শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

২২ বছর বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ঝুঁকিতে চার গ্রাম

মাসুম হেলাল, সুনামগঞ্জ

২২ বছর বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন, ঝুঁকিতে চার গ্রাম

বাঁশের খুঁটিতে বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার চারটি গ্রামে ২২ বছর ধরে বিদ্যুৎ সঞ্চালন কাজ চলছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সঞ্চালন ব্যবস্থা ইতিমধ্যে কেড়ে নিয়েছে তিনজনের প্রাণ। বিদ্যুত্স্পৃষ্ট হয়ে আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে হতাহত হয়েছে বহু গবাদিপশু। দিরাই বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন জানান, সুনামগঞ্জ থেকে দিরাই পর্যন্ত নতুন লাইনের কাজ চলছে। আগামী বছর নাগাদ ঝুঁকিপূর্ণ সব সঞ্চালনলাইন পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, ১৯৯৪ সালে দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মধুরাপুর, ঊর্ধ্বনপুর, গনখা ও কামালপুর গ্রামের চার শতাধিক পরিবারকে বিদ্যুতের আওতায় আনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। কোনো প্রকার নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বাঁশের খুঁটি দিয়ে টানা হয় লাইন। সেই থেকে ২২ বছর ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করে আসছেন গ্রাম চারটির প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। সঞ্চালনের ভেঙে পড়া এই ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে আখের গোছাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বরত এক কর্মচারীর। মাস্টার রোলের কর্মচারী মিঠু লাল এই চার গ্রামের বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকাণ্ডের হর্তাকর্তা। নিকট আত্মীয় আরও দুজনকে সঙ্গে নিয়ে এই কর্মচারীর বিরুদ্ধে একটি চক্র গড়ে তোলার অভিযোগ এলাকাবাসীর। মূলত, নামকাওয়াস্তে সঞ্চালন লাইন খুলে দিয়েছে তাদের ভাগ্য। ঝড়, বাতাস, বৃষ্টিতে ঘন ঘন লাইন বিকল হওয়ার কারণে এই তিন ব্যক্তির শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না গ্রাহকদের। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ‘সারাইয়ের মজুরির’ নামে ইচ্ছেমতো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন তারা। অভিযুক্ত মিঠু লাল বলেন, ‘বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারী হিসেবে গ্রাহকদের সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। মানুষকে জিম্মি করে অর্থ হাসিলের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা মোটেই সত্য নয়।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মধুরাপুর বাজার থেকে দক্ষিণ-পূর্বমুখী হয়ে চারটি গ্রামে টানা প্রায় দুই কিলোমিটার লাইনের পুরোটাই বাঁশের খুঁটি দিয়ে তৈরি। অনেক স্থানে পুরনো বাঁশের খুঁটি ভেঙে সচল তার পড়ে আছে গ্রামের রাস্তার পাশে। হেলেপড়া খুঁটির তার রয়েছে মানুষ ও গবাদিপশুর নাগালের ভিতর। কিছু ক্ষেত্রে খুঁটির বদলে বিদ্যুৎ পরিবাহী গাছ দিয়ে সারা হয়েছে সঞ্চালন খুঁটির কাজ। স্থানীয়রা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এ সঞ্চালন লাইনে জড়িয়ে গত তিন বছরে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ মারা যান কামালপুর গ্রামের শওকত আলী (৬৫)। এসব মৃত্যুর ঘটনায় গ্রামবাসী বিদ্যুতের প্রতি ভীত-সন্ত্রস্ত।

সর্বশেষ খবর