রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বালুচরে টিনের ঘরে পাঠদান

দুটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় টিনের চালা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান

রেজাউল করিম মানিক, লালমনিরহাট

বালুচরে টিনের ঘরে পাঠদান

বন্যায় বিধ্বস্ত লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলায় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীতে বিলীন হওয়ায় টিনের চালা তৈরি করে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। এতে রোদের মধ্যে শিশু শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্থানীয় সাত ভাইয়ের বালুচরে একটি টিনের চালা তৈরি করে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া নদীতে বিলীন হওয়া পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরও শিক্ষার্থীদের পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবনের তিনটি কক্ষে পাঠদান দেওয়া হচ্ছে। গড্ডিমারিতেও দুটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় টিনের চালা তৈরি করে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হচ্ছে। জানা যায়, হাতীবান্ধা উপজেলার পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ও পূর্ব হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আরও ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়। একদিকে শিক্ষার পরিবেশ যেমন পাচ্ছে না, অন্যদিকে প্রচন্ড রোদের কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসন বিদ্যালয় দুটি পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নিলে ওই বিদ্যালয়ের স্থান নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা দেখা দিয়েছে। পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, ‘টিনের চালা ও গরম বালুর ওপর ক্লাস করতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। ওপরে টিনের তাপ ও নিচে বালুর তাপ। আমাদের বিদ্যালয়ে যদি জরুরিভাবে ভালো ক্লাসরুম করে না দেয় তাহলে আমাদের ক্লাস করতে খুব কষ্ট হবে। সেই সঙ্গে আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারি।’ ওই এলাকার স্থানীয়রা বলেন, ‘পশ্চিম হলদিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদীগর্ভে চলে যাওয়ায় চরটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আগে যে চরে বিদ্যালয় ছিল সেই চরে এখন মাত্র ১০টি পরিবার বসবাস করে। বর্তমানে যে স্থানে টিনের চালা করে বিদ্যালয় তৈরি করা হয়েছে, সেই চরে দেড় শতাধিক পরিবার বসবাস করে। সে কারণে এই স্থানে ভালো মানের ক্লাসরুম তৈরি করলে অনেক শিশু লেখাপড়ার সুযোগ পাবে। দেখে মনে হচ্ছে, এই চরটি সহজে নদীভাঙনের শিকার হবে না।’ পাটিকাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুজিবুল আলম সাহাদাত বলেন, ‘এবার নদীভাঙনে আমার ইউনিয়নে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি কমিউনিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমার ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো ভবনের তিনটি কক্ষে একটি বিদ্যালয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিনের চালায় কষ্টে ক্লাস করছে। তাদের জন্য জরুরি ভিত্তিতে পাঠদানের জন্য পরিবেশ উপযোগী ক্লাসরুম তৈরি করা প্রয়োজন। গড্ডিমারি ইউপি চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, এক দিনের ভয়াবহ বন্যায় তার ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষতিসাধিত হয়েছে। দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক বসতবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। স্কুল দুটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের টিনের চালা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেখানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম নবী বলেন, ‘যেখানে ঘনবসতি ও ভাঙনের আশঙ্কা নেই সেখানেই বিদ্যালয়গুলোয় আপাতত টিনের চালা পেতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে, বরাদ্দ পেলে সেখানেই বিদ্যালয়টি স্থায়ীভাবে পুনর্নির্মাণ করা হবে। জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সে ব্যবস্থা দ্রুত করা হবে।

সর্বশেষ খবর