ঘরোয়া ফুটবলে শৃঙ্খলার জন্য ডিসিপ্লিনারি কমিটি রয়েছে। যদি কোনো ক্লাব, খেলোয়াড় বা কর্মকর্তা শৃঙ্খলা ভাঙেন তাহলে এ কমিটি জরুরি সভা ডেকে শাস্তির পাশাপাশি বড় অঙ্কের জরিমানা করে থাকে। ডিসিপ্লিনারি কমিটির আওতায় শাস্তি বা জরিমানার সংখ্যা একেবারে কম নয়। সবশেষ গোপালগঞ্জ ক্লাবকে শাস্তি ও জরিমানা করেছে কমিটি। ডিসিপ্লিন ভাঙার কারণে ডিসিপ্লিনারি কমিটি শাস্তি দেয় মূলত বাফুফের সুপারিশে। প্রশ্ন হচ্ছে, দেশের ফুটবলে অভিভাবক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)-এর কার্যক্রম কি নিয়ম মেনেই চলছে? তারা কি কখনো শৃঙ্খলা ভাঙার মতো অপরাধ করেনি?
ফুটবলের বাইলজ তো বাফুফেই তৈরি করে। বাইলজ অনেকটা সংবিধানের মতো। যা প্রতিটি ক্লাব, খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা মানতে বাধ্য। না মানলে শাস্তি পেতেই হবে। এখন নিজেদের গড়া বাইলজ বাফুফে মানছে কি না, এটা কি ডিসিপ্লিনারি কমিটি খতিয়ে দেখতে পারে?
গেল পেশাদার লিগে বাইলজে ছিল লিগে সর্বনিম্ন পয়েন্ট পাওয়া দুটি ক্লাব রেলিগেটেড অর্থাৎ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে নেমে যাবে। আবার চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষ দুই ক্লাব প্রিমিয়ার লিগে উঠবে। পেশাদার লিগ পরিচালনায় বাফুফের সাব কমিটি রয়েছে। এ কমিটিই সব চূড়ান্ত করবে। অথচ এখানেও অযথা হস্তক্ষেপ করে বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত এলো-দুটি নয়, একটি ক্লাব রেলিগেটেড হবে। যদি এমন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন পড়ে তা তো আগে লিগ কমিটির সভায় হবে। তারা যুক্তিসংগত কারণ দেখিয়ে বাফুফেকে চিঠি দেবে। এরপর তা গ্রহণযাগ্য কি না নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত এমনকি ভোটাভুটি হবে। সালাউদ্দিন করলেন কি, লিগ কমিটিকে উপেক্ষা করে তড়িঘড়ি নির্বাহী কমিটির সভা ডেকে সিদ্ধান্ত দিলেন এবার একটি ক্লাবই নামবে। সরাসরি নির্বাহী কমিটি যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আর লিগ কমিটির প্রয়োজন কি? অথচ বাফুফের সহসভাপতি ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে লিগ কমিটির নতুন কমিটি গঠনের পর লিগ আয়োজন প্রশংসিত হয়। বাফুফেই তা ম্লান করে দিয়েছে। একটি দলকে নামানোর পেছনে বাফুফে সভাপতি তখন যুক্তি দেখিয়েছিলেন, যেহেতু গোপালগঞ্জ পেশাদার লিগে খেলেনি তাই দলের সংখ্যা বাড়াতেই এ সিদ্ধান্ত। তা-ই কি সত্যি? বাইলজ ভাঙার মূল কারণ ছিল সামনের নির্বাচন। যে দলটি রেলিগেটেড শঙ্কায় ছিল তাদের কাউন্সিলর আবার সালাউদ্দিনপন্থিদের। এ কাউন্সিলরের সঙ্গে আবার আরও ভোট জড়িত।
বুধবার আবার সরকারি ছুটির দিনে বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হলো রেলিগেশনে নেমে যাওয়া ব্রাদার্স ইউনিয়নকেও আসন্ন প্রিমিয়ার লিগে খেলার অনুমতি দেওয়ার। এ নির্লজ্জ বাইলজ ভাঙার বড় কারণও নির্বাচন। আগামী ২৬ অক্টোবর বাফুফে নির্বাচন করতে চায়। কাজী সালাউদ্দিন এর জন্য ফিফার অনুমতি চাইবেন। ফিফা অনুমতি দিক বা না দিক বাফুফে নির্বাচন করবে এটা নিশ্চিত। আর গদি ধরে রাখতে বাইলজ কেন, সালাউদ্দিনের নেতৃত্ব দেওয়া কমিটি এখন যা খুশি করতে পারে। নীতিনির্ধারকরা যখন নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তখন দেশের ফুটবল উন্নয়নের আশা করাটা কি ঠিক হবে? রেলিগেশন ঘিরে বাইলজ ভাঙার অপরাধে কোনো ক্লাব যদি ফিফার দ্বারস্থ হয় তখন দেশের ফুটবলে কী ঘটবে সেটাই দেখার।