গেল অক্টোবরে এই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরির সঙ্গে হ্যাটট্রিক করেছিলেন সোহাগ গাজী। ১৩৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে গাজীর আগে এই বিরল কৃতিত্ব দেখাননি আর কোনো ক্রিকেটার। টাইগার ক্রিকেটারের এমন কীর্তিতে বিস্মিত হয়েছিল ক্রিকেট বিশ্ব। সেই গাজীকে কাল বসে থাকতে হলো সাইড লাইনে। অভিষেকের পর থেকে স্পিনিং অলরাউন্ডার গাজী টেস্ট, ওয়ানডে এবং টি-২০ তিন ফরম্যাটেই ছিলেন দলের 'অটোমেটিক চয়েজ'। টেস্ট সিরিজে পুরোপুরি ব্যর্থ গাজী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টি-২০ ম্যাচে ছায়া হয়েই ছিলেন। তার জায়গায় অভিষেক হয় আরেক অলরাউন্ডার সাবি্বর রহমান রুম্মনের। প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয়েছিল দুই ক্রিকেটারের। কাল হলো একজনের। এই ঘুরিয়ে খেলানোর মূল উদ্দেশ্য নির্বাচক প্যানেলের একটাই_ আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াড চূড়ান্ত করা। কেননা স্কোয়াডের নাম আজই পাঠাতে হবে আইসিসির কাছে।
এখন পর্যন্ত ৩৩টি টি-২০ ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ছাড়া আর কোনো ম্যাচেই এত তরুণ ক্রিকেটারকে এক সঙ্গে দেখা যায়নি খেলতে। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে দুই ম্যাচের সিরিজে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে ক্রিকেটার খেলানোর ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ বলেন, 'টি-২০ বিশ্বকাপের স্কোয়াড চূড়ান্ত করতেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে সবাইকে। এদের মধ্য থেকেই বেঁছে নেওয়া হবে সেরা ক্রিকেটারদের।'
নির্বাচকদের এমন পরিকল্পনায় বাদ পড়তে পারেন অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার। আবার সবাইকে চমকে দলে জায়গা করে নিতে পারেন একাধিক তরুণ ক্রিকেটার। এর মধ্যে অন্যতম বাঁ-হাতি স্পিনার আরাফাত সানী। অভিষেক ম্যাচে দ্যুতি ছড়ানো বোলিং করেন আরাফাত। তিন ওভারে ১৭ রান খরচে তুলে নেন ২ উইকেট। এ ছাড়া থাকতে পারেন সাবি্বর রহমানও। ২০১০ সালে গুয়াংজু এশিয়াডে আফগানিস্তানের সঙ্গে ফাইনালে বাংলাদেশের স্বর্ণ জেতার পেছনে অবদান রেখেছিলেন অনেক। ছক্কা মেরেছিলেন দুটি। ওই দুই ছক্কাই এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিল যে কোনো ইভেন্টের প্রথম স্বর্ণ। কাল দলের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝেও নিজেকে মেলে ধরার অক্লান্ত চেষ্টা ছিল এই তরুণের। খেলেছেন ২৬ রানের ইনিংস। সাবি্বর রহমান স্কোয়াডে জায়গা পেলে দর্শক হতে পারেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও মুমিনুল হক সৌরভের যে কোনো একজন। অবশ্য ঝরে পড়ার সম্ভাবনা থাকছে গাজীরও । কেননা মুমিনুল ও মাহমুদুল্লাহ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে গাজী থেকে। দুজনই দলের প্রয়োজনে আবার বোলিং করতে পারেন।
দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে খেলতে না পারলেও বিশ্বকাপ খেলবেন নিয়মিত অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। নেতৃত্বও দিবেন দলকে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। যদিও চলতি সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন মাশরাফি। চূড়ান্ত স্কোয়াড গঠন করতে ওপেনিং জুটি নিয়ে বেশ সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নির্বাচক প্যানেলের। তামিম ইকবালের সঙ্গী হিসেবে শামসুর রহমান শুভ, এনামুল হক বিজয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে আছেন মো. মিঠুন আলীও। অবশ্য মিঠুনের বাদ পড়ার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। বোলিংয়ে পেস বিভাগ নিয়ে জটিল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে নির্বাচকদের। চার পেসার রয়েছেন পাইপ লাইনে। মাশরাফি, রুবেল হোসেন, আল-আমিন ও রবিউল ইসলাম শিবলু। এক্ষেত্রে দুই পেসার বাদ পড়তে পারেন, যদি ফরহাদ রেজাকে নেওয়া হয় স্কোয়াডে। ফরহাদ একজন পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার। পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ভালো ব্যাটিংও করেন তিনি। স্কোয়াডে দুই বাঁ-হাতি স্পিনার সাকিব আল হাসান, আরাফাত সানীর পাশাপাশি অপশনাল স্পিনার হিসেবে মাহমুদুল্লাহ, মুমিনুল বোলিং করতে পারেন।
একাধিক নতুন মুখ থাকার সম্ভাবনা বেশি চূড়ান্ত স্কোয়াডে। সেখানে শ্রীলঙ্কা সিরিজের অধিকাংশ ক্রিকেটারই থাকছেন কোনো সন্দেহ নেই।