মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নির্মাতা যখন অভিনেতা

নির্মাতা যখন অভিনেতা

পর্দায় তাঁরা দর্শকপ্রিয় নির্মাতা। তাঁদের হাত ধরেই রঙিন ফ্রেমে বন্দী হন অভিনয়শিল্পীরা। একসময় পেয়ে যান দর্শকপ্রিয়তা। তবে এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। কোনো কোনো নির্মাতা অভিনয়ে যুক্ত হয়েছেন নিতান্ত শখের বশে অথবা পেশা হিসেবে নিয়ে। তেমন কয়েকজন নির্মাতা নিয়ে লিখেছেন - পান্থ আফজাল

 

আমজাদ হোসেন

বহুমাত্রিক গুণের অধিকারী ছিলেন আমজাদ হোসেন। শুধু নির্মাণেই নন, তিনি একাধারে ছিলেন অভিনেতা ও লেখক। নির্মাণের বাইরে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে গানও লিখেছেন। টিভি নাটকের একজন গুণী নাট্যনির্মাতা ও অভিনেতা হিসেবেও ছিল তাঁর সুনাম। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঈদের নাটক বলতে ছিল আমজাদ হোসেনের লেখা, পরিচালনা ও অভিনয়ে ‘জব্বার আলী’ নাটকটি; যা সে সময় বিপুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন জব্বার আলী চরিত্রে। নাট্যকার হিসেবে টেলিভিশনের প্রথম রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পায় এই নাটক।

 

সালাউদ্দিন লাভলু

নাটকের আরেক পরিচিত মুখ সালাউদ্দিন লাভলু। তিনি চিত্রগ্রাহক, চিত্রনাট্যকার এবং টিভি পরিচালক হিসেবে কাজ করলেও ক্যারিয়ারে অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন। ২০০৪ সাল থেকে লাভলু টেলিভিশনে অনেক ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা এবং অভিনয় করেছেন। এরমধ্যে তাঁর পরিচালিত ও অভিনীত ‘রঙের মানুষ’ সবার কাছে সমাদৃত হয়। এরপর থেকে তিনি টেলিভিশনে ধারাবাহিক নাটক পরিচালনা এবং অভিনয় করে আসছেন। এরমধ্যে অন্যতম ভবের হাট (২০০৭) এবং ঘর কুটুম (২০০৮)। তাঁর অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য গরুচোর, পত্র মিতালী, স্বপ্নের বিলাত, ঢোলের বাদ্য, পাত্রী চাই, ওয়ারেন, শান্তি মলম ১০ টাকা ইত্যাদি। 

 

অনিমেষ আইচ

নির্মাতা হিসেবে অনিমেষ আইচ দেশীয় শোবিজে অত্যন্ত সুপরিচিত। তিনি ছোট পর্দা ও বড় পর্দা- দুই মাধ্যমেই তাঁর সরব উপস্থিতি। তিনি একজন চিত্রনাট্য লেখকও। নাটক নির্মাণ করলেও চলচ্চিত্রের প্রতি তাঁর বরাবরই আগ্রহ ছিল। সে হিসেবে তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ ও অভিনয় করেছেন। বেশ কিছু নাটকেও তিনি অভিনয় করেছেন। তবে এক্ষেত্রে তিনি অনিয়মিত। তিনি অনেক বছর থিয়েটার প্রাচ্যনাটের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নাটকে অভিনয়ে দেখিয়েছেন নিজের প্রতিভা। তিনি মেজবাউর রহমান সুমনের ‘তারপরও আঙুরলতা নন্দকে ভালোবাসে’, ‘ফেরার কোনো পথ নেই থাকে না কোনোকালে’-তে খলচরিত্রে অভিনয় করে বেশ সুনাম অর্জন করেন। তিনি অমিত আশরাফ পরিচালিত উধাও-এ রাজ নামক এক খুনির চরিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৮ সালে জয়া আহসানের বিপরীতে দেবী ও টোকন ঠাকুর পরিচালিত কাঁটা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

 

সুমন আনোয়ার

অভিনেতা হওয়ার লক্ষ্যেই ১৯৯৪ সালে থিয়েটারে যোগ দিয়েছিলেন নির্মাতা সুমন আনোয়ার। তবে অভিনেতার চেয়ে একজন নির্মাতার হাতে অনেক বেশি অপশন থাকে বলে পরে তিনি হয়ে গেলেন নির্মাতা। তবে অভিনয়ে আসা তাঁর অন্য নির্মাতাদের আগ্রহেই। তিনি নিয়মিত পরিচালক, অনিয়মিত অভিনেতা। তাঁর অভিনীত কাজের মধ্যে রয়েছে-যুদ্ধ, অপরিচিতা, একটি যথাযথ মৃত্যু, সূর্যের হাসি প্রভৃতি। তিনি ওয়াহিদ তারেকের ‘আলগা নোঙর’ ও অনিমেষ আইচের ‘না মানুষ’-এ অভিনয় করেছেন।

 

সোহেল আরমান

বিখ্যাত চিত্রপরিচালক আমজাদ হোসেনের পুত্র পরিচয়ের বাইরে সোহেল আরমান একজন নাট্যকার, অভিনেতা, গীতিকার ও চলচ্চিত্র পরিচালক। তবে অভিনেতা হিসেবেই মানুষের কাছে তাঁর পরিচিতি বেশি। আগে নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন তিনি। তবে নির্মাণেই আগ্রহ তাঁর বেশি। ১৯৯৪ সালে প্যাকেজের পঞ্চম নাটক হিসেবে প্রথম নির্মাণ করেন ‘বিবর্ণ প্রজাপতি’ নাটকটি। এটি রচনা ও নির্দেশনার পাশাপাশি এতে বিপাশা হায়াত ও আফসানা মিমির সঙ্গে অভিনয়ও করেন তিনি। একই বছর আমজাদ হোসেনের রচনা ও ফখরুল আবেদীন দুলালের প্রযোজনায় ‘জন্মভূমি’ নাটকে অভিনয় করে আলোড়ন ফেলেন সোহেল আরমান। এই নাটকে আগুন চরিত্রে তাঁর অসাধারণ অভিনয়ের কথা এখনো দর্শকের মনে দাগ কেটে আছে। এরপর তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘আগুন লাগা সন্ধ্যা’, ‘তিন পুরুষ’, ‘দুঃখ তোমায় দিলাম ছুটি’, ‘অতল প্রহর’, ‘নগরে অনাগরিক’।

 

ইফতেখার আহমেদ ফাহ্মি

ছবিয়াল বা ভাই-বেরাদর গ্রুপের মধ্যে সবচেয়ে মেধাবী নির্মাতা ইফতেখার আহমেদ ফাহ্মি। তাঁর নির্মিত অনেক কাজ হয়েছে দর্শক প্রশংসিত। নির্মাণের পাশাপাশি তিনি এরপর নিয়মিত নাটকে অভিনয় করেছেন। অভিনয় করেছেন ‘হ্যাঁ না’, ‘সিক্সটি নাইন’, ‘তালপাতার সেপাই’, ‘বিপরীতে আমি’, ‘হাউসফুল’, ‘টু বি কন্টিনিউড’, ‘ফিল ইন দ্য গ্যাপ’, ‘ক্যান্ডি ক্রাশ’ প্রভৃতি। হুট করে কেউ বললে বা মন ভালো থাকলে তিনি অভিনয় করেন।

 

শরাফ আহমেদ জীবন

ছবিয়াল বা ভাই-বেরাদর গ্রুপের আরেকজন সফল নির্মাতা শরাফ আহমেদ জীবন। দর্শকপ্রিয় অসংখ্য বিজ্ঞাপন ও নাটক নির্মাণ করেছেন তিনি। অভিনয় করার ইচ্ছা না থাকলে ইদানীং নিয়মিত অভিনয় করছেন। হয়েছেন অসংখ্য নাটকের অভিনেতা ও বিজ্ঞাপনের মডেল। ‘জাগো’ সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন। ইদানীং অনেকেই তাঁকে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকের তুমুল আলোচিত চরিত্র ‘বোরহান ভাই’ নামে ডাকে। ‘ফিমেল’-এও তাঁর চরিত্রও পছন্দ করেছেন দর্শক।

 

জিয়াউল হক পলাশ

সময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেতা জিয়াউল হক পলাশ। ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ (সিজন থ্রি) নাটকে তাঁর অভিনীত কাবিলা চরিত্রটি এখন মানুষের মুখে মুখে। অন্যদিকে ‘ফ্যামিলি ক্রাইসিস’র পারভেজসহ একাধিক চরিত্র দিয়েও দর্শকদের মাতিয়েছেন তিনি। তবে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু পরিচালক হিসেবে। মিডিয়ায় তাঁর আসা পরিচালক হওয়ার জন্যই। তিনি দীর্ঘদিন মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ইশতিয়াক আহমেদ রুমেলের সঙ্গে। তবে অমির সঙ্গে পরিচয়ের পর ‘ট্যাটু’ নাটকে অভিনয় দিয়ে তাঁর অভিনয় ক্যারিয়ার শুরু।

 

সহীদ উন নবী

পরিচালনা ও অভিনয় দুই মাধ্যমে সমানতালে কাজ করছেন পরিচিত মুখ সহীদ উন নবী। তবে তিনি নিজেকে নির্মাতা পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। নাট্য নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ডের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচিত সদস্যও তিনি। অভিনয় করেন শখের বসে। ২০১২ সালে ‘হাইকোর্টে জব’ নাটক নির্মাণের মাধ্যমে প্রথম নাটক নির্মাণ করেন সহীদ উন নবী। এরপর একে একে প্রায় ৮০টি খন্ড নাটক, ৩২টি টেলিফিল্ম, ২৭টির মতো বিজ্ঞাপন বানিয়েছেন তিনি। বর্তমানে নির্মাণ ও অভিনয় নিয়ে দারুণ ব্যস্ত তিনি। তিনি অভিনয় করেছেন রেদওয়ান রনি, মোস্তফা কামাল রাজ, মাসুদ সেজান, রওনক আহমেদ, আবু হায়াত মাহমুদসহ অসংখ্য নির্মাতার নাটকে। সম্প্রতি তাঁর অভিনীত সিরিয়াল ‘একশো তে একশো’, ‘বিবাহ হবে’ দর্শকগ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। তিনি অসংখ্য খন্ড নাটকে কাজ করেছেন।

 

তালিকায় আরও যাঁরা...

২০০৬ সালে ছবিয়াল উৎসবের প্রথম নাটক ‘টু ইন ওয়ান’-এ প্রথম অভিনয় করেন আশফাক নিপুণ। এরপর করেন ‘উপসংহার’, ‘ওয়েটিং রুম’, ‘মুকিম ব্রাদার্স’, ‘মিডল ক্লাস সেন্টিমেন্ট’সহ অসংখ্য নাটক। হয়েছেন বিজ্ঞাপনের মডেলও। মোস্তফা কামাল রাজ দর্শকনন্দিত নির্মাতা হিসেবে পরিচিত হলেও অভিনয় করেছেন ‘ফাউল’, ‘লস প্রজেক্ট’, ‘পিক পকেট’, ‘লাকি থার্টিন’-এ। বিজ্ঞাপনচিত্রের মডেল হিসেবেও ছিলেন। ইফতেখার আহমেদ ফাহ্মির হাত ধরেই অভিনয়ে আসা এই সময়ের আলোচিত নির্মাতা মাবরুর রশীদ বান্নাহর। প্রথম অভিনয় তাঁর ‘এসো নিজে করি’ নাটকে। তাঁর অভিনীত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘হাউসফুল’, ‘ফিফটি ফিফটি’, ‘ম্যাডবয়’ উল্লেখযোগ্য। অভিনয় করেছেন শর্টফিল্ম ‘সেকেন্ড চান্স’-এ। মাসুদ মহিউদ্দিন, কামরুজ্জামান কামু, রহমতুল্লাহ তুহিন, সাইফ চন্দন, আশুতোষ সুজন, শাফায়াত মনসুর রানা, রুমান রুনি, রিয়াজুল রিজু, মারিয়া তুষারসহ অনেক নির্মাতাই পরিচালনার সূত্রে অভিনয়ে জড়িয়েছেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর