সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

কানে বিজয়ের হাসি হাসলেন নারী নির্মাতা

কানে বিজয়ের হাসি হাসলেন নারী নির্মাতা

এবার কান চলচ্চিত্রের আসরে বিজয়ের শেষ হাসি হাসলেন একজন নারী নির্মাতা। তিনি ফ্রান্সের জাস্টিন ত্রিয়েত। তিনি নির্মাণ করেছিলেন অ্যানাটমি অব অ্যা ফল ছবিটি। ২০১৯ সালেও স্বর্ণপাম পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন এই নারী নির্মাতা। তখন পুরস্কারটি তাঁর অর্জনের ঝুলিতে অধরা থেকে গেলেও এবার বিজয়ের হাসি হাসলেন তিনি। বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ ৭৬তম কান আসরের পর্দা নামল। শনিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা ৩০ মিনিটে পালে দে ফেস্টিভ্যাল ভবনের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে বসেছিল সমাপনী আয়োজন। ১২ দিনের এ আয়োজন ছিল অনেক ঘটনাবহুল। কোন ছবি অথবা কার মাথায় শোভা পেল সেরার মুকুট! সে সব নিয়ে আয়োজন সাজিয়েছেন - আলাউদ্দীন মাজিদ

আগেই অনুমান করা হয়েছিল, এবার শেষ হাসিটা হাসবেন কোনো এক নারী নির্মাতা। সেটিই সত্যি হলো। ৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি স্বর্ণপাম (পাম দ’র) জিতলেন ফরাসি নারী জাস্টিন ত্রিয়েত। তাঁর পরিচালিত ছবি অ্যানাটমি অব অ্যা ফল পুরস্কারটি পেয়েছে।

শনিবার কান উৎসবের প্রাণকেন্দ্র পালে দে ফেস্টিভ্যালের গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে সমাপনী অনুষ্ঠানে জাস্টিন ত্রিয়েতের হাতে স্বর্ণপাম তুলে দেন আমেরিকান অভিনেত্রী জেন ফন্ডা। এর আগে ২০১৯ সালে স্বর্ণপাম পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছিলেন জাস্টিন ত্রিয়েত। তরুণ নির্মাতা জাস্টিন ত্রিয়েত তাঁর ‘অ্যানাটমি অব অ্যা ফল’ সিনেমায় তুলে ধরেছেন রোমহর্ষক কিছু ঘটনা। ক্রাইম, ড্রামা ও থ্রিলার ঘরানার এ সিনেমার গল্প এগোতে থাকে এক নারীর স্বামীর হত্যাকান্ডের পর থেকে। কিন্তু পরে জানা যায়, ওই নারীই তার স্বামীর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত। এ ঘটনার সাক্ষী নিয়ে শুরু হয় নতুন গল্প। কারণ, তাদের একমাত্র ছেলে সাক্ষী। যে কি না অন্ধ। এ নিয়ে নৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে পড়ে যায় সন্তান। কিন্তু এই খুনের পেছনে লুকিয়ে থাকে আরেক সত্য। সেই ঘটনাই বিচারকদের পছন্দের শীর্ষে ছিল। এবারের আসরে মূল প্রতিযোগিতা বিভাগের জুরি প্রেসিডেন্ট ছিলেন রুবেন অস্টলান্ড। দুইবারের স্বর্ণপাম জয়ী এই সুইডিশ নির্মাতার নেতৃত্বে বিচারক হিসেবে কাজ করেছেন ‘ক্যাপ্টেন মারভেল’ তারকা ব্রি লারসন, আমেরিকান অভিনেতা পল ড্যানো, মরোক্কান পরিচালক মরিয়ম টুজানি, ফরাসি অভিনেতা দঁনি মিনোশেঁ, জাম্বিয়ান-ওয়েলশ পরিচালক-চিত্রনাট্যকার রুঙ্গানো নিয়োনি, আফগান কথাসাহিত্যিক-নাট্যকার আতিক রহিমি, আর্জেন্টাইন পরিচালক দামিয়ান সিফ্রন এবং স্বর্ণপাম জয়ী ফরাসি পরিচালক জুলিয়া দুকুরনো। কানের ইতিহাসে তৃতীয়বারের মতো কোনো নারী এই স্বীকৃতি পেলেন। এর আগে নিউজিল্যান্ডের জেন ক্যাম্পিয়ন (দ্য পিয়ানো) এবং জুলিয়া দুকুরনো (তিতান) স্বর্ণপাম জিতেছেন।

কানের ইতিহাসে নারী নির্মাতাদের মধ্যে জেন ক্যাম্পিয়ন প্রথম স্বর্ণপাম জিতেছেন ১৯৯৩ সালে। এরপর ২৮ বছরের বিরতি দিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ২০২১ সালে তিতান সিনেমার জন্য স্বর্ণপাম জেতেন ফরাসি নির্মাতা জুলিয়া দুকুরনো। এক বছরের ব্যবধানেই তৃতীয় নারী নির্মাতা হিসেবে বাজিমাত করলেন জাস্টিন ত্রিয়েত। এবার কান চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে লড়েছে ২০টি সিনেমা ও একটি তথ্যচিত্র।

এসব সিনেমার মধ্যে একাধিক পরিচালক রয়েছেন, যারা এর আগেও উৎসবের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার স্বর্ণপাম বা পাম দ’র ঘরে তুলেছেন। এ তালিকায় ছিলেন কেন লোচ, নুরি বিলগে জিলান, আকি কাউরিসমাকি, নানি মোরেত্তি, টড হায়েন্সে, হিরোকাজু কোরে এদা, ভিম ভেন্ডার্সসহ খ্যাতিমান নির্মাতারা।

বাংলাদেশ সময় শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর ঘোষণা করা হয় ৭৬তম কান চলচ্চিত্র উৎসবের বিজয়ীদের নাম। প্রধান শাখার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে গ্র্যান্ড প্রিক্স জিতেছে জোনাথন গ্লেজারের সিনেমা ‘দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট’, জুরি প্রাইজ জিতেছে আকি কাউরিসমাকির সিনেমা ‘ফলেন লিভস’, সেরা নির্মাতার পুরস্কার জিতেছেন আঙ হুঙ ট্রান (পট আউ ফেউ)। সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন কোজি ইয়াকসু (পারফেস্ট ডেজস), সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেছেন মেরভি ডিজদার (অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস)। চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন সাকামোটো ইয়ুজি (মনস্টার)।


একনজরে উৎসবে বিজয়ীরা

মূল প্রতিযোগিতা                   

স্বর্ণপাম : অ্যানাটমি অব অ্যা ফল (জাস্টিন ত্রিয়েত, ফ্রান্স)

গ্রাঁ প্রিঁ : দ্য জোন অব ইন্টারেস্ট (জনাথন গ্লেজার, যুক্তরাজ্য)

সেরা পরিচালক : ট্র্যান আন হাং (দ্য পত অঁ ফু, ভিয়েতনাম/ফ্রান্স)

জুরি প্রাইজ : ফলেন লিভস (আকি কাউরিসমাকি, ফিনল্যান্ড)

সেরা অভিনেতা : ফুজি ইয়াকুশো (পারফেক্ট ডেজ, জাপান)

সেরা অভিনেত্রী : মারভে দিজদার (অ্যাবাউট ড্রাই গ্রাসেস, তুরস্ক)

সেরা চিত্রনাট্যকার : ইউজি সাকামাতো (মনস্টার, জাপান)

ক্যামেরা দ’র : থিয়েন আন ফাম (ইনসাইড দ্য ইয়েলো কোকুন শেল, ভিয়েতনাম)

সম্মানসূচক স্বর্ণপাম : মাইকেল ডগলাস, হ্যারিসন ফোর্ড

স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র                     

সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র : টোয়েন্টিসেভেন (ফ্লোরা আন্না বুদা, ফ্রান্স ও হাঙ্গেরি)

স্পেশাল মেনশন (স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি) : ফার (কুন্নুর মার্তিন্সদত্তির স্লুতার, আইসল্যান্ড)

 


আঁ সাঁর্তা রিগা                            

সেরা চলচ্চিত্র : হাউ টু হ্যাভ সেক্স (মলি ম্যানিং ওয়াকার, যুক্তরাজ্য)

জুরি প্রাইজ : হাউন্ডস (কামাল লাজরাক, মরক্কো)

সেরা পরিচালক : আসমা এল মুদির (দ্য মাদার অব অল লাইস, মরক্কো)

সেরা অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীর সম্মিলন : দ্য বুরিটি ফ্লাওয়ার (জোয়াও সালাভিৎসা, পর্তুগাল এবং রেনে নাদের মেসোরা, ব্রাজিল)

ফ্রিডম প্রাইজ : গুডবাই জুলিয়া (মোহাম্মদ কোর্দোফানি, সুদান)

নিউ ভয়েস অ্যাওয়ার্ড : অমেন (বালোজি, বেলজিয়াম/কঙ্গো)

 

লা সিনেফ                                       

প্রথম পুরস্কার : নরওয়েজিয়ান অফস্প্রিং (মারলেয়ানা এমিলিয়া লিংস্তা, ন্যাশনাল ফিল্ম স্কুল অব ডেনমার্ক)

দ্বিতীয় পুরস্কার : হোল (হোয়াং হাইন, কোরিয়ান অ্যাকাডেমি অব ফিল্ম আর্টস)

তৃতীয় পুরস্কার : মুন (জিনেব ওয়াকরিম, ইএসএভি মারাকেশ)

 


জুরি পুরস্কার           

ইকুমেনিকাল : পারফেক্ট ডেজ (ভিম ভেন্ডার্স, জার্মানি)

 

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইক

গ্র্যান্ড প্রাইজ (গ্রাঁ প্রিঁ) : টাইগার স্ট্রাইপস (আমান্ডা নেল ইউ, মালয়েশিয়া)

ফ্রেঞ্চ টাচ জুরি প্রাইজ : ইটস রেইনিং ইন দ্য হাউস (পালোমা সারমন-দাই, বেলজিয়াম)

লাইৎজ সিনে ডিসকভারি প্রাইজ (শর্ট ফিল্ম) : বোলেরো (ন্যঁ ল্যাবোর-দ্যুজুরদা, ফ্রান্স)

লুই রোদ্যুরের ফাউন্ডেশন রাইজিং স্টার অ্যাওয়ার্ড : জোভান গিনিচ (লস্ট কান্ট্রি, সার্বিয়া)

গ্যান ফাউন্ডেশন অ্যাওয়ার্ড ফর ডিস্ট্রিবিউশন : ইনশাল্লাহ অ্যা বয় (আমজাদ আল রশীদ, জর্ডান)

ক্যানাল প্লাস অ্যাওয়ার্ড (শর্ট ফিল্ম) : বোলেরো (ন্যঁ ল্যাবোর-দ্যুজুরদা, ফ্রান্স)

এসএসিডি অ্যাওয়ার্ড : দ্য র‌্যাপচার (ইরিস ক্যালটেনব্যাক, ফ্রান্স)

 

 

ডিরেক্টরস ফোর্টনাইট

সেরা ইউরোপিয়ান সিনেমা : ক্রেয়াতুরা (এলেনা মার্তিন হিমেনো)

সেরা ফরাসি ভাষার সিনেমা এসএসিডি অ্যাওয়ার্ড : অ্যা প্রিন্স (পিয়ের ক্রোঁতো)

 

সেরা শর্টফিল্ম

ক্যারোস দ’র : সুলেমান সিসে।

সর্বশেষ খবর