শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

কালিয়াকৈরে শিল্পকারখানার বর্জ্যে কৃষিজমির ক্ষতি

কালিয়াকৈর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

কালিয়াকৈরে শিল্পকারখানার বর্জ্যে কৃষিজমির ক্ষতি

কালিয়াকৈরে কারখানার বর্জ্যে দূষিত খালের পানি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কালিয়াকৈর উপজেলার রয়েছে তিন শতাধিক শিল্প-কারখানা। এর বেশির ভাগের শোধনাগার না থাকায় উপজেলার বিভিন্ন খাল, বিল, নদী-নালায় বর্জ্য প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দূষিত হচ্ছে পানি। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কৃষি জমি। বর্জ্য শোধন না করায় দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। নিয়মানুযায়ী কারখানার বর্জ্য এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (ইটিপি) মাধ্যমে পরিশোধন করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলো সেসব নিয়মের তোয়াক্কা না করেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কালিয়াকৈরের বিভিন্ন এলাকার তিন শতাধিক শিল্প-কারখানার বেশির ভাগেই ইটিপি নেই। কিছু কারখানায় ইটিপি থাকলেও অধিকাংশ সময় বন্ধ রাখা হয়। এ কারণে কারখানার বর্জ্য সরাসরি খাল, বিল ও নালা দিয়ে নদী ও ফসলি জমিতে গিয়ে পড়ছে। ফলে নষ্ট হচ্ছে ফসল। জমিতে আগের মতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। খাল-বিলের পানি ঘন কালো ও নীল রঙের বর্জ্য পদার্থ মিশে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় জেলে ও এলাকাবাসী জানান, বিষাক্ত বর্জ্যরে কারণে তারা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মকশ বিলের পশ্চিমাংশে মাছ ধরতে পারছেন না। পানি বিষাক্ত হওয়ায় খাল ও বিলের পানিতে নামলেই শরীর চুলকায় এবং ফোসকা ওঠে। চাষিরাও দূষিত পানি ফসলি জমিতে ব্যবহার করতে পারছেন না। উপজেলার মাটিকাটা, কৌচাকুড়ি, সিনাবহ, মাজুখান, রতনপুর, আত্রমচালা, বাঁশতলী এলাকার অনেক কৃষকের বোরো আবাদ বন্ধ হচ্ছে। উপজেলার কৌচাকুড়ি এলাকার কৃষক শফিকুল উদ্দিন জানান, তার বেশির ভাগ বোরো জমি পশ্চিম চকে রয়েছে- যা সব সময় বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত পানিতে তলিয়ে থাকে। এ জমি চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনো কোনো বিলে ধান উৎপাদন বন্ধের পথে। আরেক বাসিন্দা মুসলিম উদ্দিন বলেন, শিল্পকারখানার বর্জ্যরে দূষিত পানির প্রবাহ দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে এলাকার উর্বর জমি অনুর্বর জমিতে পরিণত হচ্ছে। ফসল-ফলাদির উৎপাদন কমে গেছে। খালে-বিলে মাছ নেই বললেই চলে। সারা দিন জাল ফেলে মাছের দেখা মিলে না। কালিয়াকৈর উপজেলা সদরের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন বলেন, উপজেলায় আমার দুই একর ফসলের খেত রয়েছে। এসব খেতে উৎপাদন হচ্ছে না। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে জানালেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে এ এলাকার অনেকের আয়-রোজগার কমে গেছে। কালিয়াকৈর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, কারখানার ইটিপি ব্যবহার না করায় বর্জ্যমিশ্রিত পানিতে নিচু জমির ধানের বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। কালিয়াকৈর ইউএনও তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জানান, যেসব কারখানায় ইটিপি নেই বা পানি শোধনাগার ব্যবস্থা করা হয়নি তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত অভিযান চালানো হবে।

সর্বশেষ খবর