পয়মন্ত জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম এখন রেকর্ডের ভেন্যু। এই মাঠে যখনই কোনো টেস্ট হয়েছে, রেকর্ডও সঙ্গী হয়েছে সঙ্গে সঙ্গে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চলমান টেস্টের ফল কি হবে নিশ্চিত নয়, তবে রেকর্ড হয়েছে একের পর এক। কুমারা সাঙ্গাকারা করেছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ট্রিপল সেঞ্চুরি। গড়েছেন কম ইনিংসে ১১ হাজার রানের মাইলফলক। পাশে নাম লিখেছেন দুই লিজেন্ড ব্রায়ান লারা ও সুনীল গাভাস্কারের পাশে। সে অর্থে চট্টগ্রাম টেস্টকে সাঙ্গাকারার টেস্টও বলা যায়। দ্বিতীয় দিনটি ছিল সাঙ্গাকারার। কাল শামসুর রহমান শুভ ও ইমরুল কায়েশ তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। গড়েছেন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রেকর্ড। স্বপ্ন দেখিয়েছেন ম্যাচ বাঁচানোর। ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্টে তিন অংকের ম্যাজিক্যাল ইনিংস খেলে শামসুর নাম লিখেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। দিন শেষে তার ও ইমরুলের জোড়া সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৪০৯ রান তুলেছে টাইগাররা। এড়িয়েছে ফলোঅন। তাতেই শামসুরের মনে হয়েছে কোনোরকম দুর্ঘটনা না হলে টেস্ট শেষ পর্যন্ত ড্রই হবে।
প্রতিপক্ষের ৫৮৭ রানের জবাবে তামিম ইকবালের উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান তুলে দ্বিতীয়দিন পার করেছিল টাইগাররা। গতকাল দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান শামসুর ও ইমরুল ৮৬ রানকে টেনে নিয়ে যান ২৩২ পর্যন্ত। এই রান করার পথে দুজনেই করেছেন সেঞ্চুরি। গড়েছেন রেকর্ড। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আগের রেকর্ড ছিল তামিম ও জুনায়েদের। অসাধারণ খেলতে থাকা দুজনেই বিলিয়েছেন নিজেদের উইকেট। দুজনের কেউ যদি শেষ পর্যন্ত খেলতেন, তাহলে স্কোরবোর্ডের চিত্র হয়তো অন্যরকম। সেটা মেনেও নিজেদের পারফরম্যান্সে সন্তুষ্ট শামসুর, 'আমরা চেষ্টা করেছি আমাদের সেরাটা খেলতে। বড় একটা জুটি (২৩২ রান) হয়েছে আমাদের মধ্যে। আম্পায়ারের একটি বাজে সিদ্ধান্তে দিনটি শেষ পর্যন্ত আমাদের পক্ষে ছিল না। নাসিরের আউটটা ছিল না। সে যদি আউট না হতেন, তাহলে পুরো দিনটি আমরা ভালোভাবে শেষ করতে পারতাম।' দলীয় ৩৯৬ রানে অজন্থা মেন্ডিসের বলে কাট খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষক চন্ডিমলের গ্লাভসবন্দী হন নাসির। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, বল ব্যাটে লাগেনি।
শামসুর ও ইমরুল ২৩২ রান যোগ করেন দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে। দুজনের আউটের পর পঞ্চম উইকেট জুটিতে সাকিব ও নাসির যোগ করেন ৬০ রান। সিরিজে টানা দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করেন সাকিব। ভালো খেলতে থাকা নাসির সাজঘরে ফিরেন আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তে। এই আউটটিকে মেনে নিতে পারেননি শামসুর, 'নাসিরের বলটি ব্যাটে লাগেনি। সাত নম্বর পজিশনে সে আমাদের মূল ক্রিকেটার। টি-২০, ওয়ানডে ও টেস্ট-তিন ঘরানার ক্রিকেটেই সে পারফরমার। একজন পারফরমার যদি বাজে আউটের শিকার হন, তাহলে দল ভোগান্তির শিকার হবেই। আমি বলব নাসিরের আউটে আমরাও তেমন ভোগান্তির শিকার হয়েছি।'
তিন শেষ। পাঁচদিনের টেস্টে সেসন ১৫টি। এর ৯টি শেষ। বাকি আছে ৬টি। তার উপর এখনও শেষ হয়নি দুই দলের প্রথম ইনিংস। এমন সমীকরনে ম্যাচের ভবিষ্যত ড্র ভাবাই স্বাভাবিক। আজ সকালে হাতে দুই উইকেট নিয়ে খেলতে নামবে টাইগাররা। কতটুকু সময় ষেলতে পারে, সেটা ভবিতব্য জানে। ছয় সেসন বাকি থাকার পরও অনেকে ম্যাচের ভবিষ্যত দেখতে পাচ্ছেন। তবে শামসুর দেখছেন ড্র, 'আমি মনে করি কোনোরকম অ্যাঙ্েিডন্ট না হলে টেস্টে ড্র হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী থাকবে। এই উইকেটে নিজে না চাইলে আউট করা কষ্টকর। সবকিছু মিলিয়ে আমি বলবো টেস্ট ড্র হওয়ার সুযোগ রয়েছে। অবশ্য এরজন্য আমাদের ভালো বোলিং করতে হবে। ওদের কম রানের বেঁেধ রাখতে হবে। মোদ্দা কথা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেললে এই টেস্ট ড্র হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী।'
ফতুল্লায় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাজঘরে ফিরেছিলেন ৯৬ রানে। কাল সেঞ্চুরি করেছেন। নব্বইয়ের ঘর থেকে সেঞ্চুরি করতে যেয়ে বাড়তি মনোযোগী ছিলেন তিনি, 'ফতুল্লার কথা আমার মনে ছিল। তবে আমি নার্ভাস হইনি। সেঞ্চুরি হলে কেমন হবে, না হলে কেমন হবে মনে হয়েছিল। কেননা হাফসেঞ্চুরি ও সেঞ্চুরির মধ্যে পার্থক্য ব্যাপক। নব্বইয়ের ঘরে থাকার সময় আমি আমার মনকে শক্ত রেখেছিলাম। তাই সফলও হয়েছি।'