শনিবার, ৪ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

সাকিবের চ্যালেঞ্জ সাকিব নিজেই

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাকিবের চ্যালেঞ্জ সাকিব নিজেই

সাদা পোশাক ও লাল বলের দায়িত্ব হঠাৎ পাননি সাকিব আল হাসান। বিসিবির অনেক দিনের পরিকল্পনায়ই ছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার। কিন্তু নিজের কারণে নেতৃত্ব ফিরে পাচ্ছিলেন না। সাদা পোশাকে নিয়মিত টেস্ট খেলতে দেখা যায়নি তাকে। গত দেড় বছরে বাংলাদেশ যে ১৩টি টেস্ট খেলেছে, সাকিব খেলেছেন মাত্র ৮টি। কুলীন ক্রিকেটে এমন অনিয়মিত বলেই নেতৃত্ব তুলে দিতে পারছিল না বিসিবি। অবশ্য মুমিনুল হকের ছন্দহীন ক্রিকেটে সুযোগ তৈরি হয়। সাকিবও নিয়মিত টেস্ট খেলার কমিটমেন্ট করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের কাছে। দুইয়ে-দুইয়ে চার হওয়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে নেতৃত্ব ভার তুলে দেওয়া হয় সাকিবের হাতে। এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো টেস্ট অধিনায়ক হলেন দেশসেরা ক্রিকেটার। দায়িত্ব নিয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন এর আগে ১৪ টেস্টের অধিনায়ক সাকিব। প্রথম চ্যালেঞ্জ, দলকে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে ছন্দে ফেরানো। দ্বিতীয়টি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। এ চ্যালেঞ্জ নিজের কমিটমেন্টের সঙ্গে। পারফরম্যান্স কিংবা দল গোছানো নয়, চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অবসরে যাওয়ার আগে নিয়মিত টেস্ট খেলা। বিসিবি সভাপতি অবশ্য মিডিয়াকে আশ্বস্ত করেছেন, ‘আমার সঙ্গে সাকিবের কথা হয়েছে, সে অবশ্যই খেলবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পর জিম্বাবুয়ে সিরিজে সে শুধু নিশ্চিত নয়। এরপর

সব সংস্করণেই সে খেলবে। টেস্ট সে অবশ্যই খেলবে। আমাদের শর্তই ছিল টেস্ট খেলতে হবে।’  অধিনায়ক হওয়ার পর সাকিব টেস্ট সিরিজ খেলেননি, এমন রেকর্ডস রয়েছে। ২০১৮ সালে মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকে দ্বিতীয়বার দায়িত্ব পাওয়ার পর মাত্র তিনটি সিরিজে নেতৃত্ব দেন। ২০১৮ সালে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সিরিজ হারের পরের সিরিজে খেলেননি। জিম্বাবুয়ে সিরিজে নেতৃত্ব দেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এরপর ঘরের মাটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ী সিরিজে ফের নেতৃত্ব দেন সাকিব। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজে খেলেননি। ২০১৯ সালের ঘরের মাটিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার পর অধিনায়কত্ব হারান বাজিকরদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য। এরপরই দায়িত্ব পান মুমিনুল হক। ১৭ টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়ার পর ছন্দ হারিয়ে নেতৃত্ব হারান দেশের একমাত্র স্পেশালিস্ট টেস্ট ব্যাটার মুমিনুল। তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব নেন সাকিব। সাকিবের অধিনায়ক হওয়া প্রসঙ্গে স্পিন অলরাউন্ডার মিরাজ বলেন, ‘সাকিব ভাই যেখানে আছেন, সেখানে কীভাবে কী! সাকিব ভাই বাংলাদেশকে অনেক দিন নেতৃত্ব দিয়েছেন। অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। বর্তমানে আমাদের দলের যে পজিশন, তাতে আমি মনে করি সাকিব ভাই সেরা।’

সাকিবও টেস্ট নেতৃত্ব পান হঠাৎ। ২০০৯ সালে মাশরাফি বিন মর্তুজার সহকারী হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যান। কিংস্টনে প্রথম টেস্টে টস করেন মাশরাফি। ব্যাটিং করেন প্রথম ইনিংসে। কিন্তু বোলিংয়ের সময় আহত হলে আর মাঠে থাকতে পারেননি মাশরাফি। দল পরিচালনা করেন সাকিব। ৯৫ রানে জিতেছিল টাইগাররা। সেন্ট জর্জেসে দ্বিতীয় টেস্টে অধিনায়ক সাকিবের অভিষেক। ৪ উইকেটে জয়ী ওই ম্যাচের সেরা ছিলেন সাকিব। বোলিংয়ে দুই ইনিংসে ৮ উইকেট (৩/৫৯, ৫/৭০) এবং ব্যাটিংয়ে ১৬ ও অপরাজিত ৯৬ রান করেছিলেন। অধিনায়কত্বের দুবারে সাকিব সিরিজ খেলেন ৯টি। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৯-১০ মৌসুমে ভারত, নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড, ২০১০ সালে ইংল্যান্ড এবং ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ খেলেন। প্রথমবার তার অধিনায়কত্বে বাংলাদেশ ৬ সিরিজে ৯ টেস্ট খেলে একটিতে জয় পায় এবং বাকি ৮টিতেই হেরে যায়।

২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার অধিনায়ক হওয়ার পর তিনি দল পরিচালনা করেন তিন সিরিজে। ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০১৮-১৯ মৌসুমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং ২০১৯ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলে বাংলাদেশ। ৫ টেস্টে জয় পায় ২টি এবং হার ৩টিতে। সব মিলিয়ে সাকিবের অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান ১৪ টেস্ট, জয় ৩ এবং হার ১১।

সর্বশেষ খবর