বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২ ০০:০০ টা

এক গ্রামেই তিনবার অধিগ্রহণ শঙ্কায় দেড় শতাধিক পরিবার

শুভ্র মেহেদী, জামালপুর

এক গ্রামেই তিনবার অধিগ্রহণ শঙ্কায় দেড় শতাধিক পরিবার

নদীভাঙন আর টানা তিনবার ভূমি অধিগ্রহণের মুখে পড়ে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের এক সময়ের বড় গেরস্তরা হয়েছেন প্রায় ভূমিহীন আর বাকিরা হয়েছেন নিঃস্ব। সবশেষ বাপ-দাদার রেখে যাওয়া যেটুকু জমি রয়েছে তাতে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও সেটিও হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অধীনে এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের জন্য চতুর্থবার ভূমি অধিগ্রহণের উদ্যোগ নেওয়ায় নিঃস্ব হওয়ার শঙ্কায় দেড় শতাধিক পরিবার। গ্রামবাসীর দাবি বাপ-দাদার কবরের ওপর দিয়ে চলাচল করতে দেওয়া হবে না গাড়ি, তাই সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করবেন তাদের শেষ সম্বলটুকু। তারাকান্দি-ভূয়াপুর রেললাইন এবং মহাসড়কের পাশে থাকা ছোট ছোট দোচালা আর ঘুপড়ি ঘরগুলো দেখে বোঝার উপায় নেই এসব ঘরে বসবাসকারী পরিবারগুলোর এক সময় বিঘায় বিঘায় জমি আর বড় গেরস্থালী ছিল। প্রথম দফায় নদীভাঙনের শিকার হয় পরিবারগুলো। তারপর যমুনা সার কারখানার জন্য বিসিআইসি, তারাকান্দি-ভূয়াপুর রেললাইন নির্মাণের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ এবং মহাসড়কের জন্য সড়ক ও জনপথ ভূমি অধিগ্রহণ করলে সরিষাবাড়ী উপজেলার দৌলতপুর গ্রামের এক সময়ের এ বড় গেরস্থরা হয়ে পড়েন প্রায় ভূমিহীন, আর বেশিরভাগ পরিবার সহায়-সম্বল হারিয়ে হয়ে যান নিঃস্ব। সব হারিয়ে যেটুটু জমি রয়েছে তাতে কোনোরকমে মাথা গোঁজার ঠাঁই হলেও এখন শেষ সম্বলটুকুও হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে দেড় শতাধিক পরিবার। জামালপুর সড়ক বিভাগের আওতায় সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি-ভূয়াপুর সড়ক উন্নয়নের কাজ করা হচ্ছে। এ সড়ক উন্নয়ন কাজের মধ্যে রয়েছে দুটি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণ প্রকল্প। ইতোমধ্যে পোগলদিয়া এবং দৌলতপুর এলাকায় দুটি স্থান নির্ধারণ করে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ দফায় ভূমি অধিগ্রহণ হলে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে যাবে দৌলতপুর গ্রামের দেড় শতাধিক পরিবার। সেইসঙ্গে হারিয়ে যাবে বাপ-দাদার ভিটেমাটি আর কবরের শেষ স্মৃতিচিহ্নটুকুও। তাই নিজের অস্তিত্ব রক্ষায় আন্দোলনে নেমেছে গ্রামের বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীদের দাবি বাপ-দাদার ভিটেমাটি আর কবরের ওপর দিয়ে গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না, সর্বস্ব দিয়ে রক্ষা করবেন নিজের শেষ সম্বলটুকু। জামালপুর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল বাশার মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন জানান, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের জন্য দুটি স্থানের মধ্যে দৌলতপুর এলাকার বাসিন্দারা আপত্তি জানিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে দ্রুতই স্থানটি পরিদর্শন করা হবে।

 এবং স্থান পরিবর্তনের সুযোগ থাকলে তা করা হবে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের আপত্তি পাওয়ার পর শুনানি করা হয়েছে। সেখানে অনেক বাড়িঘর পড়বে বলে জেনেছি এবং যাচাই-বাছাই করে যতটা সম্ভব কম ক্ষতি হয় এ বিষয়ে নতুন করে প্রস্তাব পাঠানো হবে এবং বাড়িঘর বাদ দিয়ে অধিগ্রহণ করা হবে।  জামালপুর সড়ক বিভাগের অধীনে ৩৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে সরিষাবাড়ী-তারাকান্দি-ভূয়াপুর সড়ক উন্নয়নের কাজ। এতে দুটি এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৯ কোটি টাকা।

সর্বশেষ খবর