শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শিকলে বাঁধা জীবন

শিকলে বাঁধা জীবন

গৃহবধূ মেরিনা বেগম। বছর দেড়েক আগে দিনাজপুরের পার্বতীপুর শহরের নিউ কলোনি এলাকার সেলুন ব্যবসায়ী আলী হোসেনের সঙ্গে বিয়ে হয়। কিন্তু এই গৃহবধূ ঘরের বাইরে যেতে পারেন না। তাকে স্বজনরা শিকলে বেঁধে রেখেছেন। এই শিকলে বেঁধেই চলছে তার জীবন। জানা যায়, পার্বতীপুরের নিউ কলোনি এলাকার সেলুন ব্যবসায়ী আলী হোসেন বছর তিনেক আগে বিয়ে করেন নুরুন নাহার নামের এক মহিলাকে। বিয়ের পর তাদের ঘরে কোনো সন্তান হয়নি। পরে সন্তান হবে না নিশ্চিত হয়ে প্রথম স্ত্রীর অনুমতিতে বছর দেড়েক আগে একই মহল্লার মেরিনাকে (৪৫) বিয়ে করেন আলী হোসেন। কিন্তু বিয়ের পর আলী হোসেন জানতে পারেন মেরিনা মানসিকভাবে অনেকটা ভারসাম্যহীন। এ কারণে মাঝে মধ্যে হঠাৎ করে বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে যান। পরে তাকে খুঁজে বেগ পেতে হতো স্বামী ও সতীন নুরুন নাহারকে। এ অবস্থা থেকে বাঁচতে মেরিনাকে বাড়িতে শিকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে বলে জানান আলী হোসেন। তিনি আরও জানান, মেরিনার বড় ভাইয়ের পরামর্শেই তাকে শেকলে বেঁধে রাখা হচ্ছে।
আলী হোসেন সাংবাদিকদের জানান, সন্তানের আশায় দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে মেরিনাকে বিয়ে করি। কিন্তু মেরিনারও সন্তান হওয়ার সম্ভবনা নেই। সে মানসিক প্রতিবন্ধী। মাঝে মধ্যেই বাড়ি থেকে উধাও হয়ে যায়। তার অভিযোগ মেরিনার ভাই রেল কর্মচারী আল-আমিন বোনের এমন সমস্যা গোপন রেখে তার সঙ্গে বিয়ে দেন। মেরিনা যাতে কোথাও যেতে না পারে সেজন্য তার ভাইয়ের নির্দেশে তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রেখে আমাকে কাজে যেতে হয়। শিকল পরা অবস্থায় মেরিনা যাতে গোসল ও টয়লেটে যেতে পারে সে জন্য লম্বা শিকল লাগানো আছে। রাতে শিকল অবস্থায় তাকে ঘুমাতে হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, তার আর্থিক সঙ্গতি কম। তাই চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেন না। আর মেরিনার ভাইয়ের সামর্থ্য থাকলেও তিনি বোনের চিকিৎসা করান না। এ ব্যাপারে মেরিনার ভাই আল-আমিন বলেন, মেরিনা মানসিকভাবে অসুস্থ। তার মৃগী রোগ আছে। চিকিৎসা করলেও সুস্থ হবে না। বোন যাতে হারিয়ে না যায় এ কারণে তাকে বেঁধে রাখতে বলেছি। তার চিকিৎসার ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোশায়ের উল ইসলাম জানান, সে মানসিক রোগী হলে অবশ্যই তাকে চিকিৎসক দেখাতে হবে। নিজে থেকে কখনই অমানবিক আচরণ করা যাবে না।  মানবাধিকার সংস্থা ব্লাস্ট দিনাজপুর ইউনিটের জেলা সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট সিরাজুম মনিরা জানান, একজন অসুস্থ রোগীকে ওইভাবে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা অমানবিক। তাকে অবশ্যই চিকিৎসা করাতে হবে।

সর্বশেষ খবর