২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ১৪:১৮

দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে 'পায়রা সেতু' অবদান রাখবে: বিভাগীয় কমিশনার

ভাগ্য বদলেছে স্থানীয়দের

রাহাত খান, বরিশাল

দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে 'পায়রা সেতু' অবদান রাখবে: বিভাগীয় কমিশনার

স্বপ্নের পায়রা সেতু

একটি সেতু পাল্টে দিয়েছে গোটা এলাকার চিত্র। স্বপ্নের সেতু এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়কের ২৬ কিলোমিটার অংশে লেবুখালীর পায়রা নদীর উপর নির্মিত পায়রা সেতুর ভাগ্য বদলেছে স্থানীয়দের।

সড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, এই সেতু উদ্বোধন হলে দেশের সর্বদক্ষিণের কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এছাড়াও বিভাগীয় কমিশনার বলেছেন, পায়রা সেতু চালু হলে দক্ষিণাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ বাড়বে, সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে (জিডিপি) গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা তার। 

বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কে লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীর উপর ১ হাজার একশ’ ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের অন্যতম নান্দনিক ‘পায়রা সেতুর’ মূল অবকাঠামো নির্মাণ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ। আগামী মাসের যেকোন সময় প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে সেতুটি। 

সেতুর দুই পাশের ঢালে গড়ে উঠেছে অসংখ্য দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পায়রা সেতু এবং সংলগ্ন ক্যান্টনমেন্ট ঘিরে শহরের রূপ ধারণ করেছে এক সময়ের অবহেলিত লেবুখালী। আগামীতে ওই এলাকা আরও জমজমাট হবে এমন আশায় সেতুর দুই তীরে জমি কিনছেন অনেকে। নদীর দুই তীরে বহুগুণ বেড়েছে জমির দাম। একটি সেতুর কারণে পাল্টে গেছে স্থানীয়দের জীবনমান, বদলেছে ভাগ্য। পর্যটকদের আনাগোনায় বেচা-কেনা বেড়েছে নদীর দুই তীরে। 

পায়রা সেতু প্রকল্পের উপ-ব্যবস্থাপক কামরুল হাসান বলেন, মূল সেতুর কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের রোড মার্কিং, সড়ক বাতি, ওয়েট ব্রীজ (স্কেল) এবং টোল সিস্টেমের কাজ শেষের দিকে। এগুলোর কাজ শেষ হলেই উদ্বোধন হবে সেতু।    

সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. আবদুল হালিম বলেন, মূল সেতুর ৯৯ ভাগ এবং পুরো প্রকল্পের ৯৩ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী রয়েছে নদী শাসনের কাজ। ফেরীঘাট এলাকায় নদী শাসনের কাজ সম্পন্ন করতে হলে ফেরি চলাচল বন্ধ করতে হবে। সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু না হলে ফেরি বন্ধ করে ফেরিঘাটের নদী শাসনের কাজ করা যাচ্ছে না। সেতু চালুর কিছুদিনের মধ্যেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে তিনি জানান। 

বরিশাল সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উপহারের এই সেতুর কারণে পাল্টে যাচ্ছে দক্ষিণের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্বাধীনতার ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগযোগ চালু হচ্ছে। এটা দেশের সড়ক যোগাযোগে একটি মাইলফলক। 

এই সেতু উদ্বোধনের সব শেষ প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন গতকাল সোমবার বিকেলে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল। এসময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই সেতু শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নই নয়; কর্মসংস্থান ও পর্যটনের বিকাশ এবং দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক বিকাশে (জিডিপি) গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘের অধিবেশন শেষে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে সুবিধাজনক সময়ে এই সেতুর উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় কমিশনার। 

উল্লেখ্য, কুয়েত ফান্ড ফর আরব ইকোনমিক ডেভলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্টের (ওএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই এই সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক্সট্রা ডোজ ক্যাবল স্ট্রেট নকশায় নির্মিত সেতুর দৈর্ঘ্য এক হাজার ৪শ’ ৭০ মিটার এবং প্রস্থ ১৯.৭৬ মিটার। নদীর উভয়প্রান্তে এপ্রোচ সড়ক রয়েছে ১ হাজার দুইশ’ ৬৮ মিটার। চীনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানী লিমিটেড সেতুটি নির্মাণ করে। 


বিডি প্রতিদিন / অন্তরা কবির 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর