শিরোনাম
সোমবার, ১৯ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মিষ্টি মেয়ে কবরীর জন্মদিন আজ

মিষ্টি মেয়ে কবরীর জন্মদিন আজ

এবারের জন্মদিনে আনন্দ নয়, দুঃখকেই মনে পড়বে মিষ্টি মেয়ে কবরীকে ঘিরে। কারণ আজ তাঁর জন্মদিনে ধরাধামে নেই চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত অভিনেত্রী কবরী। গত ১৭ এপ্রিল সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যান তিনি। আজ এই ক্ষণজন্মা প্রয়াত অভিনেত্রীর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছে বাংলাদেশ প্রতিদিন পরিবার। শ্রদ্ধাভরে তাঁর জীবনের নানা দিক তুলে ধরেছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

 

চট্টগ্রাম আলো করা মীনা পাল

১৯৫০ সাল। চট্টগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত একটি গ্রাম। বোয়ালখালী উপজেলা। এখানেই  শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতী লাবণ্য প্রভা পালের ঘর আলো করে পৃথিবীতে অভিষেক ঘটে ফুটফুটে চেহারার একটি মেয়ের। মা-বাবা আদর করে যাঁর নাম রাখেন মিনা পাল। মিনার জন্মগ্রহণ বোয়ালখালীতে হলেও শৈশব ও কৈশোর বেড়ে ওঠে চট্টগ্রামের ইট-কাঠের নগরীতে। শৈশব থেকেই সংস্কৃতির প্রতি মায়া তাঁর মনে বাসা বাঁধে। ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছরের ছোট্ট  বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব কবরীর। ১৯৬৪ সালে পা রাখেন চলচ্চিত্রে। তারপর তো দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে শুধুই এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস হয়ে যাওয়া একটি সম্মানের নাম কবরী।

 

চলচ্চিত্রে পথ চলার গল্প

১৯৬৪ সাল। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা সুভাষ দত্ত নির্মাণ করবেন ‘সুতরাং’ নামের একটি ছবি। এ ছবির ‘জরিনা’ চরিত্রের জন্য একটি মেয়ে খুঁজছিলেন তিনি। ছবির সংগীত পরিচালক সত্য সাহা কবরীর সন্ধান দিলেন সুভাষ দত্তকে। সত্য সাহা সে সময় সুভাষ দত্তকে বলেছিলেন, চট্টগ্রামে একটি মেয়ে আছে, নাম মীনা পাল। তাঁর উচ্চতাও বেশি নয়। মঞ্চে কাজ করে। সুভাষ দত্ত সত্য সাহাকে নিয়ে বিমানে চট্টগ্রামে গেলেন। চট্টগ্রামের ডা. কামালের সঙ্গে কবরীর বাবার পরিচয় ছিল। ডা. কামালকে নিয়েই কবরীদের বাড়িতে গেলেন সুভাষ দত্ত। সেদিন বাড়ি ছিলেন না কবরী। ওই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহে। সুভাষ দত্ত ও সত্য সাহা মন খারাপ করে ফিরে এলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে আসার পর সত্য সাহাকে খবর দেন কবরীর বাবা। এবার আর সুভাষ চট্টগ্রামে গেলেন না। কবরীর কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসার জন্য ড. কামালকে তাঁদের বাড়িতে পাঠালেন। কথামতো কাজ হলো। ঢাকা থেকে সুভাষ দত্ত খবর পাঠালেন যে, কবরীর তোলা ছবিগুলো দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর হাসি নাকি সুভাষের কাছে অসম্ভব সুন্দর মনে হয়েছে। কবরীকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বলা হলো। কিন্তু কবরীর মা তো আর রাজি নয়। তখন কবরীর বয়স ১৩ বা ১৪। কবরীর জীবদ্দশায় বলেছিলেন ‘মা কান্নাকাটি করে বাবাকে বললেন, আমার দুধের শিশুকে আমি দেব না। আমারও মা-ভাইবোনদের ছেড়ে ঢাকায় আসতে ভালো লাগছিল না। মায়ের কান্না দেখে আমিও কান্না শুরু করলাম। বাবা বুঝিয়ে বললেন, ওরা ডেকেছে। আগে মীনা যাক। যদি ভালো না লাগে, তাহলে চলে আসবে। এই বলে বাবা আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হলেন।’ ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হলেন কবরী। ঢাকায় এসে উঠলেন পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে। সেদিন সুভাষ দত্ত দাদার সামনে এসে দাঁড়ালেন কমলা রঙের একটা ফ্রক পরে। দাদা বললেন, ‘যাও তো শাড়ি পরে এসো।’ বলতেই চটপট করে শাড়ি পরে দাদার সামনে গেলেন তিনি। তারপর জানানো হলো ভয়েস টেস্ট করা হবে। স্টুডিওতে গেলেন। কথা শুনে দাদা বললেন, সবই ঠিক আছে, কিন্তু কথার মধ্যে তো চাটগাঁয়ের আঞ্চলিক টান আছে। কবরী বলেছিলেন, “দাদা আমাকে যেভাবে সংলাপ বলতে বললেন, আমি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে সেভাবেই সংলাপ আওড়াতে থাকলাম। অবশেষে দাদা জানালেন, জরিনা চরিত্রের জন্য আমাকে তাঁর পছন্দ হয়েছে।

 তারপর শুরু হলো আমার নাম নিয়ে গবেষণা। দাদা সৈয়দ শামসুল হককে আমার একটা নাম ঠিক করে দেওয়ার জন্য বললেন। শেষতক ‘কবরী’ নামটাই টিকে গেল। আর ‘মীনা পাল’ থেকে আমি হয়ে গেলাম ‘কবরী’।” কবরী বলেছিলেন, সাংস্কৃতিক পরিবারে মানুষ হয়েছি। মা পুঁথি পড়তেন, ভাইবোনেরা নাচতেন-গাইতেন, ছোট ভাই তবলা বাজাতেন। আমি নাচ করতাম। তবে আগে অভিনয় করিনি। যখন অফার পেলাম, তখন বাবা খুবই উৎসাহিত হলেন। মা দিতে চাননি।

তিনি বললেন, ওর পড়াশোনা নষ্ট হয়ে যাবে। পরিবার একটু রক্ষণশীল তো ছিলই। আমার মায়ের ছোটবেলায় বিয়ে হয়ে যায়। তিনি বেশি পড়াশোনা করতে পারেননি। তাই তাঁর খুব শখ ছিল মেয়েকে পড়াবেন। আমি সুভাষ দত্ত, ফজলে লোহানী, খান আতা, জহির রায়হান থেকে অভিনয় শিখেছি। এখন তো সেরকম শিক্ষকও নেই।

 


জন্মদিনে তাঁকে মনে পড়ে

 

শান্তিতে থেক তুমি : সুচন্দা

আজকের জন্মদিনে কবরী নেই, ভাবতেই বড় কষ্ট হয় কবরীর জন্য। একজন নিবেদিতপ্রাণ অভিনেত্রী ছিলেন তিনি। মানুষ হিসেবেও তাঁর তুলনা ছিল না। তাঁর মতো একজন কর্মদক্ষ মানুষের আরও অনেক দিন বেঁচে থাকার প্রয়োজন ছিল। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁকে শান্তিতে রাখেন এই দোয়াই করছি।

 

জন্মদিনে শ্রদ্ধা রইল : ববিতা

কবরী আপা অভিনীত ‘সুতরাং’ ছবি দিয়েই বাংলাদেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের জন্য সুনাম বয়ে এনেছিল। চলচ্চিত্রে তাঁর ডেডিকেশন কখনো কেউ ভুলতে পারবে না। তিনি পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন সত্যি, এ দেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে তিনি বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা রইল।

 

তাঁকে ভোলার নয় : শাবানা

এত বড় মাপের আর গুণী মানুষের শূন্যস্থান কখনো পূরণ হওয়ার নয়। তাঁর ব্যবহার আর কাজ অনন্য। তাঁকে কখনো ভোলার নয়। সৃষ্টিকর্তাকে বলব কবরী যেখানে থাকেন তাঁকে যেন শান্তিতে রাখেন। আজ তাঁর জন্মদিনে হৃদয়ের গভীর থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা আর দোয়া রইল।

 

জন্মদিনে বিনম্র শ্রদ্ধা : আলমগীর

আমার জীবনের ছবির প্রথম নায়িকা তিনি। সেই ১৯৭২ সাল থেকে ৪৯ বছরের কর্মজীবনের মধুর সম্পর্ক আমাদের। তিনি কেমন অভিনেত্রী ছিলেন তা বিচারের ধৃষ্টতা আমার নেই। মানুষ হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মানবিক। আজ তাঁর জন্মদিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি রইল আমার বিনম্র শ্রদ্ধা।

সর্বশেষ খবর