বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মরণসভা

কিংবদন্তির মৃত্যু নেই

শোবিজ প্রতিবেদক

কিংবদন্তির মৃত্যু নেই

কিংবদন্তি গীতিকবি প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার তাঁর সৃষ্টিশীল কাজ দিয়ে সবার মনে জায়গা করে রেখেছেন। ২০ হাজারেরও বেশি গান উপহার দিয়ে  তৈরি করেছেন ইতিহাস। তাঁর কর্মে শিক্ষণীয় দিক তো আছেই, আবার নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবেন। তাই তাঁর মতো কিংবদন্তির মৃত্যু নেই। তিনি আছেন এবং থাকবেন। সোমবার গীতিকবি সংঘ ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যৌথ উদ্যোগে গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্মরণসভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। শুরুতে সংগীতশিল্পী মনির খান বলেন, মনের চাহিদার সঙ্গে তাঁর লেখা, বাস্তবতা, বস্তুনিষ্ঠ বিষয়গুলো তাঁর কলমের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেত। আমি আমার ক্ষুদ্র জীবনে চিৎকার করে বলতে পারি, আর সম্ভব নয়। গীতিকবি  মনিরুজ্জামান মনির বলেন, আমরা যাঁরা তাঁকে আদর্শ মানতাম তাঁরা তাঁর কাজ দেখে অনুপ্রেরণা পেতাম। সংগীতশিল্পী কুমার বিশ্বজিৎ বলেন, গাজী ভাইয়ের লেখা সম্পর্কে বলার ধৃষ্টতা আমার নেই। তিনি যদি ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ এই একটি গানও লিখতেন, তাহলেও আমাদের সেই মানদন্ড, শ্রদ্ধার জায়গাটুকু কিংবা তাঁর আইকনিক জায়গাটি সারা জীবন থেকে যেত। তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে জানাতে ডিজিটাল আর্কাইভ করার প্রস্তাব দেন তিনি। নকীব খান বলেন, কিংবদন্তির কোনো মৃত্যু নেই। তিনি আমাদের মাঝে আছেন এবং থাকবেন। গাজী ভাইয়ের ২০ হাজার গান অসাধারণ সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টিগুলোকে যেন আর্কাইভ করা হয়, আগামী প্রজন্ম তাতে অনুপ্রেরণা পাবে। তাঁর কাজ নিয়ে আমাদের গবেষণা করা দরকার। আর্কাইভ করলে সেই গবেষণায় কাজে আসবে। কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানা বলেন, তাঁর লেখা অনেক গানে কাজ করেছি। বেশ মজার মানুষ ছিলেন, খেতে ভালোবাসতেন। আমরা সবাই জানি আমরা কী হারিয়েছি। কণ্ঠশিল্পী খুরশীদ আলম বলেন, আমি একটা বড় ভাই, অভিভাবক হারালাম। আপদে-বিপদে গাজী ভাই পাশে থাকতেন। সংগীতশিল্পী রফিকুল আলম বলেন, আমাদের গানের ক্ষেত্রে একটি বিষয় প্রয়োজন হয়, তা হলো একটি পারিবারিক সম্পর্ক  তৈরি করতে হয়। তিনি খুব ভালোভাবে এটি পারতেন। এরকম আর পাব না। মৌলিক গান লেখার মানুষ কিন্তু সত্যি কমে গেছে। সম্ভবত গাজী ভাই শেষ ব্যক্তি, শেষ কবি যাঁর কাছ থেকে মৌলিক গান খুব সহজে পাওয়া যেত। গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়াররের সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য ১১ দিনের। আমাকে ফোন করে তাঁর বইয়ে একটি লেখা দিতে বলেছিলেন। তাঁর বইয়ে নাকি আমার লেখা থাকতেই হবে। গাজী মাজহারুল আনোয়ারের স্ত্রী জোহরা গাজী বলেন, গাজী মাজহারুল আনোয়ার একটি ইতিহাস, একটি বাংলাদেশ। তাঁর ইতিহাসের সঙ্গে থেকে আমি ধন্য। তিনি একজন অত্যন্ত ভালো, নিরহংকার, সৎ ব্যক্তি ছিলেন। পারিবারিক জীবনেও তিনি সার্থক ও সফল মানুষ। আমি একজন প্রতিভার আগুনের সঙ্গে বসবাস করেছি। তিনি আমাকে বলতেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত যেন আমার হাতে কলম থাকে, দোয়া কর। লিয়াকত আলী লাকী বলেন, আমার কাছে মনে হয় গাজী ভাইয়ের আরেকটি জীবন শুরু হলো। সেই জীবনের দায়িত্ব আমাদের কাছে। তাঁর ২০ হাজার গান সত্যিকার অর্থে সংগ্রহ করতে সক্ষম হব। আসুন সবাই মিলে পরবর্তী প্রজন্মের স্বার্থে কাজটি করি। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন গীতিকবি সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাপ্পী খান ও দেলোয়ার আরজুদা শরফ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক জয় শাহরিয়ার, গাজী মাজহারুল আনোয়ারের বোন নাহিদা আক্তার নাসরিন, মেয়ে দিঠি আনোয়ার, সংগীতশিল্পী রিপন খান প্রমুখ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর