বৃহস্পতিবার, ১ জুন, ২০২৩ ০০:০০ টা

সামনে এগোনোর পালা মোহামেডানের

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সামনে এগোনোর পালা মোহামেডানের

মোহামেডান, আবাহনী, ব্রাদার্স ইউনিয়ন বা বিজেএমসি শক্তির দিক দিয়ে কেউ কারও চেয়ে কম ছিল না। মাঠে লড়াই হতো হাড্ডাহাড্ডি। লিগ বা অন্য টুর্নামেন্ট ঘিরে উত্তেজনার শেষ ছিল না। সেই উত্তাপ কোথায় যেন হারিয়ে গেল। পেশাদার লিগের আবির্ভাবের পর বসুন্ধরা কিংসই ঘরোয়া ফুটবলকে জাগিয়ে রেখেছে। প্রাণ দিয়েছে। একের পর এক শিরোপা জিতে ইতিহাসও গড়েছে। ঢাকা আবাহনী টানা চারবার লিগ শিরোপা থেকে বঞ্চিত হলেও তারা ঘরোয়া ফুটবলে ভূমিকা রাখছে। সত্তর, আশি বা নব্বইয়ের দশকের মতো লিগ জমিয়ে তুলতে দরকার আরও শক্তিশালী দল। শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র ও শেখ জামাল ধানমন্ডি সেই মানের দলও গড়ছে। তবে এখন দুই প্রধান দল বলতে বসুন্ধরা ও আবাহনীকে বোঝায়। এখন দুই দলের লড়াই ঘিরে যে উত্তেজনা তৈরি হয়, অন্যদের বেলায় তা হয় না।

অনেকেই বলেন, ঘরোয়া ফুটবলে আগের সেই উত্তাপ ফিরে আসবে যদি মোহামেডান তাদের চেনা রূপে ফিরে আসে। অবাক হলেও সত্যি, ২১ বছর ধরে তারা লিগে শিরোপাহীন। যে দলের দেশভরা সমর্থক তাদের যদি করুণ দশা হয়, ফুটবলে আকর্ষণ থাকবে কোথায়। অনেকেই বলতেন মোহামেডান যেন ওয়ান্ডারার্সের মতো হারিয়ে না যায়। না, মোহামেডান পেশাদার লিগ খেলছে ঠিকই, তবে কঙ্কালরূপে।

যাক, অনেক দিন পর মোহামেডান শিরোপা জিতেছে। তাও আবার ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে। কুমিল্লায় ফেডারেশন কাপে যে উত্তেজনাকর ফাইনাল হয়েছে, তা অতীতের সব আসরকে হার মানিয়েছে। মোহামেডান নামের সঙ্গে আবেগ যে কতটা জড়িয়ে আছে তা এক শিরোপায়ই প্রমাণ মিলেছে। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর দেশের ফুটবল যেন জেগে উঠেছে। অনেক দিন পর সাদা-কালোর সমর্থকরা বিজয়ের হাসি হেসেছেন। কথা হচ্ছে, এ শিরোপা কি মোহামেডানের হারানো রূপ ফিরিয়ে আনবে? নাকি এটাই শেষ? তারপর আবার দীর্ঘ অপেক্ষা। সত্যি বলতে কি, আবাহনীর সাপোর্টার অনেকেই চেয়েছিলেন মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হোক। ফুটবল জাগরণে তাদের একটা শিরোপা খুবই দরকার ছিল। জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার কায়সার হামিদ বলেন, ‘আমি সত্যিই আনন্দিত আমার প্রিয় মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায়। আশা করব এ শিরোপা মোহামেডানকে তাদের হারিয়ে যাওয়া গৌরব ফিরিয়ে আনতে প্রেরণা জোগাবে।’ সাবেক তারকা ফুটবলার শেখ মো. আসলাম বলেন, ‘আবাহনী ও মোহামেডান ম্যাচের তুলনাই হয় না, তা কুমিল্লায়ই প্রমাণ পেলাম। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আমি খুশি। ওরা দীর্ঘদিন ধরে শিরোপা পাচ্ছিল না। আমার বিশ্বাস, মোহামেডানের টিম ম্যানেজমেন্ট শক্তিশালী ফুটবল দল গড়ার পেছনে মনোযোগী হবে। মোহামেডান-আবাহনীর এমন উত্তেজনাকর ম্যাচ হলে ঘরোয়া ফুটবল জেগে উঠবেই।’

 

শিরোপার ৫ রহস্য

১. আলফাজ আহমেদ ভারপ্রাপ্ত কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পরই মোহামেডান বদলে যায়। ফেডারেশন কাপে দারুণ পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে। তাঁর যোগ্য প্রশিক্ষণে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপে মোহামেডান  চ্যাম্পিয়ন।

২. মালির ফুটবলার সুলেমান দিয়াবাতে। ফেডারেশন কাপ আসরে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেন। ফাইনালে তিনি অনেকটা একাই মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন করান। আবাহনীর বিপক্ষে হ্যাটট্রিকসহ করেন

৪ গোল।

৩. সেমিফাইনালে বসুন্ধরা কিংসকে হারানোর পর উজ্জ্বীবিত হয়ে ওঠে মোহামেডান। যা ফাইনালে ভালো খেলতে অনুপ্রেরণা জোগায়। পিছিয়ে থেকেও ম্যাচের সমতা ফিরিয়ে আবাহনীকে হারায়।

৪. মোহামেডানের সুবিধাটা ছিল দলের অনেকেই তরুণ, যা মাঠে গতি নিয়ে খেলতে সহায়তা করেছে। ফাইনালে আবাহনী অতিরিক্ত সময় দমে গেলেও মোহামেডানের তরুণরা ভালো খেলে শিরোপা উপহার দিয়েছেন।

৫. অনেকদিন পর মোহামেডান দলে সমন্বয় দেখা মিলল। শিরোপা জিততে সবাই ছিল মরিয়া। ফাইনালে আবাহনীর বিরুদ্ধে অসাধারণ খেলে হারানো গৌরব ফিরে পেয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর