দীর্ঘ ১১ দিনের অচলাবস্থার পর বিভাগীয় প্রশাসনের উদ্যোগে সমঝোতা সভায় রবিবার থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও ক্লাশ কিংবা পরীক্ষায় অংশ নেননি শিক্ষার্থীরা।
গত শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে রবিবার থেকে সকল আবাসিক হল ও ডাইনিং চালু করার পাশাপাশি ক্যাম্পাসের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘোষণা দেন। তবে তা শুধু নোটিশেই সিমাবদ্ধ। আজ ১২তম দিনেও শিক্ষার্থীরা সকল প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে থেমে থেমে বিক্ষোভ এবং প্রতিবাদী গান পরিবেশন করেন। কাগজে-কলমে ক্যাম্পাস খুললেও বিভিন্ন গেটে তালা ঝুলানো থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীরা অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাড়ি ফিরে যান।
এর আগে আন্দোলনের ১১তম দিনে গত শনিবার বরিশাল সার্কিট হাউজে শিক্ষার্থীদের সাথে ৪ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন সদর আসনের এমপি পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহসহ প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, সুশীল সমাজ নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষকদের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হককে আর বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব পালন না করতে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মাধমে উপাচার্যকে ছুটি দিয়ে কিংবা পদত্যাগ করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছিলেন সদর আসনের এমপি জাহিদ ফারুক শামীম।
বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওইদিন রাতেই রবিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আবাসিক হল ও শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর নোটিশ জারী করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. হাসিনুর রহমান।
কিন্তু ওইদিন সন্ধ্যায় বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ কিংবা তাকে ছুটিতে পাঠানোর প্রমাণপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রবিবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে সকল প্রশাসনিক এবং একাডেমিক ভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করে। তারা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে নানা শ্লোগান দেয়। ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশন করেন তারা। পড়াশোনায় ক্ষতি হলেও উপাচার্যের পতদ্যাগ কিংবা ছুটির লিখিত প্রমাণপত্র হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নেতা রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের
ছাত্র শফিকুল ইসলাম।
আন্দোলনের ফলে সেশন জটের আশংকা নাকচ করে দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্ধারিত সময়ে কেউ তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শেষ করতে পারেনি। এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ে মেশন জট তৈরী হয়েছে। এ অবস্থায় আন্দোলনের কারণে ১০-১৫ দিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকলে তেমন কোন ক্ষতি হবেনা দাবি শিক্ষার্থীদের নেতা শফিকুল ইসলামের।
এদিকে ক্যাম্পাস খোলার নোটিশ জারী করায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক এবংকর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ সকালে অফিসে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের বাঁধা দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ফটকগুলোতে তালা ঝুলানো থাকায় তারা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও অফিসে প্রবেশ করতে না পেরে গন্তব্যে ফিরে যান। শফিকুল এই মন্তব্য করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শেষ বর্ষের শিক্ষার্থীরা তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তার কথা জানিয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের চেয়ারম্যান হেনা রানী বিশ্বাস বলেন, শনিবার রাতে রেজিস্ট্রারের নোটিশ পেয়ে আজ ক্যাম্পাসে যান। কিন্তু একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনগুলোর ফটকে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষার্থীরা সেখানে অবস্থান না নেয়ায় তারা অফিসে প্রবেশ করতে পারেননি। শিক্ষার্থী ছাড়া শিক্ষকরা ক্লাশ করতে পারবেন না জানিয়ে শুধুমাত্র অফিসে বসার সুযোগ চেয়েছিলেন তিনি সহ অন্যান্য শিক্ষকরা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কোন কথাই শুনছেন না, কে বোঝাবে তাদের-প্রশ্ন রাখেন হেনা রানী বিশ্বাস। অফিসে ঢুকতে না পেরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর তিনি সহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাস ত্যাগ করেন বলে তিনি জানান।
কাগুজে ঘোষণা থাকলেও আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা এবং প্রশাসনিক কোন কার্যক্রমই শুরু হয়নি বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সুব্রত কুমার দাস।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন