বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাটসম্যানদের বড় চ্যালেঞ্জ

মেজবাহ্-উল-হক

ব্যাটসম্যানদের বড় চ্যালেঞ্জ

নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল পা রেখেছিল সবুজ ঘাসের উইকেটের শঙ্কা মাথায় নিয়ে। শেষ পর্যন্ত সেই ভয়টা ব্যাটসম্যানদের তাড়িয়ে বেড়ালেও সবুজ ঘাসের উইকেটের দেখা পাওয়া যায়নি। নিউজিল্যান্ড তাদের কৌশল পরিবর্তন করে ‘স্পোর্টিং উইকেট’ বানিয়েই টাইগারদের কুপোকাত করে দিয়েছে।

ভারতে কিন্তু সেই ভয়টা থাকছে না। সবুজ ঘাসের উইকেট বানানোর প্রশ্নই ওঠে না! ভারতীয়দের ভাবনা এমন— উইকেট যত ‘তক্তা মার্কা’ বানানো যায় ততই ভালো। আর উইকেটে যদি টার্ন রাখা যায় তাহলে আরও ভালো ভারতীয়দের জন্য। কোহলি-পুজারারা ব্যাটিংয়ে রানের পাহাড় গড়বেন, আর অশ্বিন-জাদেজারা ঘূর্ণি জাদু দেখিয়ে টপাটপ উইকেট তুলে নেবেন।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের ম্যাচগুলো দেখলেই তাদের উইকেট সম্পর্কে ধারণা পাওয়া কঠিন কিছু নয়। উইকেটগুলোকে পেসারদের মৃত্যুকূপ বানিয়ে রেখেছিল ভারত। ব্যাটসম্যানদের জন্য ছিল স্বর্গ! বাংলাদেশের বিরুদ্ধে একমাত্র টেস্টেও এমন উইকেট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ভারতের উইকেটে পেসারদের জন্য তেমন সুবিধা থাকে না। অনেক সময়ও স্পিনাররাও খেই হারিয়ে ফেলেন। তাই প্রধান কাজটা করতে হয় ব্যাটসম্যানদের। ভারতের উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হলেও সেখানে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয় ব্যাটসম্যানকেই। কেননা ব্যাটসম্যানদের ওপরই নির্ভর করে ম্যাচের ভাগ্য।

বাংলাদেশের অনেক ব্যাটসম্যানই আছেন যাদের ভাবনাটা এমন— যেন একটি হাফ সেঞ্চুরি করলেই তার দায়িত্ব শেষ। তারপর উইকেট বিলিয়ে দিয়ে ড্রেসিংরুমে ফেরেন। এমন রিল্যাক্স ভাব থাকলে ভারত সফরে বিপদে পড়তে হতে পারে দলকে।

নিউজিল্যান্ড সফরে কেবল মাত্র ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসটা বাদ দিলে ব্যাটিং নিয়ে বলার মতো তেমন কিছু খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে ব্যাটিংয়ের এই দুর্বলতা যে এই সফরেই শুরু হয়েছে তা নয়। অনেক দিন থেকেই বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো।

ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী নেই। ইমরুল কায়েসের পারফরম্যান্সের গ্রাফটা দ্রুত উঠা নামা করছে। এক ম্যাচে ভালো করেন তো আরেক ম্যাচে নেই। তবে আশার কথা হচ্ছে, নিউজিল্যান্ড সিরিজের শেষের দিকে ভালো করেছেন সৌম্য সরকার। বেশ স্বাচ্ছন্দেই ব্যাটিং করেছেন। সেই আগ্রাসী খুনে মেজাজের সৌম্যকেই দেখা গেছে। বরং তামিম ইকবালকেই কিছুটা অধৈর্য মনে হয়েছে।

ওয়ান ডাউনে মুমিনুল হকই সেরা। তবে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে শেষ টেস্টে তিনি খেলতে পারেননি পাঁজরের ইনজুরির কারণে। ভারত সফরের আগে তিনি পুরোপুরি ফিট হতে পারবেন কিনা সেটাই এখন শঙ্কা। যদিও গতকাল মুমিনুলকে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হয়েছে। বিসিবির চিকিৎসক দেবাশিষ চৌধুরীকে দেখানোর পর তিনি মিডিয়াকে বলেছেন, ‘এখন আগের চেয়ে ব্যথা কিছুটা কম। আশা করি, ঠিক হয়ে যাব। যাওয়ার আগে ফিটনেস টেস্ট দেব, যদি পাস করি তাহলে ভারতে যাব। যদি যেতে পারি চেষ্টা করব বড় ইনিংস খেলতে। নিউজিল্যান্ড সফরে যা পারিনি চেষ্টা করব ভারত সফরে সেসব করে দেখাতে।’

বাংলাদেশের ক্ল্যাসিক ব্যাটসম্যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ সুবিধা করতে পারেননি নিউজিল্যান্ডে। দুই টেস্টের চার ইনিংসে তার স্কোর— ২৬, ৫, ১৯, ৩৮। কোনো হাফ সেঞ্চুরি নেই। তবে ভারত সফরের আগে একটা দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে।

নিউজিল্যান্ডে ব্যাটিংয়ে সবচেয়ে উজ্জ্বল ছিলেন সাকিব আল হাসান। তার ২১৭ রানেই ইনিংসটি এখন টেস্টের বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের স্কোর। দ্বিতীয় টেস্টেও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাকিব। কিন্তু তার আউট হওয়ার ধরন ছিল দৃষ্টিকটূ। তবে ভারত সফরে বাংলাদেশের প্রধান ভরসা তিনি। ভারতের মাটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার তিনি। ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি তার বোলিংও টাইগারদের প্রধান অস্ত্র। তাই সাকিব যদি ভালো করেন তবে বাংলাদেশকে হারানো কঠিন। তবে সেক্ষেত্রে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে আর একটু দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় স্বস্তির খবর হচ্ছে রানে ফিরেছেন ‘ব্যাটিং নিউক্লিয়াস’ নামে খ্যাত মুশফিকুর রহমান। তবে তার ইনজুরি একটা শঙ্কা! কিন্তু ভারত সফরের আগে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন টাইগার দলপতি। নিউজিল্যান্ডের ইনজুরি নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। প্রথম ওয়ানডে খেলার পর হ্যামস্ট্রিংয়ের ইনজুরির কারণে ওয়ানডে সিরিজের পরের দুই ম্যাচে এবং টি-২০ সিরিজ খেলতে পারেননি। আর টেস্টের সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম ইনিংসে মাঠে নেমেই সাকিবের সঙ্গে ৩৫৯ রানের সেই মহাকাব্যিক জুটি গড়েন। নিজেও খেলেন ১৫৯ রানের এক ইনিংস। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে কিউই পেসার টিম সাউদির মাথায় আঘাত পেয়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল তাকে। মুশফিক দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি, বাংলাদেশও সহজ ম্যাচে হেরে যায়। ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে তো তিনি দলেই ছিলেন না। দলও বাজেভাবে হেরেছে।

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের দুই ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন সাব্বির রহমান। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে সুবিধা করতে পারেননি। তারপরেও ব্যাটিং অর্ডারের সাত নম্বরে সাব্বিরের চেয়ে ভালো অপসন আর নেই। কেননা দলের প্রয়োজন অনুযায়ী দীর্ঘ সময় উইকেটে থাকার অভ্যাসও আছে তার, আর দ্রুত রান তোলাতেও ওস্তাদ তিনি। তবে টেস্টের মেজাজটা এখনো ঠিকভাবে আত্মস্থ করতে পারেননি। তাই ধৈর্যহারা হয়ে বাজে শটও খেলে ফেলেন।

নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশ যে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে তার দায়ভার অনেকটা ব্যাটসম্যানদের ওপরই বর্তায়। ব্যাটিং সহায়ক উইকেট পেয়েও তারা সুবিধা করতে পারেননি। ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি। কিন্তু ভারতের মাটিতে ভালো করতে হলে ব্যাটসম্যানদের ধারাবাহিকতার বিকল্প নেই। তাই ব্যাটিং উইকেটের কথা চিন্তা করে ব্যাটসম্যানদের আত্মতুষ্টিতে ভোগার কিছু নেই, বরং তাদের জন্য আরও বড় পরীক্ষা অপেক্ষা করছে।

সর্বশেষ খবর