সদ্য সমাপ্ত হল ফুটবল বিশ্বকাপ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে অনুষ্ঠিত এবারের আয়োজনে ফ্রান্স হারিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিয়েছে আর্জেন্টিনা। দীর্ঘ এক মাস ধরে চলা এই প্রতিযোগিতা উপভোগ করেছে গোটা বিশ্বের মানুষ।
ফুটবল নিয়ে অনেক অজানা তথ্যই জানা হয় এ ধরনের প্রতিযোগিতার সময়। আসুন জেনে নেওয়া যাক আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
লিওনেল মেসি বলেন আর ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো— খেলার সময় কমবেশি সবাই মাঠে থুতু ফেলেন। কিন্তু কেন এমন করেন ফুটবলাররা।
ফুটবলে খোলায়াড়দের থুতু ফেলা খুবই স্বাভাবিক একটি বিষয়। তবে নিজেদের হতাশা প্রকাশ করতে এ রকম করছেন, এটা ভাবা ভুল। আর ফুটবলারদের থুতু ফেলার জন্য রেফারি কোনও শাস্তিও দেন না।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, ফুটবল খেললে বা এ ধরনের শারীরিক কসরত করলে লালারসে প্রোটিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এক ধরনের মিউকাস তৈরি হয়, যাকে বলে এমইউসিবি৫। এর ফলে লালারস আরও ঘন হয়ে যায়।
এই ঘন লালারস গিলে ফেলা কঠিন। আর সে কারণেই ফুটবলাররা থুতু ফেলেন বারবার। এর ফলে তাদের শ্বাস নিতে সহজ হয়।
নাইজিরিয়া জাতীয় দলের প্রাক্তন গোলকিপার জোসেফ ডোসু এর একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখার জন্য বারবার থুতু ফেলেন ফুটবলাররা। টানা দৌড়ানোর সময় একটু তাজা বাতাসের দরকার হয় ফুটবলারদের। তখন তারা থুতু ফেলেন।
এই থুতু ফেলা নিয়ে সব ফুটবলার এক মত নন। ভিন্ন মতও রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, থুতু ফেলে নিজেদের পৌরুষত্ব জাহির করতে চান। অনেকে মনে করেন অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডারের কারণে এই ধরনের আচরণ করেন ফুটবলাররা।
শুধু থুতু ফেলা নয়, অনেক ফুটবলার মুখে পানি বা এনার্জি পানীয় নিয়ে তা কুলকুচি করে ফেলে দেন। একে বলে ‘কার্ব রিনজিং’। এই আচরণেরও একটি বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে।
খেলার মাঝে বারবার এনার্জি পানীয় পান করেন ফুটবলাররা। তারা মনে করেন, এর ফলে মুখে চিনি ও লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। অনেকে মুখে পানি নিয়ে কুলকুচি করে ফেলেন। এর ফলে অদ্ভুত স্বস্তি পান তারা। ভাবেন যে, অতিরিক্ত এনার্জি শরীরে প্রবেশ করেছে, বা শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত হচ্ছে না।
অনেকে মনে করেন, মুখে পানি নিয়ে কুলকুচি করে ফেললে ক্লান্তি দূর হয়। মস্তিষ্কভাবে, শরীর আর ক্লান্ত নয়।
২০১৭ সালে এই বিষয়ে একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেই সমীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্স’-এ। ১২ জন স্বাস্থ্যবান পুরুষের উপর সমীক্ষাটি করা হয়েছিল। তাদের বয়স ছিল ২০ বছরের আশপাশে।
সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, পানি মুখে নিয়ে কুলকুচি করে ফেলার পর তারা আরও জোরে জোরে লাফাতে সক্ষম হয়েছেন। আরও বেশি স্কোয়াটি দিতে পেরেছেন। আরও জোরে দৌড়াতে পেরেছেন।
যদিও ২০১৭ সালেই ‘জার্নাল অব স্পোর্টস সায়েন্সেস’-এ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করা হয়েছিল। তাতে দেখা গিয়েছিল, মুখে পানি নিয়ে কুলকুচি করলে অর্থাৎ ‘কার্ব রিনজিং’ করলে এনার্জি বাড়ে বা কমে না। প্রায় একই থাকে।
ফুটবলে থুতু ফেলা একেবারেই কোনও অপরাধ নয়। একই সঙ্গে ক্রিকেট ও রাগবি খেলায় মাঠে থুতু ফেলা অপরাধ নয়। তবে অনেক খেলার ক্ষেত্রে এই থুতু ফেলাকে ‘অপরাধ’ হিসেবে দেখা হয়। অন্যদলের খেলোয়াড়ের উদ্দেশে থুতু ফেললে রেফারি লাল কার্ড দেখিয়ে থাকেন। এই আচরণকে অসম্মান হিসেবে দেখা হয়। টেনিস এবং বাস্কেটবলের ক্ষেত্রে মাঠে এই আচরণ অপরাধের শামিল। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, দ্য সান, সায়েন্স ফোকাস, ফার্স্টপোস্ট
বিডি প্রতিদিন/কালাম