সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

নেইমার ছাড়াও ভয়ংকর ব্রাজিল

নেইমার ছাড়াও ভয়ংকর ব্রাজিল

শেষবার বিশ্বকাপ ট্রফি জয়ের পর টানা চারবার ফাইনাল খেলা হয়নি পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের। ২০০২ সালে রোনালদো-রিভালদো-রোনালদিনহোরা সাম্বার ছন্দ দেখিয়েছিলেন ফুটবল মাঠে। ফুটবল যে একটি ‘বিউটিফুল গেম’ তার যথার্থ প্রমাণ দিয়েছিলেন তারা। সে সময় জোগো বোনিতোর জয়গান শুনছিল পুরো ফুটবল দুনিয়া। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। দুই দশক। এই সময়ের মধ্যে বিশ্ব দেখেছে চারটা বিশ্বকাপ। গত চারটা আসরে ব্রাজিলের সেরা ফল ছিল সেমিফাইনাল খেলা। ২০১৪ সালে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে বিধ্বস্ত হয়েছিল ব্রাজিল (৭-১)। তবে ধ্বংসস্তূপ থেকেই যেন নতুন করে জেগে উঠল ব্রাজিল। পুরনো ক্ষত তারা শুকিয়ে নিয়েছে অনেক আগেই। এবার জোগো বোনিতোর নতুন গল্প লিখতে শুরু করেছে।

আট বছর আগে নিজের দেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলা হয়নি ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমারের। সেবার কোয়ার্টার ফাইনালের লড়াইয়ে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার জুনিগার এক ভয়ংকর আঘাতে কাতরে ওঠেন নেইমার। সঙ্গে সঙ্গেই মাঠ ছাড়তে হয় তাকে। এরপর আর সেমিফাইনালটা খেলা হয়নি। নিজেদের ফুটবল ইতিহাসের ভয়ংকর একটা দিন দেখেছিল ব্রাজিলিয়ানরা। নেইমারহীন ব্রাজিল দাঁড়াতেই পারেনি জার্মানির সামনে। সেই ভয়ংকর দুর্ঘটনার কথা ভাবলেই জুনিগার জন্য অভিশাপ বেরিয়ে আসে নিশ্চয়ই ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের হৃদয়ের গভীর থেকে! কাতারে বিশ্বকাপের শুরুটা দল হিসেবে দারুণ করেছে ব্রাজিল। সার্বিয়ার বিপক্ষে রিচার্লিসনের ডাবলে জয় পেয়েছে ২-০ গোলে। নেইমার উপহার দিয়েছেন ব্রাজিলের চিরায়ত শৈল্পিক ফুটবল। যেখানে গতি ছিল, কারুকাজ ছিল, শিল্প ছিল। কিন্তু সার্বিয়ার নিকোলা মিলেনকোভিচের এক ভয়ংকর ট্যাকলে গোড়ালিতে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়তে হয় নেইমারকে। এরপরের খবরটা ভয়ংকর। নেইমার ফুলে যাওয়া পায়ের ছবি পোস্ট করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভয়ংকর এই ছবিটা দেখে ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের মন খারাপ হয়েছে। তারা নেইমারের দ্রুত সুস্থতা চেয়ে প্রার্থনা করছেন। কিন্তু হতাশ হননি। কারণ? এই ব্রাজিল, ২০১৪ সালের ব্রাজিল নয়। এই ব্রাজিল, নেইমারনির্ভর ব্রাজিল নয়।

সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নেইমার নিঃসন্দেহে দারুণ ফুটবল খেলেছেন। বিশ্বসেরা তারকাদের একজন হিসেবে নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেছেন। কিন্তু তার আলোর ঝলকানিতে ঢাকা পড়েননি রিচার্লিসন, রাফিনহা, ভিনিসাস, রডরিগোরা। প্রত্যেকেরই আছে দুরন্ত গতি, ফুটবল নিয়ে কারুকাজ দেখানোর ক্ষমতা। ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে খেলতে নামার জন্য উপযুক্ত ফুটবলার তারা। এ কারণেই নেইমার না থাকলেও ব্রাজিলিয়ানদের ভয় নেই। আজ ৯৭৪ নামের স্টেডিয়ামে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে সিলেকাওরা খেলতে নামবে একই লক্ষ্য, একই স্বপ্ন নিয়ে। বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন।

গতকাল আহমেদ বিন আলি স্টেডিয়ামে দেখা হলো এক ব্রাজিলিয়ান সমর্থকের সঙ্গে। তিনি ব্রাজিলিয়ানদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ারের সংখ্যা অনেক। জাপান-কোস্টারিকা ম্যাচ দেখতে দেখতে ভিক্টর নামের এই সমর্থক বললেন, ‘নেইমার না থাকলেও আমরাই জিতব। কারণ, আমাদের দলটা অনেক ভালো।’ এমনকি সম্ভাব্য ফলটাও বলে দিয়েছেন তিনি। ১-০ গোলে ব্রাজিলের জয়। এর চেয়ে বেশি ব্যবধানে নয় কেন? ভিক্টর বললেন, ‘সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে এরচেয়ে বেশি গোল কঠিন।’ সুইজারল্যান্ড ভালো দল। তবে ব্রাজিল এবার নিজেদের ছাড়া আর কারও কথাই ভাবছে না। নেইমারকে ছাড়াও তাই তারা ছুটে চলবে নিজেদের কাক্সিক্ষত লক্ষ্য সামনে রেখে। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মারকুইনিয়ো একই কথা বলে গেলেন। ব্রাজিলের কোচ তিতেও বললেন, নেইমার নিঃসন্দেহে খুবই উঁচু মাপের ফুটবলার। তবে আমাদের আরও অনেক ভালোমানের ফুটবলার আছে।

তাছাড়া ভাবনা কীসের! নেইমার তো গ্রুপ পর্বের পরেই যোগ দিচ্ছেন ব্রাজিল দলে। কঠিন সেই লড়াইগুলোতে নেইমারকে পাশেই পাচ্ছেন ভিনিসাস-রাফিনহা-রিচার্লিসনরা। আজ জিতে গ্রুপ পর্বের বাঁধাটা পাড়ি দেওয়াই এখন ব্রাজিলের মূল কাজ।

সর্বশেষ খবর