৯ আগস্ট, ২০২২ ১২:০৭

নুর আলমের রঙ-তুলিতে রূপসী বাংলার মুখ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

নুর আলমের রঙ-তুলিতে রূপসী বাংলার মুখ

নুর আলমের আঁকা ছবি।

সারি সারি তালগাছ, মাঝ দিয়ে বয়ে গেছে এক উদাস মেঠোপথ। সেই পথেই গরু নিয়ে মাঠে ছুঁটছে রাখাল। পথের ধারে সোনালি ধান, পাশ দিয়েই বয়ে চলেছে ছোট্ট নদী, কুলুকুলু রব তার। নদীতে আপন মনে নৌকা বাইছে মাঝি, কণ্ঠে তার ভাটিয়ালি। আহা কি সুন্দর! নয়নাভিরাম।

কালের আবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এই অপরূপ সৌন্দর্য। ইট-পাথরের সময়ে কেবল বাড়ছে অবক্ষয়, তাই হরমামেশা চোখে পড়ে না খেয়া পারাপারের এমন নান্দনিক দৃশ্য, ধান কাটতে কাস্তে হাতে ব্যস্ত কৃষকের ছবিও অনেকটা ধূসর প্রায়। তবে শিল্পীর চোখে হারায় না কিছু, মগজের নিউরনে খেলা করা এসব দৃশ্যই তিনি নস্টালজিয়া থেকে তুলে এনে বাস্তব করে তোলেন রঙ-তুলিতে, ক্যানভাসের মায়াবী পর্দায়। শিল্পী নুর আলমও তেমন। রঙ-তুলির ছোঁয়ায় ক্যানভাসে তিনি জীবন্ত করে তুলেছেন রূপসী বাংলার মুখ, গ্রাম বাংলার সেই চিরায়ত রূপ।


 
নুর আলম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী। পড়েছেন চারুকলা অনুষদের চিত্রকলা, প্রাচ্যকলা ও ছাপচিত্র বিভাগে। ২০১৫ সালে স্নাতক ও ২০১৬ সালে এই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটে ১ বছর মেয়াদি বিএড কোর্স সম্পন্ন করেন তিনি। তার বাড়ি রংপুর জেলার পীরগাছা উপজেলার নটাবাড়ী গ্রামে। বর্তমানে তিনি মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক (চারুকলা) হিসেবে কর্মরত আছেন।

গ্রাম বাংলার জীবন্ত ছবি আঁকার বিষয়ে কথা হয় শিল্পী নুর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ছোটোবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ ছিল তার। বাবা ও ভাই ছবি আঁকতেন। দু’জনকেই অনুসরণ করতেন তিনি। নতুন বই পেলে আগে দেখতেন সেই বইয়ের ছবি। পড়ার চেয়ে ছবি দেখে বেশি আনন্দ পেতেন। খাতায়, বইয়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় মনের কল্পনা আঁকতেন ছবি। কাঠি দিয়ে মাটির উপরে ছবি আঁকতেন, সেই সঙ্গে বিভিন্ন লেখার ফন্ট আঁকার চেষ্টা করতেন। এমনও সময় গেছে দিনরাত মানুষের প্র্যাকটিক্যাল খাতার ছবি এঁকে। এভাবেই ছবি আঁকার প্রতি দিনের পর দিন আগ্রহ বাড়তে থাকে তার।


 
ছোটোবেলা থেকে চারুকলায় শিক্ষাজীবন পর্যন্ত জলরঙ, তেলরঙ, অ্যাক্রেলিকসহ প্রায় সব মাধ্যমে ছবি এঁকেছেন নুর আলম। তিনি বলেন, ‘‘বর্তমানে ক্যানভাসে অ্যাক্রেলিক রঙে হারিয়ে যাওয়া ‘বাংলার রূপ’ নিয়ে ছবি আঁকছি। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক রূপ বৈচিত্রকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। বর্তমানে শৈশবের সেই খেলার মাঠ, পুকুর-নদীতে সাঁতার কাটার ঘাট, নদী পারাপারের সেই সুখময় ঘাট আর নেই। বলতে গেলে শৈশবে আমরা যে গ্রামীণ সৌন্দর্যের ছোঁয়া পেয়েছি সেটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই পরের প্রজন্মের কাছে বাংলার প্রাচীন রূপের জানান দিতে বাংলার সেই প্রাকৃতিক রূপকে ক্যানভাসে ধরে রাখতে চাই। তাই ছবি আঁকার বিষয়বস্তু বেছে নিয়েছি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। যেখানে থাকবে গ্রাম বাংলার চিরচেনা দৃশ্যগুলো।

নুর আলম আরও বলেন, ‘সবেমাত্র কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি। অনেকগুলো আঁকা ছবি আছে। সেগুলো বাজারজাত করার মতো এখনও ভালো কোনো ব্যবস্থা পাইনি। আমার ছবির দাম নির্ধারিত হয় ছবির সাইজ এবং কোয়ালিটির উপর নির্ভর করে। চাইলে যে কেউ আমাকে দিয়ে কোনো ছবি এঁকে নিতে পারেন। অনলাইনে যে কয়েকটা ছবির অর্ডার পাই সেগুলো দিয়ে রং, তুলি, ক্যানভাস আরো কিছু আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র কিনতেই চলে যায়।’

বাস্তবধর্মী ছবি আঁকতে ভালো লাগে শিল্পী নুর আলমের। তিনি বলেন, ‘আমার বাস্তবধর্মী ছবি আঁকতে ভালো লাগে। কারণ বাস্তবধর্মী ছবি সবাই বুঝতে পারে, অনুভব করতে পারে। আমার বর্তমান পরিকল্পনা হচ্ছে এক হাজার বাস্তবধর্মী পেইন্টিং করবো। আমি চাই সবাই আমার ছবির দর্শক হোক।’

বিডি প্রতিদিন/নাজমুল 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর