বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

কোথায় হারাল সেই উন্মাদনা

আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

কোথায় হারাল সেই উন্মাদনা

যে ম্যাচ নিয়ে গর্ব করা যেত। সেই ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডানের ম্যাচে গ্যালারির দৃশ্য দেখলে হতাশায় চোখে পানি চলে আসে। গতকাল পেশাদার ফুটবল লিগে দ্বিতীয় পর্বে দুই দল মুখোমুখি হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে সানডের ২ গোলে জিতে শিরোপার সম্ভাবনা বাঁচিয়ে রেখেছে ঢাকা আবাহনী। চট্টগ্রাম আবাহনী কাল টিম বিজেএমসিকে হারিয়ে ৩৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থান ধরে রেখেছে। ১৪ ম্যাচে ঢাকা আবাহনীর সংগ্রহ এখন ৩০। এক ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট সংগ্রহ করলেও গোল পার্থক্যে শেখ জামাল দ্বিতীয় অবস্থানেই আছে। কত স্মৃতিই না লুকিয়ে আছে দুই দলের ম্যাচে। জার্সি নম্বর দেখে এখন খেলোয়াড় চিনতে হয়। অথচ এক সময় আবাহনীর কাজী সালাউদ্দিন, অমলেশ সেন, আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু, গোলাম রব্বানী হেলালদের নাম কোটি কোটি সমর্থকদের মুখস্থ ছিল। একইভাবে মোহামেডানের বাদল রায়, সালাম মুর্শেদী, আবুল, রামাদের নামও সমর্থকদের মনে গেঁথে ছিল। পরবর্তীতে শেখ মো. আসলাম, মোনেম মুন্না, কায়সার হামিদ ও সাব্বিররা তারকারখ্যাতি পান। আশির দশক পর্যন্ত যারা দুই দলে খেলেছেন তাদের অবদান কখনো ভুলবার নয়।

গতকাল যখন আবাহনী-মোহামেডান লড়ছিল তখন চোখের সামনে ভেসে উঠছিল হাসি-বেদনার কত স্মৃতি। পৃথিবীর আর কোথাও না হলেও জেল খাটতে হয়েছিল চার ফুটবলার সালাউদ্দিন, চুন্নু, হেলাল ও আনোয়ারকে। ১৯৮২ সালে সুপার লিগের ম্যাচ। মোহামেডানের শিরোপা আগেই নিশ্চিত হয়ে যায়। আবাহনী সেই ম্যাচে জিতলেও সাদা-কালোদের সমস্যা হতো না। প্রথমার্ধে কোহিনুরের গোলে এগিয়ে থাকে মোহামেডান। দ্বিতীয়ার্ধে মোহামেডানের গোলরক্ষক মহসিন দৃঢ়তার সঙ্গে আবাহনীর একটি নিশ্চিত গোল রক্ষা করেন। তবে আবাহনীর ফুটবলারদের দাবি ছিল মহসিন সেভ করার আগেই বল টাচলাইন ক্রস করে। রেফারি মুনীর হোসেন তার সিদ্ধান্তে অটল থাকলে আবাহনী প্রতিবাদ জানাতে থাকে। এ অবস্থায় দর্শকদের মধ্যে হট্টগোল বেধে গেলে ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়। মাঠে খেলোয়াড়রা রেফারির সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানাতেই পারে। এজন্য শাস্তিও হতে পারে। কিন্তু জেলে পাঠানো ভাবাই যায় না। চার ফুটবলারকে অবশ্য বেশিদিন জেলে রাখা যায়নি। সারা দেশ ক্ষোভে ফেটে পড়লে তাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

১৯৮২ সালের মাঠের সেই ঘটনা বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে কালো রাত বলে চিহ্নিত হয়ে আছে। ১৯৮৬ সালে আরেক ঘটনা, যে ম্যাচে ড্র করলে আবাহনী টানা চতুর্থবার চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাবে সেই ম্যাচ জিতেছিল মোহামেডান মনু ও ইলিয়াসের গোলে। বিশেষ করে মনুর সেই ম্যাজিক গোল এখনো চোখে ভাসে। গতকাল প্রথমার্ধের ইনজুরি ও ৭২ মিনিটে সানডের গোলে আবাহনী জয় পেয়েছে। এই জয়ে লিগ জয়ের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রেখেছে তারা। কিন্তু গ্যালারিতে বাধভাঙা সেই উল্লাস কি চোখে পড়েছে।

মোহামেডানের হারে তাদের সমর্থকরা কি কেঁদেছেন? একবার চিন্তা করুন ৭০ বা ৮০ দশকে মোহামেডান বা আবাহনী জিতলে কি উৎসবটাই না হতো। এখন হবেই বা কিভাবে? গ্যালারিতে দর্শক হাতে গোনা যায়। কালের বিবর্তনে দুই দলের ম্যাচের কি অসহায় চেহারা। আর কি কখনো উন্মাদনা জাগবে না দুই দলের ম্যাচকে ঘিরে? অনেকে বলেন, ফুটবলের বেহাল দশার পেছনে এটাই বড় একটা কারণ। যেদিন মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচে উত্তেজনা ফিরবে সেদিনই দেশের ফুটবলও জেগে উঠবে।

সর্বশেষ খবর