নিউজার্সির ইস্ট রাদারফোর্ডে অবস্থিত মেটলাইফ স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে মহাসমুদ্রের গর্জন। প্রায় ৮২ হাজার দর্শক সাক্ষী হলেন ঐতিহাসিক মুহূর্তের। ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে পিএসজি-চেলসি লড়াই রূপ নিয়েছিল এক মহাযুদ্ধের। পিএসজির কোচ লুইস এনরিকে আর চেলসি কোচ এনজো মারেসকা নিজেদের মতো করে যুদ্ধের কৌশল ঠিক করেছিলেন। দুই ফাইনালিস্টের লড়াইয়ে জয়ী হলেন মারেসকা। তার রণকৌশল ইউরোপ চ্যাম্পিয়ন পিএসজিকে কোণঠাসা করে রাখল। দাবার গুটির চালে পরাস্ত হলো টুর্নামেন্টের ফেবারিট ফরাসি ক্লাবটি। মহাযুদ্ধের মহাক্ষণে দর্শকসারিতে বসে চেলসি সমর্থকরা আনন্দ-উৎসব করলেন। বিপরীতে অশ্রুজলে বুক ভিজিয়ে মাঠ ছাড়লেন পিএসজি সমর্থকরা।
নিউজার্সিতে দিনের তখন ৩টা। সন্ধ্যা হতে তখনো কয়েক ঘণ্টা বাকি। তবে দিনের আলোতেই নানা রঙের ঝিলিক দিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনাল শুরু করল ফিফা। সেই ফাইনালে চেলসি কোনো সুযোগই দিল না পিএসজিকে। কোল পালমার ম্যাচের ২২ ও ৩০ মিনিটে দুটি গোল করে চেলসিকে জয়ের পথে এগিয়ে দেন। ৪৩ মিনিটে হুয়াও পেদ্রোর গোলে ব্যবধান ৩-০ করে লন্ডনের ক্লাবটি। শেষ পর্যন্ত জয়ের ব্যবধানও থাকে ৩-০। গ্যালারিতে ম্যাচের আগে চেলসি সমর্থকরা বিশাল ব্যানারে ‘ফায়ার অব লন্ডন’ লিখে প্রদর্শন করেছিল। ফাইনালে সত্যিই ‘ফায়ার’ হয়ে উঠল চেলসি। সেই আগুনে পুড়ে গেল পিএসজির সব আশা। প্রথমবার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়া হলো না ফরাসি ক্লাবটির। ফাইনালের সব আলো কেড়ে নিল চেলসি। কেড়ে নিলেন কোল পালমার। তিনিই হয়েছেন ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলার।
ফাইনালের মাধ্যমে শেষ হলো ২০২৫ সালের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ। টুর্নামেন্ট শুরুর দিকে বেশ সমালোচনা ছিল। দর্শকদের নানা অভিযোগ ছিল। তবে ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ আয়োজনের যৌক্তিকতা ঠিকই প্রমাণ করল ফিফা। বিশ্বের সেরা ক্লাবগুলোর লড়াই দেখার জন্য অধীর আগ্রহেই অপেক্ষা করেছেন দর্শকরা। তবে ম্যাচের সময় নিয়ে তাদের ছিল নানা অভিযোগ। দিনের আলোতে খেলা হওয়ায় স্টেডিয়ামে যেমন ছিল গরম, তেমনি অফিস টাইম হওয়ায় অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও নিজেদের প্রিয় ম্যাচ দেখতে পারেননি। এসব সীমাবদ্ধতার পরও সাফল্যের গল্প লিখেই শেষ হলো এ টুর্নামেন্ট।
চেলসির এ জয় শুধু একটি ট্রফি জয়ের গল্প নয়, এটি তাদের দলগত প্রচেষ্টা, প্রত্যয় এবং পরিশ্রমের গল্প। আর ফুটবলপ্রেমীদের জন্য এটি ছিল এমন এক রাত, যা বহু বছর ধরে মনে রাখার মতো। গত কয়েক বছরে চেলসির দুরবস্থা ছিল ভয়াবহ রকমের। তবে ইতালিয়ান কোচ এনজো মারেসকার হাত ধরে খাদের গভীর থেকেই যেন উঠে এলো লন্ডনের ক্লাবটি। ক্লাব বিশ্বকাপ শেষ করে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে ফিফা। স্বস্তি পেতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের আয়োজকরাও। সামনের বছরই বিশ্বকাপ। সেই বিশ্বকাপের প্রস্তুতিটা ক্লাব বিশ্বকাপের আড়ালে ভালোভাবেই সেরে নিয়েছে তারা।