বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আচার্য (রাষ্ট্রপতি) এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। টানা আন্দোলনের ৬ষ্ঠ দিনে সোমবার দুপুর ১টার দিকে বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের মাধ্যমে এই স্মারকলিপি দেন তারা।
স্মারকলিপিতে উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য সোমবার দুপুর ১টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেয়ার হুশিয়ারি দেন আন্দোলনকারীরা।
রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রেরিত স্মারকলিপিতে উপাচার্যের বিরুদ্ধে ২৫টি গুরুতর অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়। জেলা প্রশাসক শিক্ষার্থীদের দেওয়া স্মারকলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে সুষ্ঠু সমাধানের কথা জানান।
গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত না দেওয়ার প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের কটাক্ষ করার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের বিরুদ্ধে। এর জের ধরে উপাচার্যের ওই মন্তব্য প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবিতে গত ২৭ মার্চ থেকে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের মুখে ২৭ মার্চ রাতে উপাচার্য একক ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ এবং ওইদিন বিকেল ৫টার মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা ২৮ মার্চ উপাচার্যের ওই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে হলে অবস্থান নিয়ে তার (উপাচার্য) পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে উপাচার্য ২৯ মার্চ গণমাধ্যমে প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার বক্তব্যের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন। কিন্তু শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশের বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। গত কয়েক দিনে তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে তার (উপাচার্য) কুশপুত্তলিকা দাহ, মশাল মিছিল, প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শহীদ মিনারে অবস্থান এবং মুখে কালো কাপড় বেঁধে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিল সহকারে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সড়কে অবস্থান নেন। তারা সড়ক অবরোধ করে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে শ্লোগান দেন। উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন তারা।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক তার কার্যালয়ের নীচে নেমে আসেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেন।
জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান শিক্ষার্থীদের স্মারকলিপি যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং একই সাথে আন্দোলনের নামে কোনো ধরনের অরাজকতা কিংবা সহিংসতা না করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।
এদিকে, স্মারকলিপি দেওয়ার পর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে এক সংক্ষিপ্ত প্রেস ব্রিফিংয়ে আন্দোলনকারীদের অন্যতম নেতা গণিত বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন আহমেদ শিফাত বলেন, উপাচার্যকে পদত্যাগের জন্য স্মারকলিপিতে ৪৮ ঘণ্টার সময় বেধে দেওয়া হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম