বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার :- হৃত্বিক চক্রবর্তী

আমি ছবি দেখে অভিনয় শিখি না

আমি ছবি দেখে অভিনয় শিখি না

আগামীকাল বাংলাদেশ ও ভারতে একসঙ্গে মুক্তি পাচ্ছে ওপার বাংলার অভিনেতা হৃত্বিক চক্রবর্তীর ‘মায়ার জঞ্জাল’।  তাঁর সঙ্গে রয়েছেন এ দেশের অপি করিম-সোহেল মন্ডল। জসীম আহমেদের প্রযোজনায় সিনেমাটির নির্মাতা ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী। এই সিনেমা ও সাম্প্রতিক ব্যস্ততা  নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন- পান্থ আফজাল

 

কভিডে দীর্ঘ বিরতির পর জয়ার সঙ্গে ‘বিনিসুতোয়’ এসেছিল। আগামীকাল দুই বাংলায় ‘মায়ার জঞ্জাল’ মুক্তি পাচ্ছে। অভিনেতা হিসেবে মনের অবস্থা ঠিক কী রকম?

২০২০ সালে যা হলো, তা আমাদের ভাবনায় ছিল না। সবাই নিজেদের মতো করে বিষয়টা বুঝলাম। হলে ছবি রিলিজের পরিস্থিতি তখন ছিল না। নিজের পেশা নিয়ে দুশ্চিন্তা, খারাপ লাগা ছিল, আছেও। তবে আশঙ্কার পাশাপাশি খানিক আশায় বুক বাঁধি। এরপর তো জয়ার সঙ্গে ‘বিনিসুতোয়’ এলো। দর্শক কিন্তু ভালোভাবেই নিয়েছে সিনেমাটি। আর ২৪ তারিখে ভারত-বাংলাদেশে মুক্তি পাচ্ছে জসীম আহমেদের প্রযোজনায় ‘মায়ার জঞ্জাল’। এটি কবিদা (ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী) বানিয়েছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের তুখোড় অভিনেত্রী অপি করিম, সোহেল মন্ডলরা তো আছেনই ছবিতে। আমার মনে হয়, দর্শক সিনেমা হলে ছবিটি দেখতে আসবেন।

 

জয়া আহসানের সঙ্গে আগেও তো কাজ করেছেন?

জয়ার সঙ্গে আরও দুটি ছবিতে ছিলাম। এরমধ্যে একটিতে একসঙ্গে দৃশ্য সেভাবে ছিল না। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরীর স্বল্পদৈর্ঘ্য ‘ভালোবাসার শহর’-এ একটি দৃশ্য ছিল দুজনের। আমরা আগে কখনো রিহার্সেল করিনি। তবে আলাদাভাবে পরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারপর সেটে এসে মিট করেছি। তার আগে তো ‘আবর্ত’ করেছি। আসলে জয়া খুবই উঁচু দরের অভিনেত্রী। আর আমরা তো ছোট ইন্ডাস্ট্রির অভিনেতা। ফলে সব রকম প্রসেসে কাজ করতে তৈরি থাকি।

 

জয়ার পর ‘মায়ার জঞ্জাল’-এ অপি করিমের সঙ্গে রসায়নটা কেমন ছিল?

অভিনেতা হিসেবে যখন কাজ করি, তখন তো আলাদা করে রসায়নের বিষয় মাথায় রাখি না। চিত্রনাট্য, মুহূর্ত সবমিলিয়ে হয়তো পুরো বিষয়টা জমাট বাঁধে। শিল্পী ভালো হলে তাঁরা হয়তো আরও পরত যোগ করেন দৃশ্যে। খুব খারাপ অভিনেতা হলে আমি বুঝতে পারি না ভালো করছে না কি খারাপ করছে। জয়া ও অপি- দুজনই ভীষণ গুণী অভিনেত্রী। তবে জয়ার সঙ্গে দুটি কাজ করেছি। আর অপির সঙ্গে তো ‘মায়ার জঞ্জাল’ করলাম। তিনি খুবই উঁচু মানের একজন অভিনেতা। তাঁর সঙ্গে কাজ করে আমি মুগ্ধ। শুধু নিজের কাজ করেই তো একজন অভিনেতার কাজ শেষ হয়ে যায় না, সহ-অভিনেতার জন্যও কিছু দায়িত্ব থেকে যায়। এ সিনেমায় অপি আমার স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। তাঁর চরিত্রের নাম সোমা। সহঅভিনেতা হিসেবে তাঁর কাছ থেকে অনেক হেল্প পেয়েছি। তবে একটা কথা বলতেই হয় কবিদাকে নিয়ে, তিনি ছবিতে আমাদের এমনভাবে ডুবিয়ে রেখেছিলেন যে, আলাদা করে কো-অ্যাক্টর কী করছে, তা বিচার করার সুযোগ খুবই কম ছিল।

 

‘মায়ার জঞ্জাল’-এ ‘চাঁদু’ চরিত্রটি নিয়ে জানতে চাই...

চাঁদু একটা এটিএম বুথের গার্ড। সে আগে একটা প্লাস্টিক কারখানায় চাকরি করত। সেটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সে গার্ড হিসেবে কাজ করা শুরু করে। চাঁদু রাতে মদ খেয়ে এসে এসিতে ঘুমায়। অন্য মানুষের মতো তারও রয়েছে অনেক স্বপ্ন, আশা-আকাক্সক্ষা, কোথাও ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছা। তার এটি ছেলে আছে। তাকে নিয়েও তার অনেক আশা যে, ছেলেটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ুক। টিভি মিডিয়ার প্রতি দুর্বার আকর্ষণের কারণে সে তার ছেলেকে গানও শেখায়। এই যে ছোট ছোট চাওয়া, সেগুলো পূরণ করতে গিয়ে চাঁদু যা করে, সেটাই গল্প।

 

এ দেশের নাটক দেখেছেন? কার অভিনয় ভালো লাগে?

যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়িতে বুস্টার লাগানো ছিল। সে সময় বিটিভির নাটক দেখতাম। তখন হুমায়ুন ফরীদি-সুবর্ণা মুস্তাফাকে দারুণ লাগত। বিপাশা হায়াতকেও ভালো লাগত খুব। এখন তো চঞ্চল ও মোশাররফ করিমদার ভয়ংকর ফ্যান। আরফান নিশোর ভক্তও আমি। আগে তো কিছু ক্লিপ আসত, এখন তো রেগুলার কাজ দেখা যায় বিভিন্ন মাধ্যমে। সো, বাংলাদেশের কাজগুলো দেখা হয়।

 

যৌথ প্রযোজনার বিষয়টি কীভাবে দেখেন?

যৌথ প্রযোজনার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা ভাষাগতভাবে এক তো বটেই, কালচারালিও এক। এ দুই অঞ্চলে প্রচুর গুণী মানুষ ছিলেন ও আছেন, শুধু সিনেমার নয়, পুরো সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেই। এটার একটা আদান-প্রদানের প্রয়োজন আছে। এবং তাতে আমাদের লাভ বই ক্ষতি নেই।

 

এমন কোনো চরিত্র করতে চান, যেটা এখনো করা হয়ে ওঠেনি?

এই যে করতে চাওয়াটা, এটা আমার আগে ছিল। যখন অভিনয় করতাম না। অভিনয় যখন করতে শুরু করেছি, চরিত্র সংক্রান্ত কোনো এক্সপেকটেশন আমি নিজের মধ্যে রাখিনি। রাখিনি বলব না, ওটা আমার নেই। যে চরিত্রটা আসবে, সেটা করব। এই চরিত্রটা করলে ভালো, ওই চরিত্রটা করলে ভালো; এমন করতে গেলে প্রডিউস করতে হয়। অভিনেতা হয়ে থাকলে হয় না।

 

হৃত্বিকের অভিনয় দক্ষতার গোড়ার কথা কী?

আমি ছবি দেখে অভিনয় শিখি না। ছবি দেখি বাকিদের মতোই, বিনোদনের জন্য। কারও অভিনয় দেখে মুগ্ধ হই। কিন্তু সেখান থেকে অভিনয় শিখি না। আমার শিক্ষা জীবন আর মানুষকে পর্যবেক্ষণ করে। তবে তার জন্য চারপাশের জগৎ, জীবন সম্পর্কে জানা আর বিভিন্ন বিষয় আত্মস্থ করে নেওয়ার ক্ষমতা থাকতে হয় বলে আমার মত। তবেই আমি তা পর্দায় প্রতিফলিত করতে পারব।

 

বাস্তবে আপনি কেমন প্রকৃতির?

বাস্তবে আমি হয়তোবা কিছুটা কেয়ারলেসও, একটু স্বাধীনচেতা। বাঁধাধরা নিয়ম মেনে কখনো চলিনি। তবে বর্তমানে বাবা হয়েছি। তাও আট-নয় বছর হয়ে গেল। তাই একটু দায়িত্বশীল হয়েছি। যদিও সব চরিত্রের সঙ্গে আমার বাস্তবে মিল খুবই কম।

 

আর রাজনৈতিক দর্শন...

সাধারণ মানুষের ভালো হওয়া। গরিবের ক্ষতি না হওয়া- খুব সামান্য চাওয়া আমার। রাজনীতি যদি শিল্পীদের কাছে বিকল্প হয়, মানুষের জন্য তা বিপদের।

 

আগেও বাংলাদেশে এসেছিলেন?

থিয়েটার করতে এসেছিলাম ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে। তখন সিনেমায় অভিনয় করতাম না। সেই সময় আমি যে দলে থিয়েটার করতাম, তাদের সঙ্গে এসেছিলাম। তারপর ‘মায়ার জঞ্জাল’-এর শুটিং করতে এসেছিলাম।

 

বাংলাদেশে নিয়মিত কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে কি?

একজন অভিনেতা হিসেবে বলতে পারি আমি তো চাই এ দেশে নিয়মিত কাজ করি। বাংলাদেশের শিল্পীরা তো ওটিটিতে কাজ করছেন। জয়া-চঞ্চল-মোশাররফদা কাজ করছেন। এতে কিন্তু দুই বাংলাই সমৃদ্ধ হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে সিনেমায় অভিনয়ের কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এখনো নানা কারণে হয়ে ওঠেনি। তবে অবশ্যই কাজ করতে চাই।

সর্বশেষ খবর