তামিম ইকবাল ০, মাহমুদুল হাসান জয় ০, নাজমুল হাসান শান্ত ৮, মুমিনুল হক ৯, সাকিব আল হাসান ০!
দলীয় ২৪ রানে ৫ উইকেট। ৪৫০ ওভারের খেলা টেস্টে প্রথম দিনে ৭ ওভারেই নেই বাংলাদেশের সেরা সেরা পাঁচ ব্যাটসম্যান। রীতিমতো ধ্বংস্তূপে বাংলাদেশের ইনিংস।
চট্টগ্রাম টেস্টে টসে হেরে পরে ব্যাট করতে নেমে অনেকটা সংগ্রাম করতে হয়েছিল ব্যাটারদের। এই মিরপুরে টস জয়ের পর ব্যাটিং নিতে মুহূর্তের জন্যও ভাবতে হয়নি মুমিনুল হককে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা বাইশগজে যাওয়ার পরই যে এমন ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়বে তা কে ভেবেছিলেন!
২৪ রানে ৫ উইকেট নেই, এমন পরিস্থিতিতে দলের রান কত হতে পারে? ক্রিকেটের চরম পরম আশাবাদী সমর্থকের জন্যও বাংলাদেশের স্কোরলাইনকে তিন অঙ্কের ভাবাটা কঠিন হয়ে যাচ্ছিল।
কিন্তু দিনের শুরুর এমন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির পরও শেষ বিকালে মুখে হাসি নিয়ে হোটেলে ফিরেছে বাংলাদেশ।
২৪/৫ এই স্কোর লাইনটা দিন শেষে ২৭৭/৫! কোনো উইকেট পড়েনি কিন্তু দলীয় খাতায় যোগ হয়েছে বাড়তি ২৫৩ রান। দুই ব্যাটসম্যানদের দুই অপরাজিত সেঞ্চুরি। লিটন কুমার দাস ব্যাট করছেন ১৩৫ রানে, মুশফিক অপরাজিত রয়েছেন ১১৫ রানে।
চট্টগ্রাম টেস্টের মতো ঢাকাতেও দাপট দেখালেন বাংলাদেশ দলের নির্ভরতার প্রতীক এই দুই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
বন্দরনগরীতে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেও মাত্র ১২ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন লিটন। কিন্তু ঢাকায় তাকে আর আক্ষেপের আগুনে পুড়তে হয়নি। বরং তার ব্যাটের আগুনে পুড়েছেন লঙ্কান বোলারদের। বাংলাদেশের রানের গড় ওভারপ্রতি তিনের উপরে। লিটনের স্টাইকরেট ষাটের ওপরে। বোঝাই যাচ্ছে অনেকটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করেছেন তিনি। তার ২২১ বলের ইনিংসে ছিল ১৬টি বাউন্ডারির সঙ্গে একটি দুর্দান্ত ছক্কার মার। টেস্টে লিটনের তৃতীয় শতক। এটাই ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।
মুশফিকুর রহিম আগের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছেন। ঢাকাতেও প্রথম ইনিংসেই শতক হাঁকালেন। দুই ম্যচে দুই সেঞ্চুরি হয়ে গেল। অনেক দিন রান খরায় ভুগছিলেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। অবশেষে দারুণ ছন্দে ফিরেছেন। তবে আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি ধৈর্যশীল মুশফিক। গতকাল ১১৫ রানের ইনিংস খেলতে মোকাবিলা করেছেন ২৫২ বল। বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ১৩টি।
মুশফিক-লিটন দুজনের সামনেই আজ বড় সুযোগ ইনিংসকে বাড়িয়ে নেওয়ার।
ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনে প্রথম ৭ ওভার বাদ দিলে বাকি ৭৮ ওভার পাত্তাই পায়নি সফরকারী লঙ্কান বোলাররা। সফরকারীদের কড়া শাসন করেছেন মুশফিক-লিটন। লঙ্কান বোলারদের জন্য দিনটি চরম হতাশারও, কেননা শুরুতেই ৫ উইকেট নেওয়ার পর পুরো দিনে তারা আর পাত্তাই পেলেন না।
গতকাল ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে নতুন রেকর্ড হয়েছে। এর আগের ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চ রান ছিল ১৯১। ওই জুটিতে মুশফিকের সঙ্গী ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। প্রতিপক্ষ ছিল এই শ্রীলঙ্কাই। সেটা আবার লঙ্কানদের ঘরের মাঠে, ২০০৭ সালে। ১৫ বছর পর তৈরি হলো নতুন রেকর্ড। সব মিলে টেস্টের ইতিহাসে বাংলাদেশের পঞ্চম সর্বোচ্চ রানের জুটি।
তবে একটা দিক দিয়ে বোধহয় এই জুটিই সেরা, যেভাবে টপঅর্ডার এমনকি মিডল অর্ডারে ধস নামার পর দুই ক্রিকেটার ঘুরে দাঁড়িয়ে দাপট দেখিয়েছেন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য-অভাবনীয়-অবিস্মরণীয়।
অবশ্য অনেকে বলতে পারেন, টেস্ট ক্রিকেট তো এমনই - অনিশ্চয়তায় ভরা। এমন প্রত্যাবর্তনের গল্প আর কয়টা আছে! ৫০ রানের নিচে ৫ উইকেট পতনের পর এমন বড় জুটি বিশ্ব ক্রিকেটেই আর নেই। তাই লিটন-মুশফিকের জুটিতে একটি বিশ্বরেকর্ডই হয়েছে। টেস্টের প্রত্যাবর্তনের গল্পে যোগ হয়েছে তাদের নাম।
লাল বলের ক্রিকেটে সাফল্যের চাবিকাঠি হচ্ছে স্কিলের সঙ্গে বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্য! লম্বা সময়ে যে যত বেশি শান্ত থাকতে পারবেন তার সাফল্যের হারও তত বেশি। লিটন-মুশফিক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন বলেই সফলও হয়েছেন। তারা ধ্বংসস্তূপে বসেই বিষাদের ক্যানভাসে এঁকেছেন সাফল্যের ছবি!