বৃহস্পতিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

ভালোবাসা দিবসে নেই সিনেমা, মানহীন নাটকের ছড়াছড়ি

ভালোবাসা দিবসে নেই সিনেমা, মানহীন নাটকের ছড়াছড়ি
ভ্যালেন্টাইনস ডে-কে ঘিরে অসংখ্য নাটক নির্মাণ হয়েছে। তবে মানের দিক সব নাটক দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। গতানুগতিক ফর্র্মুলা থেকে বের হতে পারেনি কিছু নাটক। অন্যদিকে এ দিবসটিকে ঘিরে নির্মিত হয়নি বিশেষ কোনো সিনেমা। তবে প্রেমের গল্পের প্রচুর সিনেমা নির্মাণ হয়েছে এবং অধিকাংশই দর্শক হৃদয় কেড়েছে। প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- আলাউদ্দীন মাজিদপান্থ আফজাল

 

নাটক

ভালোবাসা দিবস এলেই নানা আয়োজনে রঙিন হয়ে ওঠে টিভি পর্দা ও অনলাইন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে গত কয়েক বছর ধরে টিভি চ্যানেল ও অনলাইন প্লাটফর্মে প্রচারিত নাটকের মধ্যে বেশিরভাগই মানহীনতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে দর্শকের কাছে। বিটিভি যুগীয় সময় থেকে এ পর্যন্ত নির্মিত হয়েছে অসংখ্য নাটক, টেলিছবি ও ধারাবাহিক। সেই সাদা-কালো সময়ের ভালোবাসার নাটক ছিল পরিবারকেন্দ্রিক, প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে মধুর গল্পের ভালোবাসাকেন্দ্রিক। যেটা এই সময়ের ভালোবাসার নাটকে দেখা যায় না। টিভি চ্যানেল ছাড়াও ডিজিটাল প্লাটফর্মের জন্য নির্মিত হচ্ছে মানহীন ‘আইলাভইউ’ জাতীয় নাটক ও ওয়েব সিরিজ। অপেশাদার নাট্যনির্মাতা, প্রযোজক, বিজ্ঞাপন এজেন্সি বা চ্যানেল মালিক পারছেন না নাটকের দর্শকদের সঠিক মূল্যায়ন করতে। রোমান্টিক নাটকের নামে নির্মিত হচ্ছে একঘেয়েমি আর ভাঁড়ামি নাটক ও ওয়েব সিরিজ। মানহীন নাটক নিয়ে অভিনেতা, নির্দেশক আলী যাকের বলেন, এখন তো অনেক চ্যানেল! এত এত চ্যানেল হলে তো মান ধরে রাখা যায় না। দর্শকপ্রিয়তা আসলে আপেক্ষিক ব্যাপার। শিল্প-কারখানার মতো প্রোডাকশন হচ্ছে। মান কী করে ভালো হবে? দর্শক বাড়াতে হলে নাটকের মানের দিকে নজর দিতে হবে।

অভিনেত্রী দিলারা জামান বলেন, আগে নাটক দর্শকদের মাঝে আবেদন সৃষ্টি করতে পারত। এখন নাটক থেকে কিছু নেওয়ার মতো মন-মানসিকতা এখন আর নেই। নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক মামুনুর রশীদ বলেন, এখনকার ভালোবাসার নাটক হয়ে গেছে প্রেম আর ভাঁড়ামোকেন্দ্রিক। চ্যানেল মালিক আর এজেন্সি এগিয়ে আসলে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

চলচ্চিত্রকার মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী বলেন, গৎবাঁধা রোমান্টিক নাটকের বাইরে ভিন্ন রকমের নাটক বানাতে হবে; যেন সব কাজের মধ্যে বৈচিত্র্যতা থাকে। তাহলে ভারসাম্য আসবে।

নির্মাতা অমিতাভ রেজার এই বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তিনি বলেন, এখন কিন্তু ভালো নাটক হচ্ছে। ভালো কাজ মানেই হলো ঠিকঠাক মতো কাজ করে যাওয়া। রোমান্টিক নাটক তো আর খারাপ নয়। কিন্তু নির্মাণ খারাপ হলে দর্শক সেটা পছন্দ করে না।

অভিনেত্রী রোজী সিদ্দিকী বলেন, দিবস এলেই মানহীন ‘আইলাভইউ’ জাতীয় নাটক হচ্ছে একচেটিয়া। এগুলোর মধ্যে খুঁজলে দেখবেন কোনো ভালোবাসারই গল্প নেই। এখনকার নাটকের শীর্ষত্ব ও দর্শকপ্রিয়তার মাপকাঠি হচ্ছে ভিউ। তবে এবারের বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে বেশ কিছু নাটক বিভিন্ন স্যাটেলাইট চ্যানেল ও অনলাইনে প্রচার হবে। সরাসরি শুটিং স্পটে গিয়ে ও ট্রেইলার দেখে মনে হয়েছে মানহীন নাটকের মাঝেও কিছু ভালো নাটক ও ওয়েব সিরিজ নির্মিত হচ্ছে। সারওয়ার রেজা জিমির রচনায় এবং তুহিন হোসেনের নির্মাণে এনটিভিতে দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে প্রচার হবে এফ এস নাঈম-মৌরি অভিনীত টেলিফিল্ম ‘ভালোবাসাবাসি’। নাটকের অতিথি চরিত্রে দেখা যাবে গায়ক এস আই টুটুলকে। টিনেজ ভালোবাসার খুনসুটি নিয়ে কাস্টমাইজ ফিল্ম ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশ পাচ্ছে সুদীপ বিশ্বাস-মোহেনী অভিনীত ওয়াসিম সিতারের ‘এ ডলস স্টোরি।’ এ ছাড়া এনটিভিতে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে প্রচার হবে অনন্য ইমনের ‘অচেনা আলো’। রচনায় শফিকুর রহমান শান্তনু। ওমর আইয়াজ অনি, অপর্ণা ঘোষ ও তাসনুভা তিশা অভিনীত ‘মেঘবালিকার জন্য রূপকথা’ নাটকটি এনটিভিতে পরদিন রাত নয়টা পাঁচে প্রচার হবে। হাসান রেজাউলের নির্মাণে ‘তুমি আমি দুজনে’ এই ভালোবাসা দিবসে প্রচার হবে। অভিনয়ে জোভান ও তাসনুভা তিশা। জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিথিলা অভিনীত বিশেষ টেলিফিল্ম ‘প্রথম প্রেম’ টেলিফিল্মটি দেখা যাবে বাংলাভিশনের পর্দায় রাত ১১টা ২০ মিনিটে। এবার দেখার পালা, ভালোবাসাকে উপজীব্য করে নির্মিত এসব নাটক টেলিফিল্ম ও ওয়েব সিরিজ কতটা দর্শকপ্রিয়তা অর্জন করতে পারে।

 

সিনেমা

বাংলাদেশে অনেক রোমান্টিক ছবি নির্মাণ হলেও এই দিনটিকে কেন্দ্র করে কোনো ছবি আজও নির্মাণ হয়নি।

তারপরেও পিওর রোমান্টিক ছবি হিসেবে বেশ কিছু ছবি নির্মাণ হয়েছে এবং সেগুলো ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এসব ছবির মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করতে হয় ‘অবুঝ মন’ ছবিটির কথা। স্বাধীন দেশে এটি ছিল প্রথম প্রেমের ছবি। কাজী জহির নির্মিত এবং রাজ্জাক-শাবানা-সুজাতা অভিনীত এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৭২ সালে। ছবিটির চাহিদা আজও অমলিন। একই বছর মুক্তি পায় কামাল আহমেদ পরিচালিত ‘অশ্রু দিয়ে লেখা’। এই ছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক, সুচন্দা, সুজাতা। ত্রিভুজ প্রেমের এই ছবিটির গল্প এখনো দর্শকদের অশ্রু ঝরায়। ১৯৭৪ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারা অঞ্চলে ঘটে যাওয়া একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে ফয়েজ চৌধুরী নির্মাণ করেন ‘মালকা বানু’। এই ছবির গান আর গল্প দর্শকদের আজও মুগ্ধ করে রেখেছে। ১৯৭৫ সালে মাসুদ পারভেজ নির্মাণ করেন ‘এপার ওপার’। তার বিপরীতে অভিনয় করেন কলকাতার সোমা মুখার্জি। একই বছর খান আতাউর রহমান নির্মাণ করেন ‘সুজন সখী’। ফারুক-কবরী অভিনীত এই ছবির আবেদন আজও ম্লান হয়নি। ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেন নির্মাণ করেন ‘নয়নমণি’। বাংলাদেশে প্রথম প্লাটিনাম জুবলি পালন করে ছবিটি। এতে অভিনয় করেন ফারুক-ববিতা। একই বছর মুক্তি পায় এস এম শফীর ‘দ্য রেইন’। ওয়াসিম-অলিভিয়া অভিনীত এই ছবিটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত হয়। ১৯৭৭ সালে আলমগীর কবির নির্মাণ করেন ‘সীমানা পেরিয়ে’। গুণে মানে এই ছবিটি আজও অদ্বিতীয় হয়ে আছে। এতে অভিনয় করেন বুলবুল আহমেদ ও জয়শ্রী কবির। এই বছর মুক্তি পায় আলোড়ন সৃষ্টি করা ছবি ‘অনন্ত প্রেম’। নায়ক রাজ রাজ্জাকের প্রথম পরিচালিত এই ছবিটিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক ও ববিতা। এই ছবির মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রথম নায়ক-নায়িকার চুম্বন দৃশ্য দেখা যায়। এ বছর আবদুল লতিফ বাচ্চু নির্মাণ করেন ‘যাদুর বাঁশি’। এ ছবিতে অভিনয় করেন অপু ও অলিভিয়া। এ ছাড়া যেসব রোমান্টিক গল্পের ছবি বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, গোলাপি এখন ট্রেনে, সখী তুমি কার, সারেং বৌ, কথা দিলাম, বধূ বিদায়, লাভ ইন সিমলা, লাইলী মজনু, বদনাম, প্রাণ সজনী, রাধা কৃষ্ণ, বেদের মেয়ে জোসনা, ঘুড্ডি, ভেজা চোখ, কেয়ামত থেকে কেয়ামত, স্বপ্নের ঠিকানা, চাঁদনী, মনের মাঝে তুমি, রাজলক্ষ্মী শ্রীকান্ত, প্রেমিক, মনপুরা, পোড়ামন-টু প্রভৃতি।

সর্বশেষ খবর