রবিবার, ২১ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

রেকর্ডের ছড়াছড়ি কিংসে

মনোয়ার হক

রেকর্ডের ছড়াছড়ি কিংসে

ঘরোয়া ফুটবলে সব হিসাব বদলে দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। ১৯৪৮ সালে প্রথম বিভাগ লিগের যাত্রা। অথচ অভিষেকের পাঁচ বছরের মধ্যে কিংস যে রেকর্ড বা ইতিহাস গড়েছে তা অন্য ক্লাবের পক্ষে সম্ভব হয়নি। কিংস এমন এক ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে, যা বাংলাদেশ তো বটেই, ৭৫ বছরের ইতিহাসে কেউ গড়তে পারেনি। চলতি পেশাদার লিগে চার ম্যাচ বাকি রয়েছে। এখন এক ম্যাচ জিতলেই টানা চতুর্থ বারের মতো পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে। ২৬ মে জিকো, রবসনরা হোম ভেন্যু কিংস অ্যারিনায় শিরোপার উৎসবে মেতে উঠতে পারেন। পাকিস্তান আমলে ওয়ান্ডারার্সের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড রয়েছে। এটিই লিগে প্রথম হ্যাটট্রিক শিরোপা। ১৯৮৩, ’৮৪ ও ’৮৫ সালে বাংলাদেশে প্রথম হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয় ঢাকা আবাহনী। এরপর ঢাকা মোহামেডানের ১৯৮৬, ’৮৭, ’৮৮-৮৯ মৌসুমে অপরাজিত হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়নের রেকর্ড রয়েছে। পেশাদার লিগ শুরুর পরও হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ঢাকা আবাহনী।

তিন দলের কৃতিত্ব পেছনে ফেলে দিয়েছে বসুন্ধরা কিংস। অভিষেক হওয়ার পরই তারা হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঘরোয়া ফুটবলে এ এক অনন্য ইতিহাস। ওয়ান্ডারার্স, আবাহনী ও মোহামেডান টানা তিন শিরোপা জিতেছে অভিষেকের অনেক পরে।

কোনো দলই এমন বর্ণাঢ্যভাবে লিগ শুরু করতে পারেনি। কিংসের আগমনের পর পেশাদার ফুটবলে নতুন প্রাণের সঞ্চার হয়েছে। আগে ঢাকা ও চট্টগ্রামে লিগ সীমাবদ্ধ থাকলেও, আবির্ভাবের পরই বসুন্ধরা গ্রুপের নিজস্ব খরচায় নীলফামারীতে বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যু তৈরি করেছে। বাফুফে এখন বিভিন্ন জেলায় লিগ আয়োজন করছে। বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নিজ ভেন্যু হওয়ায় ঘরোয়া ফুটবলে হারানো জৌলুস ফিরিয়ে এনেছে কিংস। দর্শক যেখানে হাতে গোনা যেত, সেখানে কিংস অ্যারিনায় প্রতিটি ম্যাচে দর্শক উপচে পড়ছে। বসুন্ধরা ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণ এখনো সম্পন্ন হয়নি, সেখানে বিদেশিরা এসে তা দেখে প্রশংসা করছেন। কোনো ক্লাবের নিজস্ব ভেন্যু- এটাও আরেক ইতিহাস।

টানা চতুর্থ শিরোপা হাতছানি দিচ্ছে কিংসের। অথচ এর মধ্যে পাঁচ বছরে আট রেকর্ড গড়ে বসুন্ধরা কিংস সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। ৭৫ বছরের ইতিহাসে কিংসই প্রথম দল যারা অভিষেকেই লিগ ও স্বাধীনতা কাপ দুই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। হোম ভেন্যুর কথা আগেই বলা হয়েছে। নতুন দল হিসাবে  আত্মপ্রকাশের পরই টানা তিন লিগ জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাদের। লিগ ছাড়াও ফেডারেশন কাপ ও স্বাধীনতা কাপে দুবার করে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ঘরোয়া ফুটবলে অনেক দলই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ড গড়েছে কিংসই। তারা শুরু থেকে লিগের প্রথম পর্বের শীর্ষে রয়েছে। ওয়ান্ডারার্স, আবাহনী ও মোহামেডান হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হলেও এক কোচের অধীনে হয়নি। কিংসই তা পেরেছে।

স্পেনের কোচ অস্কার ব্রুজোন শুরু থেকেই দায়িত্ব পেয়ে দলকে উপহার দিয়েছেন সাত শিরোপা। আবাহনী ও মোহামেডান এশিয়ান ক্লাব কাপ, পরবর্তীতে এএফসি কাপ খেললেও বসুন্ধরা সুযোগ পেয়েছে অভিষেকেই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে। অবশ্য করোনাভাইরাসে সে আসর সম্পন্ন হতে পারেনি।

বিদেশি ফুটবলার সংগ্রহেও নজর কেড়েছে কিংস। একসময় সস্তা ও মানহীন খেলোয়াড় দেখা গেলেও বসুন্ধরা আগমনের পরই মানসম্পন্ন বিদেশি এলে লিগের জৌলুস বাড়িয়েছে। এত গেল পুরুষ ফুটবলের কথা। নারী লিগে বসুন্ধরা কিংস যে সাফল্য অর্জন করেছে তা এশিয়ার কোনো ক্লাবই পারেনি। হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন তো আছেই, টানা তিন আসরে কোনো পয়েন্ট হারায়নি তারা। শুধু রেকর্ড বা ইতিহাস গড়া নয়, দেশের ফুটবল উন্নয়নে বসুন্ধরা গ্রুপ বড় ভূমিকা রাখছে। ঘরোয়া ফুটবলে এখন প্রতিটি আসরে পৃষ্ঠপোষকতা করছে তারাই। অর্থাৎ নিজ দলের শুধু সাফল্য নয়, ঘরোয়া ফুটবল জেগে আছে বসুন্ধরা গ্রুপের কল্যাণে; যা ক্রীড়াঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। রেকর্ডের চূড়ায় বসে আছে কিংস। এরপর টানা চতুর্থ লিগ জিতলে সাফল্যের পাহাড় আরও উঁচু হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর