শনিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

চার মাসেও কমিটি হয়নি অভিভাবকহীন বিএনপি

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

চার মাসেও কমিটি হয়নি অভিভাবকহীন বিএনপি

দীর্ঘদিন ধরে দলীয় কোনো কর্মকা  নেই ফরিদপুর জেলা বিএনপির। বিগত কয়েক বছর ধরে দলের নেতারা নিষ্ক্রিয় থাকায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে তৃণমূল পর্যায়ে। সরকারবিরোধী কিংবা দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির আন্দোলনে ব্যর্থ হওয়ায় গত ৪ সেপ্টেম্বর ভেঙে দেওয়া হয়েছে জেলা বিএনপির কমিটি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে দেওয়ার কথা জানান। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি আহ্বায়ক কমিটি করারও কথা বলা হয়। কিন্তু চার মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও আহ্বায়ক কিংবা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় চরম হতাশা বিরাজ করছে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে। বর্তমানে ফরিদপুর জেলা বিএনপি অভিভাবকহীন অবস্থায় রয়েছে। চার মাস পেরিয়ে গেলেও আহ্বায়ক কমিটি না হওয়ার পেছনে দলীয় কোন্দল কাজ করছে বলে জানা গেছে। ফরিদপুর জেলা বিএনপি একাধিক গ্রুপে বিভক্ত। দলটির জেলা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি একদিকে এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক রয়েছেন অন্যদিকে। কেন্দ্রীয় কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা জেলার নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে সহসাই আহ্বায়ক কমিটি হচ্ছে না এমনটি জানা গেছে। বর্তমানে জেলা কমিটির পদ পেতে নেতারা ঢাকায় বসে তদ্বির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে নেতারা ততটা সচেষ্ট নয়, যতটা দলের পদ পেতে নিজেরা শোডাউন করছেন। তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন,  দীর্ঘদিন দলের সম্মেলন না হওয়ায় এবং সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত না হওয়ায় জেলা বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করে পকেট কমিটি করায় সেই কমিটি পূরণ করা হয়েছে অযোগ্য এবং সুবিধাবাদীদের নিয়ে। ফলে রাজপথে যারা ত্যাগী ও ছাত্র জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন তারা দলের কোনো পদে নেই। যার কারণে আন্দোলনে বিগত দিনে বিএনপি কোনো সফলতা পায়নি।

অভিযোগ রয়েছে, যোগ্য নেতাদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের পদ দেওয়ার কারণে অনেকেই দল ছেড়েছেন। কেউ বা রাজনীতি থেকে দূরে সরে রয়েছেন। গত ৪ সেপ্টেম্বর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর নড়েচড়ে বসেন দলের সিনিয়র ও জুনিয়র নেতারা। এবার কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্ব আসবে এমনটি মনে করে দলের কর্মীরা উৎফুল্ল হলেও এখন তাদের মনে শঙ্কা দেখা দিয়েছে ভোটের মাধ্যমে কমিটি হওয়া নিয়ে। বিএনপির সিনিয়র কয়েক নেতা অভিযোগ করে জানান, দলের পরীক্ষিত নেতারা দলের কোনো পদ না পেলেও বিগত দিনের আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে থেকে কাজ করেছেন। ফলে তাদের উপর হামলা, মামলা ও নির্যাতন নেমে এসেছে। যারা বিগত দিনে সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থেকে রাজনীতি করেছেন, কেউ বা ব্যবসা বাণিজ্য করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েছেন তারা এখন পদ পেতে ঢাকায় বসে লবিং তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। বিগত দিনে যেভাবে পকেট কমিটি হয়েছে সেভাবে এবার কমিটি হলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা কোনো ভাবেই মানবেন না এটা স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে।

জেলা বিএনপির সাবেক এক প্রভাবশালী নেতা জানান, দলের মধ্যে ঘাঁপটি মেরে থাকা একটি চক্র নিজেদের মতো করে পকেট কমিটি করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। ফের পকেট কমিটি হলে একসময়ে বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফরিদপুরে বিএনপি অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি কবে নাগাদ হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি জেলা বিএনপির সদ্য সাবেক হওয়া নেতাদের কেউ। ফলে হতাশা নেমে এসেছে ফরিদপুর জেলা বিএনপির সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের।

সর্বশেষ খবর