শিরোনাম
৩০ নভেম্বর, ২০২১ ১৯:৫১
চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প

বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেত

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বড় ভূমিকম্পের অশনি সংকেত

প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘন ঘন ভূমিকম্প বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের অশনি সংকেত দিচ্ছে। এ অঞ্চলের ভূগর্ভের প্লেট অধিক সক্রিয় হওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে রিখটার মাত্রা স্কেলের ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়াকে বিপর্যয় থেকে রক্ষার ইতিবাচক দিক হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ।

ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি)’র উপাচার্য ও ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছোট ছোট ভূমিকম্পগুলো বড় ভূমিকম্পের ইঙ্গিত বহন করে। তবে ছোট ভূমিকম্পগুলোকে পজেটিভ হিসেবেই দেখছি। একটা জায়গা থেকে ঘন ঘন ভূমিকম্প হলে তার পজেটিভ সম্ভাবনাও রয়েছে। ভূগর্ভে প্লেট সংঘর্ষের কারণে সৃষ্ট অ্যানার্জি ছোট ভূমিকম্পের কারণে বের হওয়ার চেষ্টা করছে। এতে বড় ভূমিকম্পের শক্তি ক্ষয় হচ্ছে। ছোট ছোট ভূমিকম্পের ফলে বড় ভূমিকম্পের সম্ভাবনা কিছুটা কমছে। তবে ছোট ভূমিকম্পগুলোর কারণে বড় ভূমিকম্পের শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না।’

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনস্টিটিউট অব আর্থকোয়েক ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চের পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘এ অঞ্চলের ভূগর্ভের প্লেট অতিমাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প হচ্ছে এ অঞ্চলে। শুক্রবারের মাঝারি ধরনের ভূমিকম্পটি আমাদের জন্য ন্যাচারাল সিগন্যাল। অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে রিখটারমাত্রা ৭ দশমিক ৫ মাত্রার চেয়ে বড় ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিতে হবে।’

জানা যায়, পৃথিবীর ভূমিকম্প প্রবণ অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হিমালয় বেল্টেই চট্টগ্রামের অবস্থান। ১৯৭৯ সালে করা জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ সিসমিক জোনিং ম্যাপেও এ অঞ্চলকে ভূমিকম্পের বিপদসংকুল অঞ্চল ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতিক সময়ের অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পগুলোর মূল উৎস মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্ত, ভারত-মিয়ানমার সীমান্ত এবং বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত। এ তিন সীমান্ত এলাকা থেকে মাত্র দেড় থেকে দুইশ’ মাইলের মধ্যেই অবস্থান চট্টগ্রামের।

গত সাত বছরে এ অঞ্চলের ২শ’র বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকম্প বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইরএরএস (ইনকরপোরেটর রিচার্স ইনস্টিটিউশন ফল সিসমোলজি)। সর্বশেষ তিন দিনে তিনটি ভূমিকম্প অনুভূত হয় এ অঞ্চলে। যার মধ্যে একটির তিব্রতা ছিল রিখটার মাত্রা স্কেল ৫ দশমিক ৮। বিশেষজ্ঞদের মতে, সাধারণত এক থেকে দেড়শ বছর পর পর কোনো এলাকায় বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়।

বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পের বিপদসংকুল অঞ্চল হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় ১৭৬২ সালে রিখটার মাত্রা স্কেল ৮ দশমিক ৮ মাত্রার এবং ১৮৮৫ সালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। এরপর এ ফল্টলাইন ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বড় ধরনের কোনো ভূমিকম্প হয়নি। বর্তমানে এ অঞ্চলের ভূগর্ভের প্লেট দুটি অতি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে ঘন ঘন ভূমিকম্প দেখা দিচ্ছে। ভূগর্ভের প্লেট অতিমাত্রায় সক্রিয়া হওয়ার কারণে রিখটার মাত্রা স্কেলের ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর