ফুটবলে ফাইনাল মানেই শিরোপার লড়াই। এক দল বিজয়-উল্লাস করবে, আরেক দল ট্রফি না জেতার বেদনায় মাঠ ত্যাগ করবে। বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা আজ বিজয়-উল্লাস করতে চায়। খেলা হবে কলকাতায়, তারপরও উত্তেজনার শেষ থাকবে না। বিশ্ব ফুটবলে অন্যতম প্রাচীন ক্লাব টুর্নামেন্ট আইএফএ শিল্ডে ঐতিহ্যবাহী কলকাতা মোহামেডানের বিপক্ষে মুখোমুখি হচ্ছে ঢাকার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় যুব ভারতীয় সল্টলেক স্টেডিয়ামে বহু প্রতীক্ষিত ফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে। স্যাটেলাইট চ্যানেল জলসা মুভিতে সরাসরি সম্প্রচার হবে পুরো ম্যাচটি। ১৮১১ সাল থেকে আইএফএ শিল্ডের যাত্রা হলেও এ নিয়ে বাংলাদেশের কোনো ক্লাব দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনাল খেলছে। ১৯৯৫ সালে ঢাকা মোহামেডান ফাইনালে উঠলেও ৮৭ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকে টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যায়। অর্থাৎ আজ শেখ জামাল জিতলেই বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জিতবে। বর্তমান ফুটবলে এ টুর্নামেন্টের তেমন গুরুত্ব নেই। কিন্তু বাংলাদেশের রুগ্ন ফুটবলকে জাগিয়ে তুলতে এ ট্রফি জেতা জরুরি হয়ে পড়েছে। তাই এবারে আইএফএ শিল্ডের গুরুত্ব বাংলাদেশ-ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অন্যরকম।
পুরো দেশের টার্গেট শিরোপা। শেখ জামাল কি পারবে প্রত্যাশা পূরণ করতে। কলকাতা মোহামেডান টুর্নামেন্টে একমাত্র দল যারা অপরাজিত হয়েই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। গ্রুপ পর্ব লড়াইয়ে তারা শেখ জামালকে পরাজিত করে। কিন্তু তাতে কি, এ নিয়ে ততটা শঙ্কা থাকার কথা নয়। মোহামেডানের কাছে হারার পরই মামুনুলরা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। সিকিম একাদশ ছাড়াও মোহনবাগানকে হারিয়ে শেষ চারে খেলা নিশ্চিত করে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ফলাফল ছিল সেমিফাইনালে ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০ গোলের বিধ্বস্ত করে। বাংলাদেশের কোনো দলের এমনিতেই ভারতের প্রখ্যাত দুই দলকে হারানোর তেমন রেকর্ড নেই। সেই টানা দুই ম্যাচে শেখ জামালের জয় স্মরণীয় হয়ে আছে। বিশেষ করে ইস্টবেঙ্গলকে কলকাতার মাঠে যেভাবে উড়িয়ে দিয়েছে তাতেই অনেকে শিরোপা জেতার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। কলকাতা মোহামেডানের কোচ তার শিষ্যদের অনুশীলনে হুঁশিয়ারি করে দিয়েছেন সবাইকে সেরা পারফরম্যান্স শো করতে হবে। তা না হলে শেখ জামালকে কোনোভাবেই হারানো যাবে না। তিনি শুধু সনিনর্দে না, প্রতিপক্ষের প্রতিটি খেলোয়াড়কে ডেঞ্জারাস মনে করছেন। তিনি বলেন, সনি সুযোগ কাজে লাগিয়ে গোল করেন। কিন্তু দলের মূল চালিকাশক্তি হচ্ছেন অধিনায়ক মামুনুল। শেখ জামালকে হারাতে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছেন কলকাতা মোহামেডানের কোচ। বার বার সতর্ক করে দিয়েছেন একটু বেসামাল হলেই পরিণতি শোচনীয় হতে পারে।
প্রতিপক্ষরা শেখ জামালকে গুরুত্ব দিলেও অধিনায়ক মামুনুল বলেছেন, ফাইনাল মানেই টেনশনের লড়াই। এখানে কে জিতবে বা হারবে বলা মুশকিল। তিনি বলেন, মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পর আমাদের টিম স্পিরিট রয়েছে। কিন্তু শিরোপা জিততে হলে সেরা খেলাটাই খেলতে হবে। মোহামেডানের আক্রমণভাগ সত্যিই শক্তিশালী। সুতরাং শুধু আক্রমণ নয়, তা সামাল দিতেও প্রস্তুত হয়ে মাঠে নামতে হবে। সভাপতি মনজুর কাদেরকে শেখ জামালের শক্তির টনিক বলা যায়। দলের অনেক খেলোয়াড়ই স্বীকার করেছেন, কাদের ভাইয়ের পরিশ্রমের কারণে আমরা ভালো খেলতে উৎসাহ পাচ্ছি। যে কোনো সমস্যা তিনি সুন্দরভাবে সমাধান করতে পারেন। কোনো ক্লাবের সভাপতির এতটা আন্তরিকতা চোখে পড়েনি। ভিসা জটিলতার কারণে একসময় খেলোয়াড়রা টুর্নামেন্টে যেতে চাচ্ছিলেন না। কাদেরই খেলোয়াড়দের বলেন, তোমরা খেলতে যাও দেখবে শেখ জামাল সাড়া জাগাবে। শেষ পর্যন্ত তা-ই হচ্ছে। ভালো খেলা নয়, আইএফএ শিল্ডে প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়েই শেখ জামাল ভারত কাঁপাচ্ছে। এখন শুধু অপেক্ষা ইতিহাস গড়ার। ভারত থেকে এর আগে ঢাকা মোহামেডান আশিষ জব্বার স্মৃতি, এয়ার ইন্ডিয়া, আবাহনী চার্মস, নাগজি, মুক্তিযোদ্ধা ম্যাগডোনার্স কাপ জিতলেও ঐতিহাসিক আইএফএ শিল্ডে মোহামেডান একবার রানার্সআপ হয়েছে। বর্তমানে দেশের ফুটবলে যে দুর্দিন চলছে তাতে আইএফএ শিল্ড জেতাটাই বড় প্রাপ্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। দেখা যাক, কলকাতা কাঁপিয়ে শেখ জামাল দেশের ফুটবরে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে পারে কিনা। ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে এসেও যদি শিরোপা ফসকে যায় এর চেয়ে বড় ট্র্যাজেডি আর কী হতে পারে। দেশের ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা, এবার '৯৫-এর পুনরাবৃত্তি হবে না শিরোপা নিয়েই দেশে ফিরবেন মামুনুলরা।