রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

নোয়াখালী প্রতিনিধি

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) আওতায় পুরনো সড়ক সংস্কার কাজে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে সিডিউল বহির্ভূতভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়কের কাজ করার অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ অনিয়মের বিরুদ্ধে গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের পুরাতন ছয়ানীতে এলাকার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেন।  স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঠিক নজরদারি না থাকায় এমন অনিয়ম করে যাচ্ছে ঠিকাদার। অনিয়মের অভিযোগ করায় উল্টো চাঁদাবাজি মামলার হুমকি পেয়েছেন এলাকাবাসী।

সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, সড়কে নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। নিম্নমানের ম্যাকাডম ঢাকতে পানি ঢালছে শ্রমিকরা। স্থানীয় বাসিন্দারা গতকাল বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের পুরাতন ছয়ানীতে এলাকায় বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা ঠিকাদারের বিরদ্ধে নানা সেøাগান দেয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের অধীনে ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রায় ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার পুরাতন ছয়ানী থেকে জুগিখালী সড়ক (রামেশ্বপুর) পর্যন্ত প্রায় ১৬০০ মিটার নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পান তপন ট্রেডার্স। স্থানীয় দোকানদার জহিরুল ইসলাম বলেন, ১৫ দিন ধরে রাস্তার কাজ চলছে। শুরু থেকেই অনিয়ম করে কাজ করছেন ঠিকাদার। আমরা চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি, অনিয়মনের প্রতিবাদ করায় আমাকে চাঁদাবাজ বলেছেন। আমি একজন আওয়ামী লীগের কর্মী। আমরা চাঁদাবাজ নই বরং কাজের মান ভালোর জন্য অনুরোধ করেছি। আবু তাহের নামে এক বাসিন্দা বলেন, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ৯৭ সালে সড়কটি হয়েছে। প্রায় ২৬ বছর পর এখন মেরামত করা হচ্ছে। কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি। কিন্তু আগের থেকে রাস্তা দুই ফিট ছোট হয়ে গেছে এবং মান খুব খারাপ। খালি গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে ম্যাকাডম মিশে যাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, যে কণা ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো রিকশার চাপে মিশে যাচ্ছে। আমরা প্রতিবাদ করায় উল্টো আমাদের নানা কথা বলছে ঠিকাদার। ২৬ বছর পর আমাদের এ সড়কের কাজ হচ্ছে। আমরা চাই মালামালের মান যেন ভালো থাকে। অনিয়মের বিষয়ে ঠিকাদার আমেনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কাজটা কিনে নিয়েছি, কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। যা শিডিউলে আছে সেভাবে হচ্ছে। চেয়ারম্যানসহ এলাকার মানুষ চাচ্ছে যেন তাদের কাছ থেকে মালামাল কিনি। তাদের কাছ থেকে মালামাল না কেনায় আমার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, অনেক সাংবাদিকের সঙ্গে আমার পরিচয় আছে, আপনার সঙ্গে আমি দেখা করব। জানতে চাইলে ছয়ানী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় এলাকার মানুষ এ কাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য তারা প্রতিবাদ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে। ঠিকাদারকে বুঝাতে চাচ্ছি আপনি ভালো মানের মালামাল দিয়ে কাজ করেন। অথচ ঠিকাদার চাঁদাবাজির অপবাদ দিয়ে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করছেন। কেউ যদি ১০ টাকা চাঁদা চায় এর প্রমাণ যদি ঠিকাদার  দেখাতে পারেন তাহলে আমি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব। জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণ আমাকে অনিয়মের কথা বলছে। তবে আমরা চাচ্ছি কাজটা যেন ভালো হয়। বেগমগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. হাফিজুল হক সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অনিয়মের বিষয়ে আমরা অবহিত আছি। ঠিকদারকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ইট সড়কের পাশে এনে ভাঙতে বলেছি। আজ আমি সরেজমিনে যাচ্ছি। ঠিকাদার যদি সংশোধন না করে তাহলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, মান পরীক্ষা করা হবে। জেলা নির্বাহী প্রকোশলী ইকরামুল হক জানান, আমি বিষয়টি দেখতেছি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। অনিয়মনের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর