শরীরের অনাবৃত বা উন্মুক্ত অংশের কোনো অঙ্গ বা কলার অস্বাভাবিক প্রসারণ বা অন্ত্রবৃদ্ধিই হলো হার্নিয়া। বেশির ভাগ হার্নিয়ার ক্ষেত্রে পেটের অঙ্গ আবরণীর দুর্বল অংশ দিয়ে অন্ত্রের অংশবিশেষ ঢুকে গিয়ে স্ফীতাকার ধারণ করে এবং সহজেই তা অনুমেয় হয়। এ ছাড়া নাভির চারদিকে, কুঁচকিতে এবং ইতিপূর্বে সার্জারি হয়েছে এমন অংশেও হার্নিয়া দেখা দিতে পারে। জন্মগতভাবে প্রাপ্ত হার্নিয়া, শিশু ভূমিষ্ঠকালে উপস্থিত থাকতে পারে। তবে সাধারণত হার্নিয়ার বহিঃপ্রকাশ ধীরগতিতে, কয়েক মাস এমনকি বছর ধরে হয়ে থাকে। অনেক সময় আবার হঠাৎ করেই হার্নিয়া হতে পারে।
লক্ষণ : হার্নিয়া হলে একই সঙ্গে তা দেখা এবং অনুভব করা যায়। পেটের অঙ্গ আবরণী বা কুঁচকির কোনো অংশ স্ফীত হয়ে তা আপনাকে আগাম নোটিসও দিয়ে থাকে, তবে শুয়ে পড়লে অনেক সময় তা অদৃশ্যও হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া হার্নিয়া হলে মাঝে মাঝে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে।
কার হতে পারে : যে কোনো বয়সের নারী বা পুরুষের হার্নিয়া হতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রে কুঁচকিতে হার্নিয়া বেশি হয়ে থাকে। কুঁচকিতে হার্নিয়া বেশি হওয়ার প্রাথমিক কারণ হলো, অন্ত্রথলি যেখানে শুক্রাশয় জমা হয়, তা নিচের দিকে ঝুলে থাকা। মেয়েদের ক্ষেত্রে সাধারণত উরুর উপরাংশে হার্নিয়া হয়ে থাকে।
পরিত্রাণের উপায় : চিকিৎসা ছাড়া হার্নিয়া ভালো হয় না, যদিও কয়েক মাস বা এক বছরে হার্নিয়া খুব একটা খারাপ অবস্থায় উপনীত হয় না। অত্যন্ত ব্যথাযুক্ত এক ধরনের হার্নিয়া আছে, যা থেকে তুলনামূলকভাবে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যায় এবং তা স্বাস্থ্যের জন্যও আশঙ্কাজনক নয়, একে রিডিউসিবল হার্নিয়া বলে। আর এক ধরনের হার্নিয়া রয়েছে যা হতে পরিত্রাণ পাওয়া অনেকটাই কষ্টসাধ্য। একে ননরিডিউসিবল হার্নিয়া বলে। এ ধরনের হার্নিয়া জীবনের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, বিশেষ করে যখন উন্মুক্ত অংশে অন্ত্রের কোন অংশ আটকে যায় বা রক্ত চলাচলে বাধার সৃষ্টি করে। অনেক সময় এ ধরনের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি সাজার্রির প্রয়োজনও হতে পারে।
করণীয় কি : কর্মতৎপরতা সীমিতকরণ এবং অতিরিক্ত ওজন কমানোর মাধ্যমে সাময়িক স্বাচ্ছন্দ্য পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত বাঁধন বা ট্রাস পরিধানের মাধ্যমেও কিছুটা সাময়িক উপশম লাভ করা যেতে পারে। হার্নিয়া থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় সার্জারি। হার্নিয়া হলে মূলত দুটি কারণে সার্জারি করা উচিত, প্রথমত বিপজ্জনক স্ট্যাংগুলেটেড হার্নিয়া প্রতিরোধ এবং দ্বিতীয়ত ব্যথা নিবৃত্ত করার জন্য, তা না হলে হার্নিয়া আপনার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত করে দিতে পারে। সার্জারিতে ঝুঁকি ও পাশর্্বপ্রতিক্রিয়া থাকে, তার পরেও সার্জিক্যাল সেবাসমূহ অপারেশন পরবর্তী সমস্যাগুলো কমায়।
লেখক : কোঅর্ডিনেটর ও সিনিয়র
কনসালটেন্ট, জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক
সার্জারি বিভাগ, এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।