে প্রকৃতির মূল পরিবেশ ফিরে আসছে, নদীর পানি দেখে বুঝা যাচ্ছে দূষণ কমে আসছে। তাই আমরা প্রায় ৬০০ ডিম সংগ্রহকারী এবার নতুন আশা নিয়ে পোনা আহরণের অপেক্ষায় আছি।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হালদা রিভার রিচার্স ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরিয়া বলেন, ‘হাটহাজারি পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট ও এশিয়া পেপার মিল বন্ধ, উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান ও বর্জ্য পড়া বন্ধের কারণে নিকট অতীতের চেয়ে এ বছর হালদা নদীর পরিবেশ ও পানির অবস্থা ভাল। তাই আগামী মৌসুমে হালদা নদীতে ডিম আহরণে নতুন রেকর্ড সৃষ্টির আশা করছি।’
জানা যায়, হালদা নদী রুই, কাতলা, মৃগেল, কালিবাউস ও কার্প জাতীয় মাছ প্রজনন ক্ষেত্র। প্রতিবছর এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত পরিবেশ-পরিস্থিতি অনূকুলে থাকলে প্রচুর পরিমাণ ডিম ছাড়ে। স্থানীয়দের মতে, মুষলধারে বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত এবং অমাবশ্যা বা পূর্ণিমা (স্থানীয় ভাষায় তিথি বা জো) এসব এক সঙ্গে থাকলে মা-মাছ প্রথমে পরীক্ষামূলকভাবে নমুনা ডিম ছাড়ে। এরপর পরিবেশ-পরিস্থিতি অনূকুল থাকলে ডিম ছাড়ে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার