আকাশসমান চাপকে অবশেষে কফিনবন্দি করেছেন লিটন কুমার দাস। সাদা বল, রঙিন পোশাকে চেনা ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিলেন টাইগার টি-২০ অধিনায়ক। অবশেষে ছন্দে ফিরেছেন। চাপমুক্ত হয়েছেন। ভার হয়ে যাওয়া লিটনের দুই কাঁধ এখন হালকা, গতিশীল। শুধু টাইগার অধিনায়ক লিটন নন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলও এখন চাপমুক্ত। চাপমুক্ত কোচ ফিল সিমন্স। নতুন করে ২৮ মাসের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়ে জয়হীন ছিলেন ক্যারিবীয় কোচ। ডাম্বুলার রাঙগিরি স্টেডিয়ামে রেকর্ড জয়ে এখন সিরিজ জয়োৎসবের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সিমন্স। শুধু কোচ নন, লিটনসহ অন্যরাও অপেক্ষায় আরও একটি সিরিজ জয়ের। আগামীকাল কলম্বোর রানা প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টি-২০ সিরিজের শেষ ম্যাচ খেলবে লিটন বাহিনী। সিরিজের দুই ম্যাচে দুই দলের হারজিত সমান। পাল্লেকেলেতে ৭ উইকেটে জিতে এগিয়ে গিয়েছিল স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। ডাম্বুলায় ৮৩ রানে জিতে সিরিজে সমতা আনে বাংলাদেশ। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি অলিখিত ফাইনালে রূপ নিয়েছে।
পাল্লেকেলেতে প্রথম ম্যাচে লিটন বাহিনী যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করেছিল। পারভেজ হোসেন ইমনের ৩৮ রানে ভর করে ৫ উইকেটে ১৫৪ রান করেছিল। স্বাগতিকরা ৩ উইকেট হারিয়ে সহজেই জয় তুলে এগিয়ে যায় সিরিজে। কুশল মেন্ডিস ম্যাচ জেতান ৭৩ রানের ইনিংস খেলে। ম্যাচ শেষে আক্ষেপ নিয়ে টাইগার স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ বলেছিলেন, ‘দলের কোনো ব্যাটারকে কুশলের মতো লম্বা ইনিংস খেলতে হবে’। তার কথা হয়তো মনে গেঁথে গিয়েছিল টাইগার অধিনায়ক লিটনের। রাঙগিরিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭ রানে দুই ওপেনারকে হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে লিটন বাহিনী। সেখান থেকে লিটন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে ৫৫ বলে ৬৯ রান যোগ করে সাময়িক বিপর্যয় রোধ করেন। এরপর ৭৪ রানের মধ্যে হৃদয় ও মেহেদি মিরাজকে হারিয়ে ফের কোণঠাসা হয়ে পড়ে। সেখান থেকে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩৯ বলে ৭৭ রান যোগ করে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যান লিটন ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী। লিটন ৫০ বলে ১ চার ও ৫ ছক্কায় ৭৬ রান করেন। ১০৩ টি-২০ ক্যারিয়ারে লিটনের এটা ১২ নম্বর হাফ সেঞ্চুরি এবং অধিনায়ক হিসেবে প্রথম। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে, ১৩ ম্যাচ পর হাফ সেঞ্চুরি করেন লিটন। সর্বেশষ করেছিলেন ২০২৪ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।
৭৬ রান এবং দুটি করে ক্যাচ ও স্ট্যাম্পিংয়ে ম্যাচসেরা হন লিটন। তবে ম্যাচ জেতানোর মোমেন্টামের নায়ক শামীম পাটোয়ারী। প্রথম ম্যাচে ৫ বলে ১৪ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলা শামীম ডাম্বুলায় ছিলেন আগুন। মাত্র ২৭ বলে ৪৮ রান করেন। ওই ইনিংসটিই টাইগারদের সাহস জোগায় জয়ের। শুধু ব্যাটিং নয়, ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত এক থ্রোয়ে রান আউট করেন ছন্দে থাকা কুশলকে। ওটাই ছিল ম্যাচ জয়ের টার্নিং পয়েন্ট। ম্যাচে শেষে সেটাই বলেছেন টাইগার অধিনায়ক লিটন, ‘শামীমের ইনিংস ও রান আউট ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেয়।’ ম্যাচসেরা না হলেও শ্রীলঙ্কার রানের ব্যবধানে সবচেয়ে বড় জয়ে অবদান শামীমের। ম্যাচ শেষে বাঁ হাতি শামীম বলেন, ‘শেষ ম্যাচেও আমাদের সুযোগ থাকবে। সিরিজ এখন ১-১। ভালো খেললে আমরা সিরিজটা জিততেও পারব।’ ভুল বলেননি শামীম।
টেস্টের মতো ওয়ানডে সিরিজেও জয়ের সম্ভাবনা ছিল। গলে প্রথম টেস্ট ড্রয়ের পর কলম্বোতে হেরে যায়। প্রথম ওয়ানডে হেরে যায়। দ্বিতীয়টি জিতে সিরিজে সমতা আনে। সম্ভাবনা দেখা দেয় প্রথমবার শ্রীলঙ্কার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় হেরে যায়। টি-২০ সিরিজে প্রথমটি হেরে দ্বিতীয়টি জেতে ৮৩ রানে। যা শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয়।
আগের জয় ছিল ৪৫ রানে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুবার টি-২০ সিরিজ জিতেছেন টাইগাররা। সর্বশেষ গত বছর ঘরের মাটিতে ২-১ ব্যবধানে। এবারও কি পুনরাবৃত্তি হবে?