১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১৭:৫৬

দেশের অগ্রগতির স্বার্থে শ্রমিক-মালিকপক্ষের সু সম্পর্কের প্রয়োজন

অ্যাডভোকেট শেখ সালাহ্উদ্দিন আহমেদ

দেশের অগ্রগতির স্বার্থে শ্রমিক-মালিকপক্ষের সু সম্পর্কের প্রয়োজন

মহান মে দিবস শ্রমিকের মর্যাদা রক্ষা ও ন্যায্য পাওনা আদায় তথা অধিকার আদায়ের দিন। যুগে যুগে দেশে দেশে সমাজে খেটে-খাওয়া শ্রমিক শ্রেণি ও মেহনতি মানুষ দেশ-জাতির উন্নয়নে যথেষ্ট অবদান রেখেছে, অথচ অবলীলায় তাদের জীবন চলে গেছে। যে কোনো দেশের উৎপাদন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধিতে শ্রমিকরাই বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে। 
নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ও বঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছে বছরের পর বছর। তারা সংগ্রাম করে চলেছে বুকের তাজা রক্ত দিয়ে নিজেদের দাবি আদায়ের নিমিত্তে। যে কোনো পেশাজীবী মানুষের ন্যায়সঙ্গত দাবি আদায়ে কোনো রক্তপাত যে বৃথা যায় না, ইতিহাসে তার অনেক প্রমাণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় প্রমাণ এই মহান মে দিবস। 

১৮৮৬ সালের ১ মে-র এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অগণিত শ্রমজীবী মানুষ শ্রমিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন আন্দোলন। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার ৫৬২টি শিল্প-কারখানাসহ সব শিল্পাঞ্চলে আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দেন শ্রমিকরা। শিকাগো শহরের 'হে' মার্কেটে রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভের সমুদ্রে। শহরের তিন লক্ষাধিক শ্রমিক কাজ বন্ধ রেখে লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। এ সময় আন্দোলনরত ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর বিনা উস্কানিতে নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গুলিতে ওই দিনই নিহত হন ১০ জন শ্রমিক। আহত হন হাজার হাজার। তবু অব্যাহত থাকে ধর্মঘট ও আন্দোলন। তাই এই মহান মে দিবস হচ্ছে পৃথিবীর শ্রমজীবী মানুষের বিজয় নিশান। এই কারণে মে দিবস বিশ্বের শ্রমজীবী মানুষের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। 

শ্রমের মর্যাদা রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করে এ পর্যন্ত রক্ত দিয়েছে পৃথিবীর লাখ লাখ মানুষ। তাই দিনটি শ্রমিক শ্রেণির কাছে ত্যাগের দিন। নিজেদের জীবন দিয়ে তারা তাদের দাবি আদায় করেছে। তবুও শোষকদের কাছে তারা মাথানত করেনি। 

মে দিবস বিশ্বজুড়ে সমাজবাদী চেতনারও বিকাশ ঘটায়। পুঁজিবাদের মানবিক বিকাশেও মে দিবসের অবদান অনস্বীকার্য। শ্রমিকদের ঠকিয়ে কিংবা তাদের ওপর নিপীড়ন চালিয়ে পুঁজির সুষ্ঠু বিকাশ যে সম্ভব নয় তা এখন ধনবাদীরাও স্বীকার করেন। নারীমুক্তির ক্ষেত্রেও মে দিবসের চেতনা অনন্য ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে পুঁজির দ্রুত বিকাশ ঘটছে। পোশাকশিল্পে স্পুটনিক গতিতে এগিয়েছে আমাদের দেশ। এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েছে ৪০ লাখ শ্রমিকের ভাগ্য; যার অধিকাংশই নারী। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরেকটি প্রধান খাত প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স; যার সিংহভাগই বিদেশ-বিভুঁইয়ে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন। দেশের অর্থনীতির বিকাশে যারা অনন্য অবদান রাখছেন তাদের মর্যাদা দিতে হবে। কারণ দেশের অগ্রগতির স্বার্থে উৎপাদন ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সুষ্ঠু সম্পর্কের প্রয়োজন। এ সুষ্ঠু সম্পর্কের মধ্যেই শিল্পব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার স্বার্থ নিহিত।

লেখক: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ও প্রেসিডেন্ট, সাউথ এশিয়ান ল’ইয়ার্স ফোরাম।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর