শিরোনাম
রবিবার, ১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

তারকাদের গল্পে নাটক

কয়েক বছর ধরে নতুন পরিচয়ে নিজেকে যুক্ত করেছেন দেশের তারকারা। নাটকে অভিনয়ের পাশাপাশি তারা গল্পও ভাবছেন, অর্থাৎ নাট্যকার হিসেবে নিজেকে পরিচিত করছেন। তারা নিজেদের লেখা গল্পে অভিনয়ও করছেন। এমন কিছু তারকা নিয়ে লিখেছেন- পান্থ আফজাল

তারকাদের গল্পে নাটক

এই সময়ে বাংলা নাটকের প্লট গড়ে উঠছে গল্প বা কিছু ভিন্ন চরিত্রের ওপর নির্ভর করে। সেই হিসেবে প্রচুর গল্পের প্রয়োজন। অভিনয় করতে করতে তারকাদের মাথায় ভিন্ন কনসেপ্ট ও সময়োপযোগী গল্প এসে ভিড় করে। তারা সেগুলো অনেক সময় শেয়ার করেন নির্মাতা-প্রযোজকদের কাছে। আর এসব লুফে নেন নির্মাতারা। এমনিতে তারকা অভিনয়শিল্পী, তার ওপর আবার তাদের আলাদা ভাবনার গল্প-দর্শকদের জন্য ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। যে কোনো নাটকের লোকেশন, সংলাপ, লুক, ভিন্ন চরিত্রের পাশাপাশি দরকার ভালো ও সময়োপযোগী গল্প। সেটা মাঝে মধ্যে আসে তারকাদের কাছ থেকে। তারকাদের গল্প দর্শকদের মাঝে বেশি আলোচনার জন্ম দেয়। গল্প নাটকের প্রাণ। আগে নাটকের গল্পগুলোতে পাওয়া যেত ভিন্ন আবেশ। এখন সেই অবস্থা নেই! তারপরও আলাদা চিন্তা ও বৈচিত্র্যময় গল্প ভাবনায় দেশের তারকারা এখন বেশ এগিয়ে। গল্পকার হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছেন তারকা অভিনয়শিল্পী মোশাররফ করিম, রওনক হাসান, আফরান নিশো, অপূর্ব, মেহজাবিন, সাফা কবিরসহ অনেকেই। অন্যরা শখের বশে লিখলেও অভিনয়ের পাশাপাশি কিছুটা পেশাদারিত্ব নিয়েই নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য লেখেন রওনক হাসান। অন্যদিকে অনেকটা শখের বশেই গল্প লিখেছেন বাকি তারকারা।

মধ্যবিত্ত শিক্ষিত পরিবারের মেয়ে আলো। বাবার স্বপ্ন ছিল মেয়ে পুলিশ হবে। আলো আজ ট্রাফিক সার্জেন্ট হয়েছে। প্রথম দিনেই বাবার দোয়া নিয়ে কর্মস্থলে তার কাজ বুঝে নেয়। সারা দিন প্রখর রোদের মধ্যে কাজ করতে গিয়ে আলোকে নানা প্রতিকূল অবস্থায় পড়তে হয়। কিন্তু সমস্যাটা বাধে টয়লেট নিয়ে। কোনো ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনেই টয়লেট নেই। একসময় পর্যাপ্ত পানি না খাওয়ায় এবং দীর্ঘ সময় প্রস্রাব আটকে রাখায় ইনফেকশন এবং সেখান থেকে কিডনিতেও সমস্যা দেখা দেয় আলোর। এরপর আলোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে একসময় প্রত্যেক নারী পুলিশ বক্সের সামনে পোর্টেবল টয়লেট স্থাপন করা হয়। সবাই আলোকে অভিনন্দন জানায়। তবে ডিউটিরত অবস্থায় ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় ট্রাফিক সার্জেন্ট মেহজাবিন। নাটকে মেহজাবিন ছাড়াও অভিনয় করেছেন মনোজ প্রামাণিক। নাটকটি আরটিভিতে এই ঈদের পঞ্চম দিন প্রচার হয়। এমন চমৎকার গল্প ভাবনায় ও রচনায় ছিলেন মেহজাবিন চৌধুরী আর নির্মাতা মাহমুদুর রহমান হিমি। এর আগেও নারী দিবসকে কেন্দ্র করে ‘থার্ড আই’ নামে একটি নাটকের গল্প লিখেছিলেন অভিনেত্রী মেহজাবিন চৌধুরী। শ্রাবণী ফেরদৌসের পরিচালনায় নাটকটিতে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি। যদিও নাট্যকার মেহজাবিনের প্রথম নাটক ‘স্বপ্ন দেখি আবারও’। তবে মেহজাবিন অবশ্য গল্পকার হয়েছেন নিজের একটা শখ মেটানোর অনুভব থেকে। কাজের মেয়ের চরিত্র করার তার খুব শখ। নিজের পছন্দের চরিত্র করার আগ্রহ থেকে নাটকের গল্প লেখা শুরু তার। ‘হৃদয় ভাঙা ঢেউ’ নামের আরেকটি নাটকও তিনি লিখেছেন। যেহেতু মেহজাবিনকে নাটকের কাজে নানা মানুষের সঙ্গে মিশতে হয়, দেখতে হয় নানা রকম দৃশ্য। তাই চারপাশের দেখা থেকেই গল্প মাথায় আসে তার।

নাটকের গল্প লেখার তালিকায় রয়েছেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা আফরান নিশো। তার লেখা নাটকের গল্পের সংখ্যা উল্লেখ করার মতো। তিনি নির্মাতাদের গল্প দেন ভালোবাসা থেকে। একটু ব্যতিক্রমী কাজের ভাবনা থেকে তিনি গল্পগুলো শেয়ার করেন। তার লেখা গল্পের মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই প্রতীক্ষায়, মেরুণ, মেমোরিজ, মুঠোফোন, শিফট, মরীচিকা, সেই তো এলে, ভিউ, রাজকুমার আসবে বলে, কুয়াশা প্রমুখ। নিশোর গল্পে প্রথম নাটক ছিল ‘এই প্রতীক্ষায়’। ‘গল্প সবার মাথায় আসে না। এটি একটি সৃজনশীল প্রক্রিয়া’-যা আফরান নিশো মনে করেন। একজন অভিনেতারও অনেক সত্তা থাকে। কেউ সেগুলো প্রকাশ করে, কেউ করে না। নিশো নিজের লেখকসত্তাকে কাজে লাগিয়েছেন। এই ভার্সেটাইল অভিনেতা তার চারপাশের দেখা পরিবেশ ও চরিত্র থেকে গল্প ভেবে থাকেন। নিশো যেহেতু প্রতিদিনই কোনো না কোনো নাটকে অভিনয় করেন আর বেশির ভাগ সময়ই ভাবনাগুলো থাকে নাটকের গল্প, চরিত্র ঘিরে। তাই নতুন সব গল্পভাবনা মাথায় আসে তার। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি গল্পগুলো নির্মাতার সঙ্গে শেয়ার করেন।

শোবিজের অন্যতম অভিনেতা মোশাররফ করিম থিয়েটারের মানুষ। তিনি দলে থাকা অবস্থায় নিয়মিত গান, কবিতা ও গল্প লিখতেন। তিনি ভালো গানও করেন। অভিনয়কে নিজের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার পর তিনি নির্মাতাকে নিজের ভাবনা, নাটকের গল্প শেয়ার করতেন। তার গল্পে নির্মিত হয়েছে অনেক নাটক।

১৯৯৭ সালে থিয়েটারের কর্মশালা করতে গিয়ে নাটকের গল্প, চিত্রনাট্য লেখার আগ্রহ জন্মে আরেক তারকা অভিনেতা রওনক হাসানের। তিনি অনেক আগে থেকে নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার কাজ করে চলেছেন। তাই বলা যায়, লেখালেখির দিক থেকে শিল্পীদের মধ্যে তিনি অনেক এগিয়ে। ২০০৪ সালে লেখেন প্রথম চিত্রনাট্য ‘বয়স যখন একুশ’। এ পর্যন্ত শতাধিক নাটকের গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন তিনি। তার লেখা ‘বিবাহ হবে’ এই সময়ে সবার মাঝে সাড়া ফেলেছে। তার লেখা অন্যসব কাজের মধ্যে রয়েছে আমার বউ সব জানে, ভোরের প্রসূতি, ধুলো উড়া দিন, ধুলো মেঘের জোছনা ভ্রমণ, চৌকিদার, একুশের পর, কথা ছিল অন্যরকম প্রভৃতি। গল্প লেখা প্রসঙ্গে রওনক হাসানের ভাষ্য হলো, ‘অভিনয়টা মূল পেশা হলেও গল্প ও চিত্রনাট্য লেখার জন্য পারিশ্রমিকও পাই। তাই লেখা নিয়মিত চালিয়ে যাচ্ছি।’ জনপ্রিয় অভিনেতা অপূর্বর লেখা প্রথম নাটকের নাম ‘ভালোবাসার শুরু’। এরপর ২০০৭ সালে শখ করে ‘স্বপ্নের নীল পরী’ নামের একটি নাটকের গল্প লেখেন তিনি। নির্মাতা ছিলেন চয়নিকা চৌধুরী। এরপর অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি লেখেন আনটোল্ড লাভস্টোরি, এক টুকরো নীল, হঠাৎ এলো বৃষ্টি, ফার্স্ট লাভ, ড্রিম গার্ল, রাজকুমারসহ আরও বেশ কিছু নাটকের গল্প। তবে গল্প লেখার কাজটি হুট করেই শুরু হয়নি তার। চিত্রনাট্য পড়তে পড়তে অনেক গল্প ভাবনা মাথায় এলে সেটাকে তিনি শেয়ার করতেন। পরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি তার সেই ভাবনাকে চিত্রনাট্যে রূপ দিতেন। বিশেষ দিবসে কিংবা ঈদের নাটকের গল্প তার মাথায় আসত। তার শেয়ার করা সেই গল্প ভাবনা থেকেই নির্মিত হয়েছে অসংখ্য নাটক। গল্প লেখা তালিকায় রয়েছেন আরেক অভিনেত্রী সাফা কবির। দি লাস্ট ব্রেকআপ ও বিয়ে করা বারণ নামে সাফা কবিরের লেখা দুটি নাটক দেখানো হয়েছিল এর আগে। তবে পেশাদার নয়, নিতান্ত শখের বশেই নাটকের গল্প লিখেছেন সাফা। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় নাটকের গল্প লেখার আগ্রহ তৈরি হয় তার। অন্যদিকে ছোটবেলায় গল্পের বই পড়ার অভ্যাস ছিল। আর নাটকের শুটিংয়ের পরিবেশ ও নানা মানুষের সঙ্গে কাজের ফলে অনেক গল্প ভাবনা মাথায় আসে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সাফা পরিচালকের সঙ্গে শেয়ার করতেন তার ভাবনাগুলো। এভাবেই গল্প লেখা তার। এসব অভিনয়শিল্পী ছাড়াও আরও অনেক শিল্পীই রয়েছেন যাদের গল্প থেকে নির্মাতারা নাটক নির্মাণ করেছেন এবং এখনো করছেন। তবে অভিনয়শিল্পীদের এই গল্প লেখার বিষয়কে নাট্যপ্রেমীরা এখন পজিটিভলিই নিচ্ছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর